বিশ্বকাপের অতিজরুরি অনুষঙ্গ
দুই একটি বাদ দিলে সব বিশ্বকাপ ফুটবলে এমন কিছু অনুষঙ্গ রয়েছে, যা আসরকে অন্যমাত্রা এনে দেয়। জাগিয়ে তোলে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মাসকট, লোগো, পোস্টার এবং থিম সঙ। ব্রাজিল আসরের অফিসিয়াল লোগোর নাম ইন্সপিরেশন, মাসকট ফুলেকো, একটি পোস্টার এবং ব্রাজিল বিশ্বকাপ ফুটবলের থিম সঙ- উই আর ওয়ান। এ সব অনুষঙ্গ বিশ্বকাপের প্রতিটি আসরকে আরও বর্ণময় করে তোলে। এর বাইরে ব্রাজুকা একটি অনুষঙ্গ। কিন্তু এটা সরাসরি মাঠের উপাত্ত হওয়ার তা একটু আলাদাই ভাবা হয়।
এক. এবারের আসরের অফিসিয়াল লোগোর ডিজাইন করেছে ব্রাজিলেরই একটি সংস্থা আফ্রিকা। ওই সংস্থাটি লোগোর টাইটেল দিয়েছে ইন্সপিরেশন। লোগোর ডিজাইনে দেখানো হয়েছে ৩টি বিজয়ী হাত বিশ্বকাপ শিরোপা ওপরে তুলে ধরেছে। আর হলুদ ও সবুজ রঙ ব্রাজিলের প্রতীক। পুরো বিশ্বকে তাদের দেশে উষ্ণ স্বাগত জানাচ্ছে হাতগুলো। লোগো ডিজাইন আহ্বান করা হলে ২৫টি সংস্থাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ২০১০ বিশ্বকাপের মাঝপথেই লোগোটির অফিসিয়াল উন্মোচন করা হয়। ২০১০ সালের ৮ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকায় এক জাঁকালো আয়োজনে ব্রাজিল বিশ্বকাপ ২০১৪ সালের লোগো উন্মোচন করা হয়। ফিফা প্রেসিডেন্ট সেপ ব্ল্যাটারসহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার কাফু, কার্লোস, রোমারিও এবং আলবার্তোরা। সঙ্গে বিশ্বের অনেক নামী-দামী ফুটবল সংগঠক-খেলোয়াড়।
দুই. ফুলেকো পর্তুগিজ শব্দ। এটি-ফুটেবল (ফুটবল) এবং `ইকোলোজিয়া' (ইকোলজি) শব্দ থেকে এসেছে। ব্রাজিল বিশ্বকাপের মাসকটের নাম ফুলেকো। বিশ্বকাপে এই শব্দ দুটি একসঙ্গে মানুষকে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করতে অনুপ্রাণিত করতে পারবে। ৩ মাস অপেক্ষার পর ভক্তদের চাওয়া অনুযায়ী এর নামকরণ হয়। নাম ঠিক করতে ভোটাভুটিও হয়েছে। মাসকটের নাম নির্বাচনে স্বাগতিক দেশের প্রায় ১.৭ মিলিয়ন মানুষ ভোটাভুটিতে অংশ নেয়। ফুলেকো ছাড়াও মাসকটের তালিকায় ছিল জুজেকা এবং আমিজুবি। হাইপ্রোফাইল নির্বাচক কমিটি কাজ করেছে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করতে। কমিটিতে ছিলেন ব্রাজিলের সাবেক তারকা ফুটবলার বেবেতোও। এছাড়াও ব্রাজিলের কয়েকজন জনপ্রিয় সেলিব্রিটি এবং রাজনীতিকও ছিলেন নির্বাচক কমিটিতে। নামকরণ নিয়ে ট্রেডমার্ক ও অন্যান্য শর্তাদির বিষয়ে কিছু আইনি শর্ত ছিল। ফুলেকোর মাধ্যমে একসঙ্গে ব্রাজিলিয়ান প্রকৃতি, বন্ধুত্ব ও ফুটবলের প্রতি আকর্ষণসহ বিভিন্ন বিষয় প্রকাশ পেয়েছে। গত বছর সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ আমেরিকার ঐতিহ্যবাহী আর্মাডিলো প্রাণীর আদলে ব্রাজিল বিশ্বকাপের মাসকট উন্মুক্ত করা হয়।
তিন. রিও ডি জেনিরোতে ব্রাজিল বিশ্বকাপের অফিসিয়াল পোস্টার উন্মুক্ত করা হয় ৩০ জানুয়ারি। এবারের বিশ্বকাপ ফুটবলের পোস্টারটি নকশা করেছে ‘ক্র্যামা’ নামের একটি ব্রাজিলীয় এজেন্সি। শিল্পকর্মের মাধ্যমে হোস্ট দেশ ব্রাজিলের মানচিত্র এবং ফুটবলের সম্পৃক্তা ঘটিয়েই ক্র্যামা জিতে নিয়েছে সম্মানজনক এ অর্জন। নির্বাচকমন্ডলীর মধ্যে ছিলেন ব্রাজিলের দুদুটি বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক রোনালদো। ছিলেন ১৯৯৪ বিশ্বকাপের তারকা বেবেটোও। এ ছাড়া অফিসিয়াল পোস্টার নির্বাচনে নির্বাচক প্যানেলে ছিলেন ব্রাজিলের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, ফিফা সেক্রেটারি জেনারেল জেরোম ভালকে, এলওসি প্রেসিডেন্ট জোসে মারিয়া মারিন প্রমুখ।
