যেভাবে আটক হলেন রিজভী
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : রাজধানীর ২৮/১ নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গভীর রাতে হঠাৎ করেই পুলিশি অভিযান শুরু হয়। আটক করা হয় দলের যুগ্ম মহাসচিব দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে। অভিযান পরিচালনা করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
শনিবার সকালে সরেজমিনে বিএনপি অফিসে কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অভিযানের সময় ফাইল কেবিনেট ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে। অফিস থেকে দলের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, ৩টি কম্পিউটার, ১টা ল্যাপটপ, নেটওয়ার্কের সার্ভার ও রিজভী আহমদের ২টি মোবাইল নিয়ে গেছে পুলিশ। এছাড়া ভাঙচুর করেছে অফিসের বিভিন্ন কক্ষের ৯টি দরজা।
শনিবার রাত ৪টার দিকে বিএনপির কার্যালয়ে ৪০ মিনিটের এ অভিযানে রিজভী আহমেদকে আটক করা হয়। এছাড়া দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বেলাল আহমদকে আটক করে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ।
এ সময় রিজভীকে আটকের দৃশ্য ধারণ করতে গেলে টেলিভিশন সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত করে ডিবি পুলিশ।
বিএনপি অফিসের কর্মচারীদের অভিযোগ, কার্যালয়ের দোতলায় চেয়ারপারসন, তারেক রহমানের কক্ষসহ প্রত্যেকটি রুমের দরজার তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে আসবাবপত্র ভাংচুর করে পুলিশ।
প্রতক্ষ্যদর্শী অফিসের রের্কড কিপার (তথ্য সংগ্রাহক) মো. আব্দুল গাফফার বলেন, তালা ভাঙার শব্দে আমাদের ঘুম ভেঙে যায়।
তিনি বলেন, আমরা অফিসের তিন তলায় ঘুমিয়ে ছিলাম। রাত তিনটা চল্লিশ মিনিটের দিকে সাদা পোশাকের ১২-১৫ জন পুলিশ অফিসের সামনে মই লাগিয়ে দোতলার বারান্দায় উঠে। পরে তারা মেশিন দিয়ে তালা কেটে ভেতরে ঢুকে।
গাফফার বলেন, তারা তিন তলার ব্রিফিং রুমে এসে আমাদেরকে এক পাশে আটক করে রাখে। এরপর তালা ভেঙে মহাসচিবের কক্ষে প্রবেশ করে আসবাবপত্র ভাঙচুর এবং বেলাল ভাইকে আটক করে। এরপর কাঁচের দরজা ভেঙে দলীয় দফতরে প্রবেশ করে।
তিনি বলেন, যখন পুলিশ ঢুকে তখনই দরজা ভাঙার শব্দে রিজভী ভাইয়ের ঘুম ভেঙে যায়। পুলিশ তিন তলায় এসে রিজভী কোথায় বলে ডাকাডাকি করতে থাকে। এরপর রুমে প্রবেশ করে রিজভী ভাইয়ের কলার ধরে নামিয়ে নিয়ে যেতে উদ্যত হয়। তখন রিজভী ভাই লুঙ্গি পরা ছিলেন। রিজভী ভাই প্যান্ট পরতে চাইলে তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে কলার ধরে নামিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ।
গাফফার অভিযোগ করেন, যাবার সময় পুলিশ ক্যাবিনেট ভেঙে অফিসের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক, রিজভী ভাইয়ের ব্যবহৃত ল্যাপটপ, বিভিন্ন কাগজপত্র ও টাকা-পয়সা নিয়ে যায়। রাত সোয়া চারটার দিকে মূল গেটের তালা ভেঙে দুই নেতাকে নিয়ে বেরিয়ে যায় পুলিশ।
অভিযান চলাকালে কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন ৭১ টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার সাংবাদিক শফিক আহমেদ, জিটিভির রিপোর্টার গাউসুল আজম বিপু।
শফিক আহমেদ বলেন, রাতে আমাদের চ্যানেলে রিজভী ভাইয়ের একটি টক শো ছিলো। তা শেষ হতে প্রায় একটা বেজে যায়। বেশি রাত হয়ে যাওয়ায় এখানেই থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নেই।
তিনি বলেন, রাত সাড়ে তিনটার তালা ভাঙার শব্দ হয়। এসময় আমিসহ কয়েকজন তিনতলায় জেগে ছিলাম। আমি ও গাউসুল আজম বিপু তখন শব্দের উৎস জানতে দোতলায় গেলে কয়েকজন সাদা পোশাকধারী পুলিশ আমাদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করে। পরিচয় জেনে নিশ্চিত হওয়ার পর আমাদের মোবাইল নিয়ে দোতলার একটি কক্ষে আটকে রাখে। সোয়া চারটার দিকে কক্ষের জানালা দিয়ে দেখতে পাই রিজভী আহমেদ ও বেলাল আহমেদকে নিয়ে সাদা পোশাকের পুলিশ সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, রিজভীকে আটকের জন্য অত্যন্ত গোপনীয়তা অবলম্বন করে ডিবি পুলিশ। এ অভিযানে সাদা পোশাকের প্রায় ৩০ জন পুলিশ সদস্য অংশ নেয়। বিএনপি কার্যালয়ে প্রবেশের আগে তারা নয়াপল্টন কার্যালয়ে রাতে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশের গলিতে সরিয়ে নেয়। এরপর তাদের আনা মই লাগিয়ে বিএনপি অফিসের দোতালার বারন্দায় উঠে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ মিনিটের অভিযান চালায়।
প্রসঙ্গত, রিজভী দীর্ঘদিন ধরে কার্যালয়ে স্বেচ্ছায় অবরুদ্ধ ছিলেন। তিনিই সব কর্মসূচি ঘোষণা করতেন এবং সাংবাদিকদের কাছে দলের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া জানাতেন।
শনিবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিএনপি কার্যালয়ে কোনো সিনিয়র নেতাদের আসতে দেখা যায়নি।
বিএনপি অফিসে রয়েছে সহকারী, পিয়নসহ ৯ জন। অফিস সুপারিনটেন্ডেট আলহাজ্ব জলিল উদ্দিন, অফিস কেয়ারটেকার হাজি মো. রুস্তম আলী, অফিস স্টাফ মো. রফিকুল ইসলাম, মো. শামীম হোসেন, মো. আব্দুল গাফফার, মো. আজাদ, মো. নূর আলম লিটন, মো. ফারুক, মো. মঞ্জু।
(দ্য রিপোর্ট/এমএইচ/এইচএসএম/নভেম্বর ৩০, ২০১৩)