দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, দেশের অবস্থা বিস্ফোরণোম্মুখ। একতরফা প্রহসনের নির্বাচন করার বাসনায় সরকার দেশকে এক চরম অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিয়েছে। সংলাপ ও সমঝোতার আহ্বান তারা বরাবর উপেক্ষা ও চাতুর্যের মাধ্যমে এড়িয়ে যাচ্ছে।

তিনি অভিযোগ করেন, সরকারের বশংবদ নির্বাচন কমিশন এই আগুনে ঘি ঢেলেছে তড়িঘড়ি করে একতরফা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে। এর বিরুদ্ধে জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন ও প্রতিবাদ শুরু করলে সরকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বেআইনিভাবে ব্যবহার করে এবং গোয়েন্দা ও দলীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মাঠে নামিয়ে পরিস্থিতিকে সংঘাতপূর্ণ করে তুলেছে।

বিরোধী দলের নেতা শুক্রবার সন্ধ্যায় সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শাহবাগে যাত্রীবাহী বাসে আগুন লাগানোর ঘটনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, সালাহউদ্দিন আহমেদ ও রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকারসহ বিএনপির ও ১৮ দলীয় জোটের নেতাদের নামে মামলা দায়েরের প্রতিবাদে দেওয়া বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।

খালেদা জিয়া মামলাকে মিথ্যা নির্যাতনমূলক ও প্রতিহিংসা দাবি করে অবিলম্বে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজে বিরোধী দলের লোকদের মালিকানাধীন যানবাহনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের প্রকাশ্য উস্কানী দিয়েছেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে উস্কানী দায়েরের অভিযোগে কে মামলা করবে?

খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি যানবাহন ভাঙচুরের বিরুদ্ধে সতর্ক করে নেতা-কর্মীদের রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। অথচ সেই বক্তব্য বিকৃত করে তার বিরুদ্ধে উস্কানীর মামলা দেওয়া হয়েছে। গত কিছুদিন ধরে আমাদের দলের সিনিয়র নেতাদের পুলিশি হয়রানির কারণে নিজেদের বাসায় থাকতে পারেন না। তাদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। দলের নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্য জীবন যাপন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত, তাদেরকেই নাশকতার উস্কানী দেওয়ার অভিযোগে মামলার আসামি করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এই পরিস্থিতিতে আমি দেশবাসীকে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবার আহবান জানাচ্ছি। পুলিশের গুলি ও সুপরিকল্পিত নাশকতায় যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। তাদের পরিবার পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। দল ও জোটের নেতা-কর্মীদের সাহস, ঐক্য ও দৃঢ়তা নিয়ে আন্দোলনের কর্মসূচি সফল করার আহবান জানাচ্ছি। দল-মত নির্বিশেষে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ তথা দেশবাসীকে আমাদের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামে শরীক হবার আহবান জানাচ্ছি।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, একতরফা প্রহসনের নির্বাচনের তফসিল স্থগিত করার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি দাবি জানাচ্ছি। সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে আটক নেতা-কর্মীদের মুক্তি দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, স্বৈরশাসকের পথ বেছে নিবেন না। তাহলে পরিনতি স্বৈরশাসকদের মতোই হবে। সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করে সংলাপের মাধ্যমে নিদর্লীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের পথ খুলে দিন। শান্তি, স্থিতি, নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র অব্যাহত রাখুন।

তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ এমপি, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, এম কে আনোয়ার এমপি, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু ও মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক রাষ্ট্রদূত গোলাম আকবর খন্দকার এবং ব্যক্তিগত সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম, যুবদল সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব, ছাত্রদল সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক নাছির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মহিদুল ইসলাম হিরু, ছাত্রদল মহানগর উত্তর সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির রওশন, যুবদল মহানগর উত্তর সভাপতি মামুন হাসান, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদসহ বিএনপি ও ১৮ দলীয় জোটের সিনিয়র নেতাদেও নামে দেওয়া মামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তাদের মুক্তির দাবি জানান।

খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পিয়াস করিমের বাসায় সশস্ত্র হামলা, গুলশান থানায় বোমা আক্রমন, চট্টগ্রামে বোমাবাজী, ঢাকার আজিমপুরে গাড়ী পোড়ানোসহ বিভিন্ন ঘটনায় শাসক দল ও এর সহযোগী সংগঠনের লোকজনকে পুলিশ হাতেনাতে ধরার পরও তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিরোধী দলের নেত্রী হিসেবে আমার বাসায় বোমা হামলার প্রকাশ্য হুমকি দেওয়া সত্বেও ছাত্রলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে উস্কানীর দায়ের কোন মামলা হয়নি।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, সরকার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়কে দীর্ঘদিন ধরে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। দলের দায়িত্বে নিয়োজিত যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে বাইরে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি অবরুদ্ধ কার্যালয়ে আটকা থেকে অসুস্থ অবস্থায় দলের বক্তব্য নিয়োমিত প্রচার করছেন। সেই সুযোগটুকু বন্ধ করে দিতে তাকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/টিএস/এমএইচ/এমএআর/নভেম্বর ২৯, ২০১৩)