ঢাবিতে বিশ্বকাপ ঢেউ অব্যাহত
মো. কামাল হোসেন, দ্য রিপোর্ট : বিশ্বকাপ ফুটবলের উন্মাদনা বিশ্বজুড়ে। বাংলাদেশেও এর ব্যতয় ঘটছে না। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও বিশ্বকাপের ঢেউ লেগেছে শুরু থেকেই। যতই শিরোপার সময় এগিয়ে আসছে উত্তেজনাও ক্রমাগতই বাড়ছে। এক কথায় বিশ্বকাপ জ্বরে কাঁপছে ঢাবির ছাত্র-শিক্ষক, কর্মচারী, দোকানী সবাই। এমন কি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণের রিকশাওয়ালারাও যেন মেতে উঠেছেন বিশ্বকাপ উন্মাদনায়।
টিএসসিতে দুইটি বড় পর্দায় খেলা দেখানো হচ্ছে। মহসীন হল, জগন্নাথ হল, শহীদুল্লাহ হল, ফজলুল হক মুসলিম হলসহ ঢাবির বিভিন্ন হলেও বড় পর্দায় খেলা দেখানো হচ্ছে। এ সব পর্দার সামনে শুধু যে ওই নির্দিষ্ট হলের ছাত্ররাই খেলা দেখতে আসেন তা নয়। অন্যান্য হল এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররাও এখানে খেলা দেখতে সমবেত হচ্ছেন।
ফেবারিট দলগুলোর খেলা দেখতেই দর্শক বেশি পাওয়া গিয়েছে। টিএসসি কিংবা শাহবাগে খেলা দেখার জন্য রিকশাওয়ালাদের জমায়েত দেখে অবাকই হতে হয়েছে। ঢাবির ইতিহাস বিভাগের ছাত্র ইলিয়াসের মতে, ‘গত ২৫ জুন রাতে শাহবাগ থেকে হলে ফেরার পথে বিশ্বকাপ নিয়ে রিকশাওয়ালাদের উচ্ছ্বাস দেখে এলাম। এমন কি এক রিকশাওয়ালা আমাকে জিজ্ঞেসও করেছে যে, আজ আর্জেন্টিনার খেলা দেখবেন নাকি মামা?’
বিশ্ববিদ্যালয়ের চা-সিগারেট বিক্রেতারাও যেন বিশ্বকাপ ঘিরে দুই ভাগে বিভক্ত-আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। এদের কেউ আর্জেন্টিনার পতাকা সঙ্গে রেখে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের নিজের বিক্রেতা বানিয়েছেন, কেউ আবার ব্রাজিলের পতাকা দিয়ে ব্রাজিল সমর্থকদের দোকানে টানছেন। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা কেন্দ্র বেশ ভালোই বিক্রি চলছে চা-সিগারেটের দোকানগুলোতে।
বাংলাদেশের সবগুলো রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে জড়িত মধুর ক্যান্টিনের স্মৃতি। তবে এখানে রাজনৈতিক আলোচনার চেয়ে বর্তমানে বিশ্বকাপ আলোচনাই বেশি পরিলক্ষিত। গত ২৬ জুন মধুতে বসে ছিলেন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আদিত্য নন্দী ও আপেল মাহমুদ সবুজ, সহ-সম্পাদক মোবারক হোসেনসহ ১৫/২০ জন নেতাকর্মী। তাদের কেউ কেউ ব্রাজিলের সমর্থক, কেউ আবার আর্জেন্টিনার। কেউ বা জার্মানির সমর্থক। গত ২৫ জুন রাতে বিশ্বকাপে খেলা হয়েছিল আর্জেন্টিনা বনাম নাইজেরিয়ার। একই রাতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল আরও ৩টি ম্যাচ। তবে এ সব নেতা-কর্মীর বৈঠকে আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ম্যাচের কথাই বেশি আলোচিত হয়েছে। কারণ ওই ম্যাচে দু’দলেরই সমর্থক ছিল বেশি। ব্রাজিলের সকল সমর্থক ওই খেলায় নাইজেরিয়ার পক্ষ নিয়েছিল।
ক্যাম্পাসের বিভন্ন জায়গায় বন্ধুরা জড় হলেই খেলার খবর নিয়ে কথোপকথন শুরু হয়ে যাচ্ছে। কার্জন হল চত্বরে আড্ডা দিচ্ছিলেন মানিক, রিয়াল, আসাদ, মইনুল। সবাই ব্যস্ত নিজ নিজ প্রিয় দলের প্রিয় তারকার স্থান সবার উপরে রাখতে। মানিক আর আসাদ ব্রাজিলের সমর্থক। তারাই প্রথমে নেইমার বন্দনা শুরু করেছেন। তাদের কথা ব্রাজিল এবার বিশ্বকাপ তাদের ঘরে তো রাখবেই পাশাপাশি সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার নেইমারের হাতেই ওঠবে। আর্জেন্টিনার সমর্থক রিয়াল চুপ থাকতে পারেননি। বলেছেন, ‘শোন বিশ্বকাপ তো এবার আর্জেন্টিনাই নেবে। সঙ্গে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার যাবে মেসির হাতেই।’ জার্মানির সমর্থক মইনুল এরপর মুখ খুলেছেন। জার্মানি এবং থমাস মুলারকে সবার চেয়ে এগিয়ে রেখেছেন তিনি।
ক্যাম্পাসের প্রেমিক-প্রেমিকার আলোচনারও একটা অংশ এখন ব্যয় হয় ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে। অনেক জুটি একই দলের সমর্থক। অনেক জুটি আবার দু’জন ভিন্ন ভিন্ন দলের ভক্ত। ফরিদা আর জন শেষোক্ত গ্রুপের। ফরিদা বলেছেন, ‘মেসির খেলা আমার ভালো লাগে। মেসির দল হিসেবে আর্জেন্টিনাকেই সমর্থন করি।’ সেই কথা শুনে জন বলেছেন, ‘আমি আগে ব্রাজিলের রোনালদোর খেলা পছন্দ করতাম। এখন একই দলের নেইমারের খেলা ভালো লাগে। আমি ব্রাজিলকে সমর্থন করি।’
ঢাবি ক্যাম্পোসেই কথা হলো অলি নামের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে। ঢাকা কলেজে পড়ে সে। থাকেন আজিমপুরের কোনো এক মেসে। অলির মতে, ‘আমি আর আমার এক বন্ধু প্রতিদিন রাতেই মহসীন হলে এসে রাতের খাওয়া-দাওয়া করি। এরপর সবগুলো খেলা দেখি। ম্যাচ শেষে কোনোদিন মধ্যরাতে কিংবা কোনোদিন ভোররাতে মেসে ফিরি।’
ঢাবি ক্যাম্পাসে অনেকেরই দেখা মিলছে প্রিয় দলের জার্সি গায়ে, নয়ত প্রিয় দলের পতাকার রঙে ব্রেসলেট হাতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলেই ফেভারিট দলগুলোর পতাকা আঁকা হয়েছে হলের মূল ফটকে। পতাকা টাঙানো হয়েছে বিভিন্ন রুমের সামনেও।
(দ্য রিপোর্ট/কেএইচ/জেডটি/এএস/এএল/জুন ২৭, ২০১৪)