দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ গ্রেফতারের পর দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব পেয়েছেন আরেক যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ। তবে সালাহউদ্দিন আহমেদ গ্রেফতারের ভয়ে গোপন স্থান থেকেই তার দায়িত্ব পালন করছেন।

জানা গেছে, শুক্রবার গভীর রাত (রাত সাড়ে ৩টার দিকে) গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এরপর থেকে দলের হাই কমান্ডের নির্দেশে সালাহউদ্দিন আহমেদ নতুন মুখপাত্র (দফতরের দায়িত্বে নিয়োজিত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

দায়িত্বপ্রাপ্তির পর থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদ শনিবার দু’দফায় সংবাদ মাধ্যমের উদ্দেশে দলের পক্ষে বিবৃতি দেন। একটি বিবৃতি দেন সকালের দিকে। অপরটি দেন সন্ধ্যায়। এছাড়া কয়েকটি ইলেকট্রনিক সংবাদ মাধ্যমে ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে বিবৃতি পাঠান তিনি।

বিবৃতি দু’টিই তিনি দেন বিএনপি বিটে কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। যে নম্বর থেকে তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের ফোন করেছেন তা তার ব্যবহৃত নিয়মিত নম্বর নয়। পরবর্তীতে ওই নম্বরে ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

দলীয় সূত্র জানায়, গ্রেফতার এড়ানোর জন্যই তিনি দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে এ কৌশল অবলম্বন করেন।

এদিকে সালাহউদ্দিন আহমেদের প্রথম বিবৃতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পরপরই শনিবার দুপুরে পুলিশ তার গুলশানের বাসায় তল্লাশি চালায়। কিন্তু পরে জানা যায়, পুলিশ যে বাসায় তল্লাশি চালিয়েছে, বাসাটিতে তিনি থাকেন না (রোড নম্বর ৭২, বাড়ি নম্বর ০৭, গুলশান-২)। গত কয়েকদিন আগে তিনি বাসাটি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। পুলিশ বা দলীয় সূত্র তার নতুন বাসার ঠিকানা নিশ্চিত করতে পারেনি। এর আগে কক্সবাজারে তার বাড়িতেও পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

অবশ্য ওই বিবৃতি দু’টি ছাড়া শনিবার সালাহউদ্দিন আহমেদের নামে বিএনপির আরও দু’টি বিবৃতি সংবাদকর্মীদের কাছে ই-মেইলে পাঠানো হয়। ওইসব বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন দলটির সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি। জনিও দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শুক্রবার আসেননি। তার সঙ্গেও সংবাদকর্মীরা যোগাযোগ করতে পারেনি।

বিএনপির নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখপাত্র সালাহউদ্দিন আহমেদ বিবৃতিতে বলেন, ‘গণআন্দোলনে তীব্রতা দেখে সরকার অতিমাত্রায় ভীত হয়ে দমন-পীড়ন, হামলা-মামলা, হত্যা-গ্রেফতার চালিয়ে শেষ রক্ষা পেতে চায়। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী দেয়, সব স্বৈরাচারের পতন হয়েছে গণআন্দোলনের মুখে।’

সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা কোনো গোপন সংগঠন করি না। তলে তলে নয়, আলোচনা যদি হয়, তা প্রকাশ্যে হতে হবে। অবশ্যই আলোচনার পূর্বে নির্দলীয় সরকারের গণদাবি নীতিগতভাবে মেনে নিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভাঙচুর ও যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদকে গ্রেফতারের ঘটনা জঘণ্যতম। এটি ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে।’

অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিনে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছে দাবি করে এজন্য দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষ থেকে দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখপাত্র বলেন, ‘সব দমন-পীড়ন উপেক্ষা করে জনগণের দাবি বাস্তবায়নে অবরোধ কর্মসূচি সর্বাত্মকভাবে সফল করুন। কোনো স্বৈরাচারই দমন নির্যাতন চালিয়ে ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। এ গণবিচ্ছিন্ন সরকারও টিকে থাকতে পারবে না।’

সালাহউদ্দিন বলেন, ‘সেই দিন বেশি দূরে নয়, যখন জনগণের কাছে তাদের পরাজয় ঘটবেই। এই সরকারের পতন অনিবার্য।’

(দ্য রিপোর্ট/টিএস/এনডিএস/এইচএসএম/ডিসেম্বর ০১, ২০১৩)