দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখপাত্র যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘গণআন্দোলনের তীব্রতা দেখে সরকার ভীত হয়ে পড়েছে।’

এক বিবৃতিতে শনিবার সন্ধ্যায় তিনি বলেন, ‘গণ আন্দোলনের তীব্রতা দেখে সরকার অতিমাত্রায় ভীত হয়ে দমন-পীড়ন, হামলা-মামলা, হত্যা-গ্রেফতার চালিয়ে শেষ রক্ষা পেতে চায়। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী দেয়, সব স্বৈরাচারের পতন হয়েছে গণআন্দোলনের মুখে।’

বিবৃতিতে যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ শীর্ষ নেতাদের মুক্তিরও দাবি জানান সালাহউদ্দিন।

তিনি অভিযোগ করেন, ‘অবৈধ সরকারের মন্ত্রীরা আলোচনার নামে ধুম্রজাল সৃষ্টি করছে। আলোচনার আগে সব নেতাকর্মীর মুক্তি দিয়ে মামলা প্রত্যাহার করে আলোচনা পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’

‘আমরা কোনো গোপন সংগঠন করি না। তলে তলে নয়, আলোচনা যদি হয়, তা প্রকাশ্যে হতে হবে। অবশ্যই আলোচনার পূর্বে নির্দলীয় সরকারের গণদাবি নীতিগতভাবে মেনে নিতে হবে’ বলেন তিনি।

যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ ও নির্বাহী কমিটির সদস্য বেলাল আহমেদকে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতিতে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভাঙচুর ও নেতাদের গ্রেফতার জঘন্যতম অপরাধ। এটি ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে।’

দলের যুগ্ম মহাসচিব আবদুল লতিফ জনি স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, ‘১৮ দলীয় জোটের ডাকা ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিনে সারাদেশে পুলিশ-আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় দুই জন নিহত হয়েছেন। কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হালিমকে হত্যা করার পর তার জানাজায় পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসী গুলি চালিয়ে বিএনপি নেতা জাকের হোসেনকে হত্যা করে।’

সালাহউদ্দিন জানান, শনিবার রাজধানীসহ সারাদেশে সাড়ে ৩শ’ বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গ্রেফতার হয়েছেন তিন শতাধিক নেতাকর্মী। প্রায় ৪ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিনে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছে দাবি করে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষ থেকে দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন,‘এ দেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষের দাবি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে সব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কামনা করে। আমরা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থার কথা সব সময়ে দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু সরকার আমাদের দাবি উপেক্ষা করে একদলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাকশাল কায়েম করতে চায়।’

এর আগে সকালে টেলিফোনে সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে বিএনপির নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখপাত্র সালাহউদ্দিন আহমেদ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, ‘হত্যা-গ্রেফতার-দমননীতির মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের চলমান আন্দোলন স্তব্ধ করা যাবে না।’

সালাহউদ্দিন বলেন, ‘সরকার বর্বরভাবে দমনীতির মাধ্যমে আন্দোলনকে স্তব্ধ করার জন্য নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে তারা ভয় দেখাচ্ছে। রাতের অন্ধকারে নয়াপল্টনের কার্যালয়ে অবৈধভাবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রবেশ করে যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ ২ জনকে গ্রেফতার করেছে। এ সময় দলের কার্যালয় ভাঙচুরও করা হয়। দেশের একটি বৃহৎত্তম রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে প্রবেশ করে পুলিশের এহেন বর্বরতা আওয়ামী লীগের পুরনো সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এর আগেও পুলিশ এ কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দেড়শতাধিক নেতাকমীকে গ্রেফতার করে। আমরা এ ধরনের অবৈধ কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘একতরফাভাবে নির্বাচন করতে সরকার সারাদেশে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়ের করেছে। তারা বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলায় জড়াচ্ছে। হত্যা, গ্রেফতার ও গুলিবর্ষণে নির্যাতিত নেতাকর্মীর মিছিলের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তারা গোটা দেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।’

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখপাত্র বলেন, ‘সব দমন-পীড়ন উপেক্ষা করে জনগণের দাবি বাস্তবায়নে অবরোধ কর্মসূচি সর্বাত্মকভাবে সফল করুন। কোনো স্বৈরাচারই দমন নির্যাতন চালিয়ে ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। এ গণবিচ্ছিন্ন সরকারও টিকে থাকতে পারবে না।’

সালাহউদ্দিন বলেন, ‘ সেই দিন বেশি দূরে নয়, যখন জনগণের কাছে তাদের পরাজয় ঘটবেই। এ সরকারের পতন অনিবার্য।’

(দ্য রিপোর্ট/টিএস/এমএইচ/এনডিএস/নভেম্বর ৩০,২০১৩)