শুধু কি ক্রনিয়েই অপরাধী!
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ক্রিকেট বিশ্বের কাছে তার ভাবমূর্তি যেমনই থাকুক, অধিনায়ক হ্যানসি ক্রনিয়ে বরাবর ছিলেন সন্দেহজনক ব্যক্তিত্ব৷ ভারতে ম্যাচ গড়াপেটার কীর্তি ফাঁস হওয়ার পরে ডারবানের এক হোটেলে মিটিং ডেকে ক্রনিয়ে সতীর্থদের বলেছিলেন, ‘আমি একেবারেই নির্দোষ, আমাকে অন্যায়ভাবে ফাঁসানো হচ্ছে।’
ঘটনার পরদিনই টিম ম্যানেজার গুলাম রাজা মারফত্ টিমের বাকিরা জানতে পেরেছিল, দক্ষিণ আফ্রিকা বোর্ডের কাছে নিজের দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন ক্রনিয়ে। ক্রনিয়ে বিষয়টি আবারো আলোচনায় এসেছে বাউচারের-‘থ্রু মাই আইজ’ বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর।
আসলে ভারতীয় পুলিশের জালে ধরা পড়ার পরেই ফেঁসে গিয়েছিল হ্যানসি ক্রনিয়ে। বাউচার তার বইয়ের এক প্যারায় লিখেছেন, ‘প্রথমে আপনার ওর জন্য সহানুভূতি হবে, তার পরে রাগ হবে৷ আমার ঠিক তাই হয়েছিল।’
রসিকতার ছলে ক্রনিয়ে তিনি ও বাকি দুই টিমমেট ল্যান্স ক্লুজনার ও জাক কালিসকে ম্যাচ গড়াপেটা করার জন্য ২ লাখ ডলারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন৷ এমনই বিস্ফোরক সব তথ্য থাকছে ক্রোনিয়ের দীর্ঘদিনের টিমমেট প্রাক্তন দক্ষিণ আফ্রিকান উইকেটকিপার মার্ক বাউচারের আত্মজীবনী-‘থ্রু মাই আইজ’ বইয়ে৷ তার মতে, ক্রিকেটে আইসিসির দুর্নীতি নিরোধক নীতি এখনও একেবারে রসিকতার মতো৷
২০০২-এ বিমান দুর্ঘটনা মারা যান কলঙ্কিত ক্রনিয়ে৷ বাউচার বলেছেন, ‘হ্যান্সি ধরা পড়েছিল এবং ও অবশ্যই সব কিছুর সঙ্গে জড়িত ছিল৷ তবে ওর ঘটনা থেকে যে শিক্ষা নেওয়া দরকার ছিল, তা কিন্তু নেওয়া হয়নি৷ কোনও দেশই ম্যাচ গড়াপেটার বিষয়টি খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখে না। এবং এখনও এই নিয়ে প্রকৃত ব্যবস্থা নেয় না৷’
বাউচার অবাক, এত বছরেও আইসিসির তদন্ত এই বিষয়ে বড় কোনও নাম বের করতে পারেনি৷ কিং কমিশনের সামনে প্রকাশ্যে কান্নার ভিডিও ফুটেজ দেখে বাউচার ও জন্টি রোডস আইসিসির দুর্নীতি নিরোধক কমিটিকে প্রশ্ন করেছিলেন, গত ১০ বছরে আপানারা কি শুধু একজন ক্রনিয়েকেই দোষী ভাবছেন।’
বাউচারের মতে, ‘একা ক্রনিয়ে দোষী ছিলেন, এটা কখনওই বিশ্বাসযোগ্য নয়।’ তবে এ-ও জানিয়েছেন, সরাসরি না বললেও রসিকতার ছলে টিমমেটদের ম্যাচ গড়াপেটার টোপ দিতেন ক্রনিয়ে। বলেছেন, ‘ওকে বোঝা কঠিন ছিল৷ একদিন হয়তো হাসছে বা রসিকতা করছে, পরের দিনই রেগে আগুন৷ ওর অনিশ্চিত মনোভাব দেখে আমার সন্দেহ হত৷ ভারতে নাগপুরের ম্যাচে আমাকে স্টাম্পের ঠিক পিছনে দাঁড় করিয়ে হ্যানসি এমনভাবে ওয়াইড করেছিল, যাতে বলটা বাই ৪ হয়৷ আমার বলটা ধরার কোনও সুযোগ ছিল না, কারণ তা ছিল লেগসাইডের অনেকটাই বাইরে৷ ওর মতো লোকের পক্ষে অতটা বাইরে বল করা অসম্ভব ছিল৷’ তা ছাড়া ও একবার রসিকতা করে আমি, কালিস ও ক্লুজনারকে বলেছিল, ‘ম্যাচটা ছাড়লে ২ লাখ ডলার পাওয়া যাবে৷ আমরা ব্যাপারটা হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম।’
প্রিটোরিয়ার বৃষ্টিবিঘ্নিত টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ০-০ অবস্থায় ইনিংস ডিক্লেয়ার করে ম্যাচ হেরেছিলেন ক্রনিয়ে৷ যা একেবারেই মানতে পারেননি টিমমেটরা৷ বাউচারের কথায়, ‘টিমমেটরা অনেকেই এই সিদ্ধান্ত মন থেকে সমর্থন করতে পারেনি৷ কালিস না বলেছিল, ক্লুজনারও তাই৷ জুনিয়রদের মনে হয়েছিল, টেস্ট ম্যাচ নিয়ে এমন ছেলেখেলা উচিত নয়৷ নিজের জয় নিয়ে নিশ্চিত না হয়ে কখনও টেস্ট ম্যাচ নিয়ে ঝুঁকি নেওয়া উচিত নয়।’
(দ্য রিপোর্ট/এএস/সিজি/নভেম্বর ২৯, ২০১৩)