সিলেট সংবাদদাতা : গত শতকের তিরিশের দশকে সিলেট সফরে আসেন আসাম প্রদেশের গভর্নর মাইকেল ক্বীন। তার স্মৃতি অম্লান রাখতেই সিলেট শহরের কেন্দ্রস্থলে নির্মাণ করা হয় একটি ব্রিজ। যার নাম ক্বীন ব্রিজ।

১৯৩৩ সালে সুরমা নদীর উপর ব্রিজটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। নির্মাণ শেষে ১৯৩৬ সালে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়। লোহার তৈরি ব্রিজটি ১১৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ১৮ ফুট।

ঐতিহাসিক এ ব্রিজ পথিকের মনে এখনও দোলা দেয়। দৃষ্টিনন্দন ব্রিজটি এখন যেন কালের সাক্ষী। বহমান সুরমা নদীর বুকের ওপরেই ঠাঁয় দাঁড়িয়ে সে।

সিলেট নাম উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে ক্বীন ব্রিজের নামটি বেশ গর্বের সঙ্গেই উচ্চারিত হয়। সিলেটের প্রবেশদ্বার এই ব্রিজ। সুরমা নদীর ওপর স্থির দাঁড়িয়ে থেকে পথচারীদের জানান দেয়, যুগ যুগান্তরের নানা রঙের ইতিহাসের। দীর্ঘদিন অবহেলিত থাকার পর অন্যতমে এই ঐতিহাসিক নিদর্শন সম্প্রতি সংস্কার করা হয়েছে। ফলে আরো রঙে, আরো সাজে সেজেছে ক্বীন ব্রিজ।

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ডিনামাইট দিয়ে ব্রিজের একাংশ উড়িয়ে দেয়। পরবর্তীতে এর সংস্কার কাজ হয়। পরবর্তীতে এর সৌন্দর্য ও আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তুলতে কয়েক দফা সংস্কারও করা হয়।

গত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে প্রয়াত অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান ক্বীন ব্রিজরে নিচের অংশে দেখে একটি অস্থায়ী বিনোদন পার্ক করার পরিকল্পনা করেন। তিনি ২০০৫ সালের শেষের দিকে ক্বীন ব্রিজের ওই নিচের অংশকে দৃষ্টিনন্দন করতে হাতে নেন সুরমা নদীর উভয় তীরে ‘সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্প’। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি সিলেটের প্রবেশদ্বার ক্বীন ব্রিজের নিচের অংশের সংস্কার করান। তৈরি করেন একটি মিনি অস্থায়ী বিনোদন পার্কও। এ পার্ক তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিনোদন পিপাসুরা ভিড় করেন এখানে। সেসময় থেকে এখনও স্থানটি বেশ জনপ্রিয়।

পড়ন্ত বিকেল কিংবা সন্ধ্যার গোধুলীলগ্নে অবসর নেওয়া মানুষগুলো একটু প্রশান্তির নীড় খুঁজেন এই ক্বীন ব্রিজের পাশে এসে।

তাদের আড্ডা চলে মধ্য রজনী পর্যন্ত। বর্ষায় এই ব্রিজের রেলিংয়ে হেলান দিয়ে সুরমার যৌবন দেখে অভিভূত হন অনেকেই। কিন্তু এই যৌবনা সুরমা নদীর ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ক্বীন ব্রিজের সৌন্দর্য আগের মতো কতটুকু আছে এ নিয়েও প্রশ্ন অনেকের।

সাইফুর রহমানের তৈরি করা মিনি বিনোদন পার্কে এখন জায়গা করে নিয়েছে হকার ও অস্থায়ী ব্যবসায়ীরা। গড়ে উঠেছে এখানে ট্রাক স্ট্যান্ডও। সকাল থেকে দুপুর অবদি দাঁড়িয়ে থাকে শত শত ট্রাক। ভাসমান ব্যবসায়ীরাও সৌন্দর্য না বুঝে গড়ে তুলেছে ছোটখাটো ব্যবসা কেন্দ্র। এ ব্রিজের অবস্থান সিটি কর্পোরেশনের আওতায় হলেও এর দায়-দায়িত্ব যেন তাদের নেই।

সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ক্বীন ব্রিজের নিচে গড়ে ওঠা মিনি বিনোদন পার্কের সৌন্দর্য টিকিয়ে রাখতে তেমন উদ্যোগ নেননি। তবে নবনির্বাচিত মেয়র আরিফুল হক ক্বীন ব্রিজের সৌন্দর্য রক্ষায় কাজ করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।

(দ্য রিপোর্ট/এমজেসি/এমএআর/নভেম্বর ৩০, ২০১৩)সিলেট