চট্টগ্রামে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা
চিংড়ি মাছের ওজন বাড়াতে ‘জেলি’ ইনজেক্ট!
চট্টগ্রাম অফিস : হরেক রকম প্রতারণায় দিশেহারা নগরীর সাধারণ ক্রেতারা। অসাধু ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে ক্রেতা-ভোক্তারা একদিকে যেমন আর্থিক ক্ষতির শিকার হোন, তেমনি স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির আশংকায়ও পড়েন। ক্রেতাদের প্রতারিত করতে ব্যবসায়ীদের নিত্য নতুন কৌশল হতবাক করার মতো। এবার চিংড়ি মাছের ওজন বাড়াতে ‘জেলি’ ইনজেক্ট করার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এর আগে চিংড়ি মাছ বিদেশে রফতানি করার ক্ষেত্রে ওজন বাড়ানোর জন্য পেরেক ঢোকানোর কথা শোনা গিয়েছিল। এ নিয়ে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন এবং চিংড়ি রফতানি ব্যাহত হয়েছিল। এবার দেশি বাজারেই ক্রেতাদের ঠকানোর নতুন কৌশল বের করেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। নগরীর বিভিন্ন বাজারে মাছ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ফরমালিন ব্যবহারে এবং ওজনে কারচুপির অভিযোগ ছিল। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হলো ‘জেলি জাতীয় দ্রব্যের’ ব্যবহার! জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত এ ধরনের এক ব্যবসায়ীকে সনাক্ত করে জরিমানাও করেছে।
পবিত্র মাহে রমযান উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের বাজার মনিটরিং টিমের এক অভিযানে বৃহস্পতিবার নগরীর পাহাড়তলী বাজারের একটি মাছের আড়তে চিংড়ি মাছের ওজন বাড়াতে ‘জেলি জাতীয় পদার্থ’ মেশানোর প্রমাণ পেয়েছে।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুল ইসলামের নেতৃত্বে এবং বিএসটিআই, চেম্বার, মৎস্য অধিদপ্তর, ভোক্তা সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পাহাড়তলীর ‘এইচ ফিশিং স্টোর’র চিংড়ি মাছে জেলির উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছেন। এ কারণে ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক ইসলাম খানকে মাছ ও মাছজাত দ্রব্য (পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ১৯৯৭ এর ৪(৪) ও (৫) ধারায় ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই বাজারে লাইসেন্স না থাকায় মদিনা ফিশিং স্টোর নামক মাছ দোকানের মালিক এনামুল হককে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই আদালত নগরীর কর্নেলহাট কাঁচাবাজারে পণ্যের মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৩৮ ধারায় ৫টি দোকানকে মোট ৯ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন।
এদিকে নগরীর লালখান বাজার ও এনায়েতবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়েছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঝোটন চন্দ্রের নেতৃত্বে অপর একটি বাজার মনিটরিং টিম। এ সময় লাইসেন্স ছাড়াই বিএসটিআই’র মনোগ্রাম ব্যবহারের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে লালখান বাজারের পিটস্টপ রেস্টুরেন্ট এবং এনায়েতবাজার মোড়ের রয়েল বাংলা সুইটসকে। অবৈধভাবে বিএসটিআই মনোগ্রাম ব্যবহার করায় পিটস্টপকে ১৫ হাজার টাকা এবং রয়েল সুইটসকে ১২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
অপরদিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে বাজার মনিটরিংয়ের আরেকটি টিম নগরীর বকশীবাজারে অভিযান চালায়। এ সময় মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা এবং ওজনে কম দেওয়ায় একটি মাংসের দোকান, ২টি মুরগির দোকান ও একটি মুদি দোকানকে মোট ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চিংড়ি মাছের ওজন বাড়ানোর নতুন কৌশল রপ্ত করেছেন কিছু অসাধু মাছ ব্যবসায়ী। অধিক মুনাফার লোভে তারা চিংড়ি মাছের মাথার পরের অংশে জেলি জাতীয় পদার্থ ইনজেক্ট করে থাকে। ফলে মাছের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। এতে ক্রেতারা প্রতারিত হোন। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুল ইসলাম বলেন, ক্রেতাদের প্রতারণার লক্ষ্যে এবং অধিক মুনাফার লোভে চিংড়ি মাছের পেছনের অংশটিতে বিশেষ কৌশলে ইনজেক্ট (পুশ) করে জেলি জাতীয় ওই পদার্থ মেশানো হয়। বিষয়টি অভিযানকালে মৎস্য অধিদপ্তরের সহায়তায় সনাক্ত করা হয়েছে। ক্রেতাদের প্রতারণার এই কৌশলের দায়ে এক ব্যবসায়ীকে জরিমানাও করা হয়েছে।
তবে সংশ্লিষ্ট একাধিক অভিজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে পঁচা এমনকি পোকায় ধরা লইট্যা মাছকে কেমিক্যাল মেশানো পানিতে ধুয়ে ওই মাছ বাজারে বিক্রি করা হয়। এ ছাড়া পঁচে যাওয়া রুই কাতলা ধরনের মাছকে অধিকমাত্রায় ফ্রিজে রেখে শক্ত বানিয়ে ‘তাজা’ বলে সাধারণ ক্রেতাদেরকে প্রতারিত করা হয়।
এ সকল প্রতারণা থেকে ক্রেতাদের রক্ষায় মৎস্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা জরুরি বলে মনে করছেন ভোক্তা সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
(দ্য রিপোর্ট/কেএইচএস/এপি/এএল/জুলাই ০৪, ২০১৪)