জেমস ‘কিং’ রদ্রিগেজ
‘বিগ ট্রাবলে’র কথা মনে আছে? টিম অ্যালেন, রেনে রুশোর সঙ্গে বাদামি চুলের সোফিয়া ভারগারা? মনে থাকার কথা নয়। 'বিগ ট্রাবল', ‘সেভিং প্রাইভেট রায়ান’ কিংবা ‘প্রিটি ওম্যান’ গোত্রের ছবি নয়। ভারগারাও সোফিয়া লরেন নন, তবে ল্যাটিন আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় অভিনেত্রী- এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। তার দল এবার বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে। গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ, যার ‘একশ বছরের নির্জনতা’ বিশ্ব সাহিত্যের ইতিহাস বদলে দিয়েছে কিংবা পাবলো এসকোবার- নর্দান হ্যামিস্ফিয়ারের ‘গাব্বার সিং’- যার এক ইশারায় চাঁদনী রাতেও অমাবশ্যা নামত বোগোটায়- এদের দল এবার বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে। এত কথার কি দরকার ! বললেই হয়, জেমস রদ্রিগেজের দেশ ব্রাজিল ২০১৪ এর দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালিস্ট। জাতির পিতা সাইমন বলিভার কিংবা ‘সালসা কুইন’ শাকিরার চেয়েও কলম্বিয়া অন্তঃত এই মুহূর্তে বিশ্বের কাছে জেমসের দেশ হিসেবেই পরিচিত।
‘এতদিনে বিশ্বকাপে আমার প্রিয় খেলোয়ারকে খুঁজে পেয়েছি। তার নামের প্রথম অংশ সে কাজে আমাকে সহায়তা করেছে।’ টুইট করেছেন মিয়ামি হিটের বাস্কেটবল সুপারস্টার লেব্রন জেমস। ২দিন আগেই বাঁ পায়ের ‘যাদুভলি’ আর ডান পায়ের নিখুঁত ফিনিশিংয়ে কাভানি, গডিনের উরুগুয়েকে উড়িয়ে দিয়েছেন জেমস। টুইট করলেন ইংল্যান্ড ও ম্যানইউর সাবেক ফুলব্যাক ফিল নেভিল ‘ভলির গোলটি বিশ্বমানের। এই বিশ্বকাপের সেরা। ঘাড়ের ওপর দিয়ে তাকানো বলে দেয় চকিতে ঘুরে যাওয়ার জন্যে সময় থাকে জেমসের। একমাত্র পল স্কোলস আর জাভির এই ক্ষমতা আছে। ওকে পরিপূর্ণ ফুটবলার মনে হয়।’
খেলা শেষে উচ্ছ্বসিত প্যাকারম্যান, ‘আমি আগেই জানতাম এই বিশ্বকাপ রদ্রিগেজের হবে।’
কলম্বিয়া যদি ব্রাজিলের সাথে হেরেও যায় তবুও কিন্তু কলম্বিয়ান কোচের কথা মিথ্যে হবে না। প্রথম ৪ ম্যাচে ৫ গোল, ৪ অ্যাসিস্ট, তিনবার ম্যাচ সেরা, সঙ্গে যোগ করুন দিগন্তজুড়ে তার বিস্তার, ডিফেন্সচেরা পাস, বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং এই ২২ বছর বয়সে অতি উচ্চমার্গীয় ‘মেজাজ’ - জেমস রদ্রিগেজ দশে দশ!
