অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : 'শিক্ষকদের শিক্ষক' নামে খ্যাত জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক ১৯৯৯ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাকে চলমান বিশ্বকোষ বলা হয়ে থাকে। অর্থনীতি, রাজনীতি, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সমাজবিজ্ঞান, ইতিহাস, বিজ্ঞান, ধর্ম ও রান্নাসহ নানা বিষয়ে তার অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল। সত্যিকার একজন পণ্ডিত ব্যক্তি বলতে যা বোঝায় তার সকল গুণ বিদ্যমান ছিল তার মধ্যে।
আবদুর রাজ্জাক ১৯১৪ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার পারাগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আব্দুল আলি একজন পুলিস অফিসার ছিলেন। তিনি ঢাকার মুসলিম গভর্নমেন্ট হাই স্কুল থেকে মেট্রিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ১৯৩১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৩৬ সালে প্রথম শ্রেণীতে মাস্টার্স পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক অর্থনীতি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সে বিশ্ববিখ্যাত প্রফেসর হ্যারল্ড লাস্কির অধীনে পিএইচডি করতে যান। তার থিসিসের শিরোনাম ছিলো ‘পলিটিক্যাল পাটি ইন ইন্ডিয়া’। হ্যারল্ড লাস্কি মারা যাওয়ায় তার থিসিস মূল্যায়ন করার মত কেউ নেই এই বিবেচনায় থিসিস জমা না দিয়েই বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তবে অনেকে বলেন পিএইচডির প্রতি বিতৃষ্ণার কারণে তিনি থিসিস জমা দেননি। ১৯৫০ সালে তিনি দেশে ফিরেন। তিনি ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিনিয়র প্রভাষক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। একই বছর সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে মনোনীত করে।১৯৭৩ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডি লিট ডিগ্রি প্রদান করে।
অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক অল্প কিছু প্রবন্ধ ছাড়া কিছুই রচনা করেননি। ১৯৮০ সালে তিনি একটি বক্তৃতা দেন। বক্তৃতাটি তানভীর মোকাম্মেলের অনুবাদে ১৯৮১ সালে বই আকারে প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বক্তৃতাটির শিরোনাম ছিলো ‘বাংলাদেশ : স্টেট অব দ্য নেশন’।
আহমদ ছফা তাকে নিয়ে ‘যদ্যপি আমার গুরু’ নামে একটি বই লিখেছেন। যা বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য সংযোজন। এছাড়া অধ্যাপক সরদার ফজলুল করিম তাঁর সঙ্গে আলাপচারিতার ওপর ভিত্তি করে লিখেছেন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পূর্ববঙ্গীয় সমাজ : অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের আলাপচারিতা’ নামের বই। ড. সলিমুল্লাহ খান কিছুটা সমালোচনামূলকভাবে লিখেছেন 'বাংলাদেশের জাতীয় অবস্থার চালচিত্র' নামের বই।
স্বাধীনতাপূর্ব ও স্বাধীনতাত্তোর বুদ্ধিজীবীদের বড় অংশ সরাসরি তার কাছ থেকে জ্ঞানগত সাহায্য পেয়েছেন। তার শ্রেণিকক্ষের ছাত্র না হয়েও তারা তাকে স্যার বলে সম্বোধন করেন এবং তাদের লেখালেখিতে তা উল্লেখ করেন। ২০১২ সালে বেঙ্গল পাবলিকেশনস থেকে প্রকাশিত স্মারকগ্রন্থে তাদের অনেকে আবদুর রাজ্জাককে নিয়ে লিখেছেন।
(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/এমডি/নভেম্বর ২৮, ২০১৩)