বিশ্বকাপ ফুটবল শুরুর আগে শিরোপার লড়াইয়ে ফেবারিটের তালিকায় অনেক দেশই ছিল। কিন্তু খেলা মাঠে গড়ানোর পর, আরও সুষ্পষ্টভাবে বললে, একটি করে ম্যাচ হওয়ার পর বোঝা যেতে থাকে, ফেবারিটের তালিকায় খুব বেশি নাম থাকার দরকার নেই। এই তালিকায় ব্রাজিল, নেদারল্যান্ডস, ইতালি, ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা, জার্মানিই আলোচনায় ওঠে আসে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন স্পেনও এই তালিকায় থাকার কথা ছিল। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই স্প্যানিশরা যেভাবে বিধ্বস্ত হয়, তাতে তাদের নিয়ে আশাবাদী হওয়ার সুযোগ কমে যায়।

অবশ্য এমনিতেই প্রতিটি বিশ্বকাপ ফুটবলেই এই নামগুলোই ঘুরে-ফিরে আলোচিত হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এই তালিকার বাইরের দলগুলো যে ওঠে আসে না, তা নয়। প্রায় প্রতিটি বিশ্বকাপে কোনো না কোনো দল চমক সৃষ্টি করে সেমিফাইনাল অব্দি পৌঁছে যায়। এবার আর সেই চমক কারো পক্ষে দেখানো সম্ভব হয়নি। স্পেন, ইতালি, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড থাকা সত্ত্বেও বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডের শুরুর দিকেই টপ-ফেবারিট হিসেবে স্থান পায় জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। শেষ পর্যন্ত এবারের সেমিফাইনালে ওঠে এসেছে এই চারটি দেশই। টপ-ফেবারিট হিসেবে চিহিৃত হলেই যে সেরা চার-এ দলগুলো থাকবে, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। যে কোনো সময়ে উলট-পালট হতে পারতো। তবে ভাগ্যের খেলায়ও ফেবার পেয়েছে টপ-ফেবারিটরা। কথায় বলে, ভাগ্য থাকে সাহসীদের পক্ষে। এবার এটা পুরোপুরিভাবে মিলে গেছে।

‘রাউন্ড অব সিক্সটিন’-এ চিলির বিপক্ষে রুদ্ধশ্বাস টাইব্রেকারে বিদায় নিতে পারত ব্রাজিল। মেক্সিকোর বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে জয়ের দেখা পায় নেদারল্যান্ডস। লড়াকু আলজেরিয়া ঘাম ছুটিয়ে দিয়েছিল জার্মানির। অতিরিক্ত সময়ের খেলায় জয়ী হয় জার্মানরা। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ের খেলায় জিততে নাভিশ্বাস ওঠে আর্জেন্টিনার। হেসে-খেলে যে দলগুলো সেমিফাইনালে পৌঁছেছে, তা কারো পক্ষেই বলার উপায় নেই। অবশ্য ভাগ্যের সহায়তা পাওয়াটাও তো খেলারই অংশ। এসব কিছু বিচার-বিবেচনা করেই নির্ধারণ করা হয় ফেবারিট বা টপ-ফেবারিট।

এখন টপ-ফেবারিটদের মধ্যে টপ লড়াই। এই লড়াইয়ে আছে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল, তিনবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি, দুইবারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা এবং তিনবারের ফাইনালিস্ট নেদারল্যান্ডস। সেমিফাইনালে যেহেতু ব্রাজিল-জার্মানি এবং আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস খেলবে, সেক্ষেত্রে ফাইনাল অল-ইউরোপ, অল-লাতিন কিংবা ইউরোপ-লাতিনও হতে পারে। বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে অল-লাতিন ফাইনাল হয়েছে মাত্র দু’বার। ১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে ও ১৯৫০ সালে ব্রাজিলে। দু’বারই চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে। এবার উরুগুয়ে নেই, আয়োজক হিসেবে আছে ব্রাজিল। ১৯৫০ সালের ফাইনালে ব্রাজিলের স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছিল উরুগুয়ে। আর এবার সেমি-ফাইনালের আগে দলের প্রধান কাণ্ডারি নেইমারকে হারিয়ে দিশেহারা ব্রাজিল। সেক্ষেত্রে অল-লাতিন ফাইনাল অর্থাৎ ফুটবলের ইতিহাসে প্রথমবার ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হওয়ার স্বপ্ন কি সত্যি হবে না? অল-লাতিন ফাইনালকে চোখ রাঙাচ্ছে ইতিহাসও। ১৯৫০ সালের পর প্রতিটি ফাইনালে খেলেছে ইউরোপের কোনো না কোনো দেশ। এবার কি তার ব্যত্যয় হবে? তেমন সম্ভাবনা তো দেখা যাচ্ছে না।

আর্জেন্টিনাকে নিয়ে আশাবাদ থাকলেও সংশয়ে ফেলে দিয়েছে ভঙ্গুর ব্রাজিল। বিশ্বকাপে অল-ইউরোপ ফাইনাল হয়েছে ৮ বার। এবারও তেমন সুযোগ আছে। কিন্তু কোয়ার্টার-ফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে কোস্টারিকা যেভাবে নাকানি-চুবানি খাইয়েছে, তাতে করে আশাবাদের লাগাম টেনে ধরতে হচ্ছে। এখন দেখা যাচ্ছে, জার্মানি আর আর্জেন্টিনাই কেবল ছুটছে বল্গা হরিণের মতো। এই দুই দেশের লাগাম টেনে ধরার মতো শক্তি, সাহস ও সামর্থ্য ব্রাজিল এবং নেদারল্যান্ডসের আছে কি? থাকলেও তা জানার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া গত্যন্তর নেই।

(দ্য রিপোর্ট/ডিএম/এএস/সিজি/এইচ/জুলাই ৬, ২০১৪)

dulalmahmud@yahoo.com