বিশ্বের পরাশক্তি বিশ্ব ফুটবলের খর্ব শক্তি
যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেই সুদিন আর নেই। এখন আর এককভাবে কোনো কর্তৃত্ব দেখাতে পারে না। তারপরও সুপার পাওয়ার হিসেবে এখনও সবাই তাদের কম-বেশি মান্য-গণ্য করে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের মোড়লগিরি থেমে নেই। এখনও বিভিন্নভাবে দিয়ে চলেছে হম্বি-তম্বি।
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের এই প্রভাব-প্রতিপত্তি থাকলেও বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের অন্যতম সেরা আসর বিশ্বকাপ ফুটবলে কিন্তু মার্কিনীদের মাতব্বরি চলে না। আর যাই হোক, ফুটবল মাঠে কূটনীতি কিংবা গা জোয়ারি মনোভাব দিয়ে জয়ী হওয়া যায় না। জিততে হলে থাকতে হবে ফুটবলীয় কৌশল, দক্ষতা ও সৃজনশীলতা। এ ক্ষেত্রে তারা অনেক পিছিয়ে আছে। বিশ্বের পরাশক্তি বিশ্ব ফুটবলের খর্ব শক্তির দেশ হিসেবে পরিচিত। চাইলেও পারছে না পরাশক্তি হতে।
আপতদৃষ্টিতে মনে হয়, বিশ্বকাপ ফুটবলের সঙ্গে বুঝিবা যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কটা গভীর নয়। দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ নিয়ে তাদের তেমন মাতামাতি নেই। অথচ যে ১৩টি দেশকে নিয়ে বিশ্বকাপ ফুটবলের গৌরবময় যাত্রা শুরু হয়, যুক্তরাষ্ট্র তাদের একটি। বিশ্বকাপ ফুটবলে তাদের সেরা সাফল্য অভিষেক আসরেই। সেবার তারা তৃতীয় স্থান অধিকার করে। এ থেকে অনুধাবন করা যায়, বিশ্বকাপ ফুটবলকে মার্কিনীরা একদমই হালকাচালে নেয়নি। ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়ে তারা কাঁপিয়ে দিয়েছিল। ইংলিশরা সেই পরাজয়ের বেদনা আজও ভুলতে পারেনি। এরপরই গতিপথ হারিয়ে ফেলে মার্কিনীরা।
১৯৫৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বকাপ ফুটবলে চূড়ান্ত পর্বে কোয়ালিফাই করতে পারেনি। ধারণা করা হয়, এই ৩২ বছরের ব্যর্থতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবলটা সেভাবে বিকশিত ও জনপ্রিয় হতে পারেনি। এ কারণে বিশ্বকাপ ফুটবল সারা দুনিয়া মাতিয়ে দিলেও মার্কিনীদের মধ্যে খুব একটা হেলদোল দেখা যায়নি। অনেক ঘাম ঝরানোর পর ১৯৯০ সালে কোয়ালিফাই করতে সক্ষম হয়। এরপর থেকে আর তারা চূড়ান্ত পর্বে খেলতে ব্যর্থ হয়নি। এরমধ্যে ১৯৯৪ সালে নিজের দেশে বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজকও হয়েছে। ২০০২ সালে খেলেছে কোয়ার্টার-ফাইনাল। এত কিছুর পরও বিশ্বকাপ ফুটবলকে আপন করে নিতে পারেনি মার্কিনীরা। আর এ কারণে বেসবল, আমেরিকান ফুটবল (বিশ্বব্যাপী প্রচলিত ফুটবল নয়, ফুটবল খেলা তাদের কাছে পরিচিত সকার নামে) বাস্কেটবল, আইস হকি বুকে ধারণ করে আছে বহুসংস্কৃতির এই দেশটি।
এবারের বিশ্বকাপ ফুটবলে রাউন্ড অব সিক্সটিন-এ খেলে যুক্তরাষ্ট্র। এতে অবশ্য মার্কিনীদের সন্তুষ্ট হওয়ার কারণ নেই। শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে না পারাটা তাদের কাছে এক ধরনের পরাজয়ই মনে হয়। তবে যে কারণেই হোক, এবারের বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে মার্কিনীদের মনোযোগ কাড়তে সক্ষম হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ইএসপিএন চ্যানেলে যুক্তরাষ্ট্র-ঘানা ম্যাচ দেখেছেন এক কোটি ১১ লাখ দর্শক। এর আগে ইএসপিএন চ্যানেলে বিশ্বকাপ ফুটবলের কোনো ম্যাচ এত দর্শক উপভোগ করেননি।
অবশ্য টিভিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি ম্যাচই কম-বেশি নতুন মাইলফলক গড়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, ফুটবলের প্রতি মার্কিনীদের আগ্রহ বাড়ছে। এটা বোধকরি মন্দ নয়। যে খেলাটি সারা দুনিয়ার বেশিরভাগ মানুষের মন জয় করে নিয়েছে, সে খেলায় মার্কিনীদের অনুরাগ থাকবে না, কেমন যেন একটু বেখাপ্পাই লাগে। মার্কিনীরা যদি ফুটবলে অধিক মাত্রায় আকৃষ্ট হয়, তাহলে বাড়বে বিশ্ব ফুটবলের রমরমা। বাড়বে মার্কিনীদের ফুটবল শক্তিও। ফুটবলের পরাশক্তি হিসেবেও উঠে আসতে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাম। সে ক্ষমতা অন্তত তাদের আছে।
(দ্য রিপোর্ট/ডিএম/এএস/জেডটি/সিজি/আরকে/জুলাই ২, ২০১৪)
dulalmahmud@yahoo.com