আবারো আসছে অবরোধ কর্মসূচি!
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : জাতীয় নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা ৭১ ঘণ্টার অবরোধ শেষ হচ্ছে শুক্রবার ভোর পাঁচটায়। তবে অস্বস্তির খবর হলো আবারো টানা অবরোধ কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করছেন জোট নেতারা। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমদ। তিনি বলেছেন, আরো ‘তীব্র’ কর্মসূচি আসছে।
১৮ দলীয় জোটের ডাকা হরতাল-অবরোধে কেন্দ্রীয় নেতারা রাজপথে না নামলেও তৃণমূল নেতারা রাজপথ দখলে রেখেছেন। আর তৃণমূলের চাপেই অবরোধ কর্মসূচির সময় বাড়ানো হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়ে দলের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সরকার নমনীয় না হলে অবরোধ লাগাতার দেওয়া হতে পারে।
উল্লেখ্য ২৫ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তফসিল ঘোষণার ওই রাতেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাদেশে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এরপর দু’দফা তা বাড়িয়ে করা হয় ৭১ ঘণ্টা। শুক্রবার ভোর পাঁচটায় এই অবরোধ কর্মসূচি শেষ হবে।
এই কর্মসূচি সফর করতে তৃণমূলে ১৮ দলীয় জোট নেতাকর্মীরা মাঠে নামলেও রাজধানী ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের দেখা যায়নি। দলের হাই কমান্ড থেকে বার বার নির্দেশ দিলেও গা বাঁচিয়ে আড়ালেই রয়েছেন ‘বাঘা বাঘা’ ওইসব নেতা।
জানা গেছে, তৃণমূলের পক্ষ থেকে অবরোধ লাগাতার দেওয়ার চাপ আছে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারাও চিন্তা ভাবনা করছেন। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
নতুন কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা নির্মম অত্যাচার ও কুৎসিত চক্রান্ত্রের বিরুদ্ধে একটি ন্যায় সংগত আন্দোলনে আছি। জনগণকে সম্পৃক্ত করে আমরা এ আন্দোলন করে যাচ্ছি। জনগণ জেগে উঠেছে। সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। একতরফা নির্বাচন প্রতিহত করতে আগামী দিনে আন্দোলনকে আরও তীব্র থেকে তীব্রতর করা হবে।
রিজভী জানান, সারাদেশে শুক্রবার বাদ জুম্মা অবরোধকে কেন্দ্র করে নিহতদের জন্য গায়েবানা জানাযা পড়া হবে। ঢাকায় জানাযা পড়া হবে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। ধারণা করা হচ্ছে এখান থেকেই পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসমলাম আলমগীরও এমন ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন। ২৫ নভেম্বর রাতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ে তিনি প্রথম দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ঘোষণা করেন। ওই সময় তিনি বলেন, তফসিল স্থগিত না করলে আমাদের কর্মসূচি পর্যায়ক্রমে আসতেই থাকবে।
কর্মসূচির বিষয়ে জানতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
জানা যায়, সংবাদ সম্মেলনের আগেই রিজভীর ওপর সারাদেশ থেকে তৃণমূলের নেতারা চাপ দিতে থাকেন অবরোধ বাড়াতে হবে। তাদের বক্তব্য নেতাকর্মীদের মাঠে নামানো হয়েছে। জেল জুলুম, গুলি, হামলা উপেক্ষা করে তারা মাঠে রয়েছেন। এ অবস্থায় কর্মসূচি শিথিল করা হলে পরবর্তীতে কর্মীদের মাঠে নামানো যাবে না। সেজন্য অবরোধ কর্মসূচি বাড়াতে হবে। এই চাপে প্রথম দফায় ১২ ঘণ্টা বাড়িয়ে অবরোধ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত করা হয়।
পরবর্তীতে তৃণমূলের চাপের কথা জানতে পারেন জোটনেত্রী খালেদা জিয়া। তিনিও নির্দেশ দেন অবরোধ আরও বাড়িয়ে দেওয়ার। বুধবার রাতে আবারও ডাকা হয় সংবাদ সম্মেলন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে রুহুল কবির রিজভী আবারও অবরোধের সময় বাড়িয়ে করেন শুক্রবার ভোর ৫টা পর্যন্ত।
জানা যায়, জুম্মার নামাজ ও গায়েবানা জানাজার কর্মসূচি থাকায় শুক্রবার বন্ধ রেখে এই কর্মসূচি আবারও শনিবার থেকে শুরু হতে পারে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সরকারকে আর ছাড় দিতে চাচ্ছে না তারা।
এদিকে, বুধবার অজ্ঞাত স্থান থেকে পাঠানো বিবৃতিতে ১৮ দলীয় জোটের শরীক দল জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান হুমকি দেন দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।
তৃণমূলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসবে নির্বাচন কার্যালয়গুলো আরও আক্রান্ত হবে। আগামী সোমবার নির্বাচন কমিশন এবং সারাদেশে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি উপজেলার নির্বাচন অফিসে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
প্রসঙ্গত, অবরোধের তৃতীয়দিন শুক্রবার রাত পৌনে ১০টা এ প্রতিবেদন তৈরি করার সময় সারাদেশে ১৪ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
(দ্য রিপোর্ট/ টিএস/এমএইচ/এসবি/এইচএসএম/নভেম্বর ২৮, ২০১৩)