রানা হানিফ, দ্য রিপোর্ট : চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ চেয়েছেন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। কিন্তু সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে সংকট নিরসনে কোনো উদ্যোগ নিতে পারছেন না রাষ্ট্রপতি।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, রাষ্ট্রপতির সদিচ্ছা থাকলেও সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা না থাকায় তিনি কিছু করতে পারছেন না। এক্ষেত্রে দুই রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছার কোন বিকল্প নেই। অন্যদিকে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংবিধানে রাষ্ট্রপতির কোনো ক্ষমতা না থাকলেও তিনি মন্ত্রিপরিষদকে অনুরোধ করতে পারতেন। এমনকি প্রধান দুই দলকে এক জায়গায় বসানোর উদ্যোগও তিনি নিতে পারতেন। এজন্য সাংবিধানিক কোন ক্ষমতার দরকার হয় না।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে সৃ্ষ্ট রাজনৈতিক সংকট সংঘাতে পরিণত হয়েছে। চলমান সংকট নিরসনে রাষ্ট্রের প্রধান অভিভাবক রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ চেয়েছেন অনেকেই। তবে নির্বাচন ঘনিয়ে আসলেও সংকট নিরসনে রাষ্ট্রপতির দৃশ্যমান ‘উদ্যোগ’ দেখা না যাওয়ায় দেশের সাধারণ জনগণ ও সুশীল সমাজের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।

সংকট নিরসনে প্রধান বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রের প্রধান অভিভাবকের সঙ্গে দেখা করেন। এক কিছুদিন পর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সুশীল সমাজের একটি প্রতিনিধি দলও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে তাকে সংকট সমাধানে উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানান।

রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক ক্ষমতা ও উদ্যোগ গ্রহণ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) নির্বাহী পরিচালক বদিউল আলম মজুমদার দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সংঘাত ও সংকট নিরসনে রাষ্ট্রপতির সদিচ্ছার কোন অভাব নেই। শুধুমাত্র সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে তিনি কোনো উদ্যোগ বা সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না। সরকার সবসময় রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কমিয়ে রাখে। এক্ষেত্রে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল তাদের মানসিকতা পরিবর্তন করে আলোচনায় না বসলে কোনো সমাধান হবে না।’

বদিউল আলম আরো বলেন, ‘অনেকেই বলেন, রাষ্ট্রপতি চাইলে সমস্যার সমাধান সম্ভব। ২৪ জানুয়ারি সংসদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও রাষ্ট্রপতির নিজের ইচ্ছায় কিছুই করার নেই। রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ দেওয়া ছাড়া অন্য কোন কাজ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া করতে পারেন না। তাই সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতির হাত-পা বেঁধে রাখা হয়েছে।’

তবে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আওয়ামী লীগের ‘একগুয়েমী মনোভাবের’ বিরুদ্ধে কিছু বলার ‘সাহস’ দেখাতে পারছেন না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন।

খন্দকার মাহবুব দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশে সর্বময় ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর। প্রধানমন্ত্রীর মতামতের বাইরে কিছুই করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির নেই। তবে দেশের চলমান সংকটে রাষ্ট্রপতি নিশ্চুপ থাকতে পারেন না। প্রধান বিরোধী দলের নেতা যখন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাত করে সংকট নিরসনের জন্য অনুরোধ করেছিলেন, তখনই রাষ্ট্রপতির উচিত ছিলো দুই প্রধান রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে ডেকে প্রকাশ্যে আলোচনায় বসার ব্যবস্থা করা।’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘সংবিধানে রাষ্ট্রপতির কোনো ক্ষমতা নেই। তবুও তিনি মন্ত্রিপরিষদকে লিখিতভাবে সমঝোতা ও সংকট নিরসনের উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ করতে পারতেন। কিন্তু সেটুকুও তিনি করেননি। এতে প্রমাণিত হয় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা আবদুল হামিদ আওয়ামী লীগের একগুয়েমী মনোভাবের বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না।’

(দ্য রিপোর্ট/এইচআর/এমএআর/নভেম্বর ৩০, ২০১৩)