শামীম রিজভী ও আবুল কালাম সোহাগ, দ্য রিপোর্ট : জিলাপি ছাড়া কি ইফতারি চলে! ইফতারির মেন্যুতে ছোট-বড় সবার কাছে জিলাপির রয়েছে বিশেষ চাহিদা। আর এ চাহিদা পূরণে ফুটপাত থেকে শুরু করে দেশের পাঁচতারকা হোটেল- সর্বত্রই তৈরি হচ্ছে হরেক রকমের জিলাপি। সবকিছু ছাড়িয়ে রোজাদারদের কাছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ইফতারবাজার চকবাজারের শাহী জিলাপির বিশেষ চাহিদা রয়েছে। স্বাদে অনন্য পুরান ঢাকার এ শাহী জিলাপি ও রেশমি জিলাপি ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে রাজধানী জুড়ে।

প্যাঁচ জিলাপি, চিকন জিলাপি, ‘আমিত্তি’সহ হরেক রকমের জিলাপি রয়েছে চকবাজারে। মাষকলাইয়ের ময়দায় তৈরি করা হয় আমিত্তি। দেখতে জিলাপির মত হলেও এতে প্যাঁচগুলো এলোমেলো থাকে। ভাজা হয় একটু কড়া করে। যা খেতে খুব মজাদার। নাম শুনলেই যেন জিভে জল চলে আসে। এ সব জিলাপি শুধু নামেই আলাদা নয়, এদের আকার ও স্বাদেও রয়েছে ভিন্নতা।

তবে ইফতারের পর এ খানদানি খাবারটি কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত তা নিয়ে আছে বেশ সতর্কবার্তা। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মনিরা আহসান দ্য রিপোর্টকে বলেন, শুধু ইফতারিতে নয়, অন্য সময়েও বাইরে থেকে কিনে জিলাপি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর। জিলাপি যে তেলে ভাজা হয় সে তেল স্বাস্থ্যসম্মত থাকে না। অন্যদিকে যে চিনির শিরায় ভিজিয়ে রাখা হয় তাও শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, জিলাপির রং বাড়াতে কাপড়ের রং ব্যবহার করা হয়। এতে মানুষের কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর যাদের ডায়াবেটিস ও হাইপ্রেসার আছে তাদের স্বাস্থ্যের জন্যও জিলাপি অস্বাস্থ্যের কারণ।

ড. মনিরা বলেন, জিলাপি ভাজার পরে যে চিনির শিরায় ভেজানো হয় তাও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ শিরায় খাটি চিনির মাত্রা খুবই কম থাকে। মিষ্টির মাত্রা বাড়াতে শিরায় এক ধরনের রাসায়নিক চিনি বা সাইক্লামেট ব্যবহার করা হয়।

চকবাজারের শাহী নেওয়াজ জিলাপি বিক্রেতা মো. আব্দুল আলীম দ্য রিপোর্টকে বলেন, এখানকার শাহী জিলাপি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। রাজধানী বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আসে এ জিলাপি কিনতে। বাপ-দাদার নিয়মেই ঘি, ডালডা আর তেলের মিশ্রণে জিলাপি তৈরি করে আসছি। সারা বছর জিলাপির ব্যবসা চললেও প্রতিবছর রমজান মাসে এর চাহিদা বেড়ে যায়। বিকেলের আগেই শাহী জিলাপি বিক্রি শেষ হয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, শাহী জিলাপি তৈরি করতে বড় করে প্যাঁচ দিতে হয়, জিলাপিও হয় বেশ মোটা। একেকটি শাহী জিলাপি আধা কেজি থেকে তিন-চার কেজির মত ওজন হয়ে থাকে। তবে জিলাপির প্রকারভেদে দাম একটু ভিন্ন। শাহী জিলাপি ১৬০ টাকা কেজি, রেশমি জিলাপি ১৪০ টাকা কেজি, নরমাল জিলাপি ১২০ টাকা কেজি।

আগে শুধু চকবাজারেই বিভিন্ন ধরনের জিলাপি বিশেষ করে শাহী জিলাপি পাওয়া গেলেও এখন রাজধানীর হোটেল স্টার, লাজিজ, এইচএফসি, পিন্টু মিয়ার শাহী ইফতারি, হোটেল আল-রাজ্জাক, রহমানিয়া, আলাউদ্দিন সুইটমিট, আম্বালা, খাজানা, ক্যাপিটাল কনফেকশনারি, স্কাইলার্ক, বেইলি বারবিকিউ, বেইলি পিঠাঘরসহ বিভিন্ন রেঁস্তোরার পাশাপাশি পাঁচ তারকা হোটেল সোনারগাঁও, রূপসীবাংলা, ওয়েস্টিন ও র‌্যাডিসনেও বিভিন্ন ধরনের জিলাপি পাওয়া যাচ্ছে।

অন্যান্য মিষ্টি সামগ্রীরও কমতি নেই চকবাজারে। মিষ্টি সামগ্রীর মধ্যে চকবাজারে পাওয়া যাচ্ছে ছানার মিষ্টি, ফিরনি, মিষ্টি শিঙ্গাড়া, মিষ্টি রোল, রস বড়ি, ফালুদা ইত্যাদি। নানান ফল আর মুখরোচক উপাদানে তৈরি বাহারি রকমের শরবতের মধ্যে রয়েছে চকের মাঠা, বোরহানি, লাবাং, লাচ্ছি, লেবুর শরবত, কাশ্মিরি শরবত, পেস্তা বাদাম দুধ ইত্যাদি।

(দ্য রিপোর্ট/এসআর-একেএস/এসবি/এনআই/জুলাই ০৫, ২০১৪)