চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাটে সিডিএ’র নির্মিত ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসে হতাহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত।

আদালত মামলার অভিযোগপত্রের উপর রাষ্ট্রপক্ষের নারাজি ও পুনঃতদন্তের আবেদনও খারিজ করে দিয়েছেন। ১৬ জুলাই থেকে এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুরও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ এসএম মজিবুর রহমান বুধবার দুপুর ১টার দিকে এই আদেশ দেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও মহানগর পিপি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী আদেশের বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ফ্লাইওভার ট্র্যাজেডির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পুলিশের অভিযোগপত্র অসম্পূর্ণ মনে হওয়ায় তাতে নারাজি দিয়েছিলেন তিনি। বুধবার শুনানি শেষে আদালত সেই আবেদন খারিজ করে পুলিশের অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে ৮ জনের বিরুদ্ধেই অভিযোগ গঠন করেছেন।

অভিযুক্তরা হলেন- ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মীর আক্তার অ্যান্ড পারিশা ট্রেড সিস্টেমস’র (জেভি) তৎকালীন প্রকল্প ব্যবস্থাপক গিয়াস উদ্দিন, সুপারভিশন ইঞ্জিনিয়ার মনজুরুল ইসলাম, সাইট ইঞ্জিনিয়ার আবদুল জলিল, আমিনুর রহমান, আবদুল হাই, মো. মোশাররফ হোসেন রিয়াজ, কোয়ালিটি কন্ট্রোল ইঞ্জিনিয়ার শাহজাহান আলী ও এজাহারে নাম না থাকা রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। তারা সবাই হাইকোর্ট থেকে জামিনে আছেন।

এ ছাড়াও ১৬ জুলাই থেকে এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখও নির্ধারণ করেছেন বিচারক।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর রাতে নগরীর বহদ্দারহাটে সিডিএ’র নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের ১২ ও ১৩ নম্বর স্পেনের তিনটি গার্ডার ভেঙ্গে পড়ে ১৬ জন নিহত এবং আহত হন অর্ধশতাধিক। ওই ঘটনায় ২৬ নভেম্বর সিডিএ’র তিন কর্মকর্তা, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মীর আক্তার অ্যান্ড পারিশা ট্রেড সিস্টেমস’র (জেভি) ১০ জন এবং বেসরকারি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএআরএম অ্যাসোসিয়েটস অ্যান্ড ডিপিএম’র ১২ জনসহ মোট ২৫ জনকে আসামি করে নগরীর চান্দগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করেন এসআই আবুল কালাম আজাদ।

মামলার তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর চান্দগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এসএম শহীদুল ইসলাম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে এজাহারভুক্ত ২৫ জনের মধ্যে ঘটনার দায় থেকে সিডিএ কর্মকর্তাসহ প্রভাবশালী ১৮ জনকে বাদ দিয়ে এজাহার বহির্ভূত একজনসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, অভিযুক্ত এজাহারভুক্ত আসামি গিয়াস উদ্দিন, মনজুরুল ইসলাম, আবদুল জলিল, আমিনুর রহমান, আবদুল হাই, মো. মোশাররফ হোসেন রিয়াজ, শাহজাহান আলী এবং এজাহার বহির্ভূত রফিকুল ইসলাম মিলে সিডিএ কর্তৃপক্ষ ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের অনুমতি ছাড়াই এবং ওই দিনের অনুমোদিত কর্মপরিকল্পনার বাইরে গিয়ে ২৪ নভেম্বর শনিবার ছুটির দিন সন্ধ্যার পর শ্রমিকদের দিয়ে নির্মাণ কাজ চালাচ্ছিলেন। এ ছাড়া ফ্লাইওভার নির্মাণ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, মানব জীবন বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা আছে জানা সত্ত্বেও সতর্কতা অবলম্বন না করে এবং নিরাপত্তামূলকভাবে গার্ডার নির্মাণের সময় জনসাধারণের চলাচলে কোন ব্যারিকেড না দিয়ে নির্মাণ স্থান অরক্ষিত রেখে এবং আলোর ব্যবস্থা না করে কাজ করছিলেন।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, তদন্তকালে সিডিএ’র তিন কর্মকর্তাসহ ১৮ আসামির বিরুদ্ধে কোন সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। অভিযুক্তরা বিনা অনুমতিতে কাজ করায় তাদের আসামি করা হয়েছে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে, অভিযোগপত্রে সিডিএ কর্মকর্তাসহ প্রভাবশালীদের বাদ দেওয়ায় আপত্তি জানিয়ে ৩ জুন আদালতে পুনরায় এ মামলা তদন্তের আবেদন জানিয়েছিলেন মহানগর পিপি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী। আদালত বুধবার সে আবেদন খারিজ করে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেন।

(দ্য রিপোর্ট/এআইএম/এমএআর/এইচ/জুন ১৮, ২০১৪)