গত গ্রীষ্মে মোনাকো যখন ৪৫ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে এই ছেলেকে দলে ভেড়ালো তখন যারা ভ্রু নাচিয়েছিলেন তাদের কি খবর? কোনো খবর নেই। আসলে কেউ বিন্দুমাত্র অবাক হননি। এই ছেলে ১৭ বছর বয়সেই তারকা। মাত্র ১৬ বছর বয়সে এনভিগাডোর হয়ে কলম্বিয়ার লিগ ওয়ানে অভিষেক। পরের বছর সবচেয়ে কম বয়সী বিদেশী খেলোয়াড় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন আর্জেন্টাইন লিগে। লানোসকে ২-০ গোল হারাল বেনফিল্ড। মাঠজুড়ে রাজত্ব করলেন ১৭ বছর বয়সের এই যুবক। খেলা দেখে মুগ্ধ স্পোর্টস ওয়েবসাইট ডরিও ওলে। এতটাই যে, টেনে আনলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে এবং শেষ পর্যন্ত এই ছেলের নাম দিলেন ‘জেমস বন্ড অব বেনফিল্ড’। ইউরোপের স্কাউটরা তো সর্বক্ষণই রোসারিও, সাও পাওলোতে ঘুরঘুর করে। পরের বছর এফসি পোর্তো ৫.১ মিলিয়ন ইউরোতে কিনে নিল তাকে। প্রথম ফ্রেন্ডলি ম্যাচে আয়াক্সের বিপক্ষে গোল। প্রথম মাসেই হলেন লিগের সবচেয়ে মূল্যবান খেলোয়াড়। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গোল পেলেন পিএজজির বিপক্ষে। মৌসুম ঘুরতেই কাপ, লিগ দুটিই পোর্তোর ঘরে। তাড়াহুড়ো চুক্তির টেবিলে বসলেন কর্মকর্তারা- এবার বেতন দ্বিগুণ, বাই আউট ক্লজ ৪৫ মিলিয়ন ইউরো! মোনাকোর বাই আউট ক্লজ কত? জানা নেই। কম হয়ে থাকলে আরব শেখের চিন্তিত হওয়ার কারণ আছে। বার্সার জাভি, ইনিয়েস্তার দিন শেষ। রিয়ালে ওজিল নেই। ইসকো খেদিরা দিয়ে হবে না। বেল উইংয়ে খেলেন। মোরিনহোও জেমসেকে পছন্দ করেন। সুতরাং নতুন মৌসুমে প্রিমেরা কিংবা প্রিমিয়ার লিগ হতে পারে রদ্রিগেজের ঠিকানা। সে নিজে রিয়ালে খেলার ইচ্ছে ব্যক্ত করেছে। এখন ফ্লোরিন্টিনো পেরেজ চাইলেই হয়। ট্রান্সফার মার্কেটে আরেকটি ঝড় উঠতে যাচ্ছে! মাত্র ২১ বছর বয়সে পোর্তোর হয়ে ৩ বছরে ৩টি লিগ শিরোপাসহ মোট ৮টি শিরোপা জিতেছেন। বেশ ক‘ বছর আগে তাকে একনজর দেখে কার্লোস ভ্যালডেরামা বলেছিলেন, ‘নতুন এলপিবে (কিড) পেয়ে গেছে কলম্বিয়া।’ জেমসের নাম ‘এল নুভে পিবে’ মানে ‘নতুন শিশু’। আপ্লুত হয়েছিলেন রদ্রিগেজ ‘ওনি সব কলম্বিয়ান ফুটবলারদের হিরো। তার কাছ থেকে এমন প্রসংসা পাওয়া বিরাট সম্মানের।’
তবে প্রসংশার তো শেষ দেখিয়ে দিয়েছেন অস্কার তাবারেজ ‘তারাই মেধাবী যাদের নতুন কিছু করার জন্য পূর্ব অভিজ্ঞতার দরকার নেই। ম্যারাডোনা, মেসি, সুয়ারেজ ও রদ্রিগেজ অভাবনীয় কিছু করতে পারে। কারণ ঈশ্বর প্রদত্ত বিশেষ কিছু আছে তাদের। মেসি, ম্যারাডোনা ........ রদ্রিগেজ শ্যুড বি ওভার দ্য মুন ! অস্কার তাবারেজ অভিজ্ঞ লোক, বহু উজির নাজির দেখেছেন ফুটবল ময়দানে। তার কথা ফেলে দেওয়ার মত নয়। রদ্রিগেজের গুণমুগ্ধ পণ্ডিত কোচের নাম সামনে হয়ত আরও শুনতে পাবেন।
শর্সেহলুদ কলম্বিয়াকে আর কতদূর নিযে যেতে পারবেন জেমস তা ভিন্ন প্রশ্ন। তবে এতটুকু নিশ্চিত ১৯৯১ সালে কুকুটায় যে শিশুর জন্ম আগামী ১০ বছরে তার হাসি, চুলের জেল, প্রিয় খাবার, প্রিয় রং, এসব হয়ত আলোচনার বিষয় হয়ে উঠতে পারে। ফুটবলটা যেমন খেলেন, গায়ের রং আর চেহারা তেমনই খোলতাই। হাসিটা তো বিউটিফুল! তবুও কলম্বিয়ান তরুণীদের ভীষণ মন খারাপ। কথা নেই বার্তা নেই ২০ বছর বয়সেই গাধাটা বিয়ে করে বসেছে। কন্যা অস্পিনা। একজন মেয়েও আছে। নাম স্যালোম। এখন শুধুই স্যালোম। ১০ বছর পর হয়ত প্রিন্সেস স্যালোম হবে। বাবা ’কিং রদ্রিগেজ’!
(দ্য রিপোর্ট/এফজি/এএস/এনআই/জুন ৩০, ২০১৪)