নিজের জন্য কতটা সময়
কিন্তু প্রশংসা কিংবা স্বীকৃতিই কি সব! সন্তান যখন এসি রুমে শুয়ে সিডি প্লেয়ারে হাই ভলিয়ুমে গান বাজিয়ে বাজনার তালে তালে পা দোলাচ্ছে, মা হয়তো তখন তার প্রিয় কোনো খাবারের পদ রাঁধতে গিয়ে ঘেমে-নেয়ে একসা। এ প্রসঙ্গে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের অধ্যাপক ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, আমাদের দেশের অধিকাংশ গৃহিণীই নিজেদের জন্য আলাদা সময়ের কথা ভাবেন না। তারা তাদের সবটুকু সময় স্বামী, সন্তান আর সংসারের জন্য বরাদ্দ রাখেন। এটা ঠিক না। নিজের জন্য কিছুটা সময় নিজেকেই আলাদা করে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে পরিবারের ফ্যামিলির বাকি সদস্যদেরও সহযোগিতা থাকতে হবে। তিনি আরো বলেন, ‘ভালোবাসার প্রমাণ দিতে হবে কাজের মাধ্যমেই। সংসারের গৃহিণীর সব কাজে সাহায্য করতে হবে বাকি সবাইকে। তার আনন্দ, বিনোদন এসবের দিকে নজর দেয়াটাও জরুরি। একে অন্যের প্রতি সহমর্মী হলে সংসার সামলানো খুব বেশি কঠিন হয় না। একজন সহানুভূতিশীল স্বামী হিসেবে অবশ্যই স্ত্রীকে সংসারের কাজে সাহায্য করুন। স্ত্রীর ওপর কাজের বোঝা চাপিয়ে দেবেন না। এক্ষেত্রে স্ত্রীরও দায়িত্ব রয়েছে। যদি স্বামী বিষয়টি না বোঝেন, তবে রাগারাগি না করে তাকে ঠাণ্ডা মাথায় বুঝিয়ে বলতে হবে। এক্ষেত্রে পরিবারের ছেলেমেয়ের ভূমিকাও যোগ করতে পারেন। মায়ের কাজে টুকটাক সাহায্য করতে পারে তারা। এতে কাজের চাপটা বেশ কমে যাবে। শুধু স্ত্রী একাই ভাববেন, তা নয়। পারস্পরিক সম্পর্কের জন্য দুজনেরই সমানভাবে এগিয়ে আসতে হবে, বিশেষ করে স্বামীদের। তারা অনেক সময় মনে করেন, সব দায়িত্ব শুধু স্ত্রীদেরই। বিষয়টি তেমন হওয়া উচিত নয়। কেউ কেউ ভাবেন, দামি উপহার কিংবা কেনাকাটার টাকা দিয়ে দিলেই দায়িত্ব শেষ, বরং স্ত্রীকে হঠাত্ তার প্রিয় কোনো ফুল, বই বা ছোট্ট কিছু দিয়ে অবাক করে দিতে পারেন। ব্যস্ততার মধ্যেও যে তাকে মনে রেখেছেন, এতেই স্ত্রী খুশি হবেন। স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলে কাজের পরিকল্পনা করে নিন। এতে সব কাজ সময়মতো হয়ে যাবে, পাশাপাশি কোনো কাজ বাদ পড়ার আশঙ্কা থাকবে না। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর সারা দিনের কাজের একটা পরিকল্পনা তৈরি করুন। পরিকল্পনাটি কয়েকটি ভাগে ভাগ করতে পারেন নিজের কিংবা সন্তানের কাজ। ঘরের ও বাইরের কাজগুলোও আলাদা রাখতে পারেন। কাজের সঙ্গে সময়টা উল্লেখ করতে ভুল করবেন না। একটু সময় হাতে রেখে দিন হঠাত্ কোনো জরুরি কাজের জন্য। গৃহিণীরা নিজের ওপর সব কাজের বোঝা না নিয়ে স্বামী-সন্তানকে কাজ ভাগ করে দিতে পারেন। পরিবারের সবার মধ্যে নিজের কাজটা নিজে করার অভ্যাস গড়ে তুলুন, যেমন খাওয়ার পর নিজের থালা ধুয়ে নেয়া, নিজের ঘর গোছানো, জামাকাপড় গোছানো ইত্যাদি। ছেলেমেয়েকে স্বাবলম্বী করে তুলুন। স্কুলের ব্যাগ গোছানোর দায়িত্ব তাদের দিয়ে দিন। জুতার ফিতা বাঁধা, চুল আঁচড়ানো, ঘড়ি পরা, টাই বাঁধা সময় করে শিখিয়ে দিন। দেখবেন, তারা নিজে নিজে এ কাজগুলো করতে আনন্দ পাবে। আপনার স্বামীর চশমা, ঘড়ি তাকে সব সময় এক জায়গায় রাখতে অভ্যস্ত করুন। এতে অফিসে যাওয়ার সময় খুঁজতে গিয়ে সময় নষ্ট হবে না। ছেলে বা মেয়েকে স্কুলের জন্য তৈরি করে দিলে তাদের স্কুলে নামিয়ে দেয়ার কাজটি স্বামীও করতে পারেন। পরিবার সামলানোর পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও সমান গুরুত্ব দিন। ছুটির দিনে সবাই মিলে কোথাও ঘুরে আসুন। ব্যস্ততার জন্য সেটি করতে না পারলেও সমস্যা নেই। রাতের খাবারটা একসঙ্গে খেয়ে সবাই মিলে বসে পড়ুন ভালো কোনো চলচ্চিত্র দেখতে। অবসরের বিকালটা কাটিয়ে দিতে পারেন ছেলেমেয়েসহ সাপলুডু খেলে। সবার মাঝে যখন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠবে তখন আর চিন্তা কী। সব সম্পর্ক, আর সব সুখের ভিত্তিই হচ্ছে বন্ধুত্ব। একটা ছোটখাটো উপহার মায়ের মনে আনতে পারে বিশাল আনন্দের ঢেউ। তাই মাকে চমকে দিতে হঠাত্ হঠাত্ তার জন্য কেনা যেতে পারে নানা উপহার। এক্ষেত্রে আপনার সাধ্য আর মায়ের ভালো লাগা এই দুটোর সমন্বয় ঘটান। মায়ের কি কি ভালো লাগে তার ওপর নির্ভর করে কেনা যেতে পারে উপহার। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ড শপ, ফ্যাশন হাউসগুলোতে নানা ধরনের উপহার পাবেন। সেখানে ঢুঁ মেরে আসুন। পেয়ে যেতে পারেন নানা ধরনের উপহার। নতুন ডিজাইনের শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, মগ, সিডি, বই ইত্যাদিতে থাকে নতুন আমেজ। মগের ওপর ‘মা’ অঙ্কন, মাকে নিয়ে লেখা কবিতা, অলঙ্কার ইত্যাদি পাওয়া যাচ্ছে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোতে। মাকে নিয়ে নির্বাচিত গানের সিডিও রয়েছে এ তালিকায়। মায়ের একটা দারুণ স্কেচও আঁকিয়ে নিতে পারেন চারুশিল্পী দ্বারা। মায়ের পছন্দের খাবার কিনে আনতে পারেন। ঝটপট কাগজে-কলমে একটি চিঠি লিখে ফেলতে পারেন। এরপর রঙিন খামে ভরে কিছু চকোলেটসহ মায়ের হাতে তুলে দিন। এবার দেখুন না মা কিভাবে হেসে ওঠেন।