কাজে স্থবিরতা, চুক্তি স্বাক্ষরে বিলম্ব
জোসনা জামান, দ্য রিপোর্ট : বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকারি কাজ কর্মে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। এজন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাজেও গতিহীনতা লক্ষ করা গেছে। বিদ্যুৎখাতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) নেতৃত্বে একটি জোটের বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো ফেইজ- ২ এর কাজের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি।
নেগোসিয়েশনের প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও মূল চুক্তির বিষয়ে এখনো কিছুই জানেনা অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। কবে নাগাদ এ চুক্তি হবে এমন প্রশ্নের জবাবে এডিবির দায়িত্বপ্রাপ্ত ইআরডির যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন আহমেদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, এখনো জানি না কবে চুক্তি স্বাক্ষর হবে। তবে আশা করছি বেশি দেরি হবে না।
এ বিষয়ে এডিবির বাংলাদেশ কার্যালয়ে নিযুক্ত সিনিয়র যোগাযোগ কর্মকর্তা গোবিন্দবার দ্য রিপোর্টকে বলেন, চুক্তি স্বাক্ষর একটি প্রক্রিয়ার ব্যাপার। নেগোসিয়েশনের পর এখন আমাদের বোর্ড অনুমোদন দেবে, তারপর একনেকে প্রকল্প পাস হলে চুক্তিস্বাক্ষর করা হবে। তবে নানা কারণে এডিবির বোর্ডে অনুমোদন প্রস্তাব উঠতে দেরি হচ্ছে।
রাজনৈতিক কারণে এমন হচ্ছে কি না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেরকম করে সরাসরি বলা যায় না। হরতাল ও অবরোধের কারণে আমরা নিয়মিত অফিস করতে পারছি না এটি সত্যি। কিন্তু বাসায় হোমওয়ার্ক এবং শুক্রবারও অফিসে কাজ করে জমে থাকা কাজগুলো এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, বিদ্যুৎখাতে যৌথ অর্থায়ণ করছে দাতারা। এ জোটে রয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ইসলামমিক উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি), ইউরোপীয় ইনভেসমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি) এবং ফ্রান্স উন্নয়ন সংস্থা (এএফডি)। চার সংস্থা মিলে মোট বিনিয়োগ করবে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছে এডিবি।
এ বিষয়ে অর্থায়নকারী জোটের নেতৃত্বে থাকা এডিবির সঙ্গে নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে নেগোশিয়েশন সম্পন্ন করেছে সরকার। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত এডিবির কার্যালয়ে সফলভাবে নেগোশিয়েশন সম্পন্ন হয়েছিল। এতে এডিবির পক্ষে নেতৃত্ব দেন কান্ট্রি ডিরেক্টর তেরেসা খো। ওই সময় ইআরডির যুগ্ম সচিব সাইফুদ্দিন আহমেদ জানিয়েছিলেন, দ্রুতই চুক্তি স্বাক্ষর হবে। কিন্তু সেটি আর হয়নি।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের বিদ্যুৎখাতের উন্নয়নের লক্ষে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পাওয়ার সিস্টেম এক্সপানসন এন্ড ইফিসিয়েন্সি ইমপ্রুভমেন্ট প্র্রোগ্রাম নামের একটি কর্মসূচি প্রণয়ন করেছে। এ কর্মসূচির আওতায় এডিবি তিন কিস্তিতে মোট ৭০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। তিনটি সহযোগী অর্থায়নকারী সংস্থা দেবে ৬৭ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার এবং বাকি ২২ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার অর্থায়ন করবে বাংলাদেশ সরকার।
এ কর্মসূচির আওতায় প্রস্তাবিত ফেইজ- ২ কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশের বিদ্যুৎখাতে সঞ্চালন এবং বিতরণ সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। এ কর্মসূচির আওতায় চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে ৫১০ কোটি টাকা ব্যয়ে কনস্ট্রাকসন অ্যান্ড এক্সপানসান অফ ১৩২/৩৩ কেভি অ্যান্ড ৩৩/১১ কেভি সাবসটেনসানস ইন ডিপিডিসি প্রকল্প, প্রায় ১ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে কনস্ট্রাকসান অ্যান্ড এক্সপানসান অফ ডিস্ট্রিবিউসন নেটওয়ার্ক অফ নর্থ অ্যান্ড সাউথ জোন ইন ডিপিডিসি প্রকল্প, ৯৪৬ কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে অগমেনটেসন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেসন অফ ডিস্ট্রিবিউসন সিস্টেমস ইন ডেস্কো এরিয়া প্রকল্প।
এ ছাড়াও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এর আওতাধীন ৪০০/২৩০/১৩২ কেভি গ্রিড নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করা হবে।
এডিবির ঋণে পাঁচ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ২৫ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। সুদের হার লাইবর (লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফার রেট) ভিত্তিক। এ ঋণের কমিটমেন্ট ফি দশমিক ১৫ শতাংশ ও প্রিমিয়াম দশমিক ১০ শতাংশ।
সংস্থাটির শর্ত হিসাবে বলা হয়েছে, এডিবির অর্থ ব্যয়ে পূর্তকাজ, মালামাল ও সেবাদি সংগ্রহের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে।
সূত্র জানায়, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বাংলাদেশের অন্যতম একটি ঋণ দাতা প্রতিষ্ঠান। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ এর সদস্য পদ লাভ করার পর এই সংস্থা তাদের আর্থিক সহায়তার একটি বড় অংশ প্রদান করে আসছে। ঋণের ক্ষেত্রে এডিবি প্রধানত অবকাঠামো বিশেষ করে বিদ্যুৎ, জ্বালানী, স্থানীয় সরকার, পরিবহন, শিক্ষা, পানি সম্পদ এবং সুশাসন খাতকে প্রাধান্য দিয়ে আসছে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বাংলাদেশকে মোট ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে।
(দ্য রিপোর্ট/জেজি/এসবি/নভেম্বর ৩০, ২০১৩)