চার. আসরের কোনো গান নেই তো প্রাণ নেই। বিশ্বকাপ ফুটবলে শুরু থেকেই প্রতিটি আসরের জন্য একটি থিম সঙ নির্বাচন করা হয়েছে। ব্রাজিল বিশ্বকাপের থিম সঙ উই আর ওয়ান। গানের প্রধান শিল্পী জনপ্রিয় আমেরিকান র্যাপার পিটবুল এবং জেনিফার লোপেজ। সঙ্গে গেয়েছেন ব্রাজিলেরই একজন- ক্লাউদিয়া লেইট্টি। অবশ্য পিটবুল, ক্লাদিও লেইট্টি এবং জেনিফার লোপেজসহ বিভিন্ন দেশের মোট ৯ জন গীতিকার সম্পৃক্ত এই গানে। গানের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ মিনিট ৪২ সেকেন্ড। ৮ মে সনি মিউজিক এন্টারটেইনমেন্ট থেকে রিলিজ পেয়েছে ব্রাজিল বিশ্বকাপের অফিসিয়াল অ্যালবাম ‘ওয়ান লাভ ওয়ান রিদম। ৮ এপ্রিল আনরিলিজ করা হয় ওয়ার্ল্ড কাপের থিম সঙ উই আর ওয়ান। দুনিয়া মাতানো ফুটবল আর সুরের শক্তি দিয়ে পুরো বিশ্বকে এক সূত্রে গাঁথার চেষ্টা করা হয়েছে থিম সঙটির মাধ্যমে। রিলিজ পাওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন মাধ্যম থেকে ওয়ার্ল্ড কাপ থিমসং ডাউনলোডের ধুম পড়ে বিশ্বজুড়ে। তবে বিশ্বের নানা প্রান্তে থিম সংটির সমালোচনাও হচ্ছে সমানতালে। বলা হচ্ছে, ২০১০ বিশ্বকাপে শাকিরার গাওয়া ওয়াকা ওয়াকা, দিস টাইম ফর আফ্রিকা’ গানেরই আপডেট ভার্সন এটি। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গাওয়া গান এখন অনেক ফুটবলপ্রেমীরই মুখে মুখে। বিপুল চাহিদা পড়েছে সারা। রেকর্ড পরিমাণ অ্যালবাম বিকিকিনিও রয়েছে। মূলত র্যাপে যারা মজেছেন তাদের কাছে এই গান কদরই আলাদা। সময়ের সেরা এবং আলোচিত পিটবুলের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ীই গানটি পেয়েছে ভিন্নমাত্রার গ্রহণযোগ্যতা। গানটিতে বাদ্যযন্ত্রের উপস্থিতিও ছিল বিস্ময়কর এবং চমৎকার।
সাম্বা রাজ্যের ৩৩ বছর বয়সী ক্লাউদিয়া লেইট্টি একজন জনপ্রিয় পেশাদার শিল্পী। গানের সঙ্গে তার বসবাস সেই ১৩ বছর বয়স থেকে। ২০০১ সালে ব্যান্ড সংস্থা বাবাডো নভো’র ভোকালিস্ট হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে তার। এ ব্যান্ড থেকে ৫টি সফল অ্যালবাম বের করে ব্রাজিলে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন রিও ডি জেনিরোর এই নারী। ক্লাউদিয়া আলোচনায় এসেছে ২০০৭ সালে। ওই সময়ে এমটিভি ভিডিও মিউজিক ব্রাজিলের উপস্থাপক হিসেবেও দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন।
শেষ কথা. বিশ্বকাপের মতো মহাআসরের শেষ বলে কোনো কথা নেই। তবে বিশ্বকাপ ফুটবলকে প্রাণিত করতে, ফুটবলময় বারতা ছড়িয়ে দিতে আলোচিত অনুসঙ্গগুলো খুই গুরুত্বপূর্ণ। দেখা যেতে পারে একটি আসরে একটি লগো কিংবা থিম সঙ সারা বিশ্বকে মাত করে দিচ্ছে। সেই কারণেই ফুটবলপ্রেমীরা সাকিরার ‘ওয়াকা ওয়াকা’ গানটি এখনও গভীর ফুটবলের ঘ্রাণ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছেন।
(দ্য রিপোর্ট/এএ/এএস/সিজি/এনআই/জুন২০, ২০১৪)