স্মৃতিতে কোডেসাল ও ম্যারাডোনা
ফিফা বিশ্বকাপ শুরুর ১০ দিন আগে; ২ জুন ছিল আলোচিত এক রেফারির জন্মদিন। তার নাম এডগার্ডো কোডেসাল। তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন ৮ জুলাই তারিখের জন্য। ১৯৯০ সালের এই দিনে তিনি পরিচালনা করেছেন আর্জেন্টিনা- জার্মানি ম্যাচ। ওই ম্যাচে কোডেসালের এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তে হেরে গিয়েছেন ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনাকে। সেই অশ্রুসজল ম্যারাডোনার কথা মনে করতেই অনেকেই কোডেসালের মণ্ডপাত করেন। আর্জেন্টাইনদের জন্য সেই ‘অশুভ’ দিনের দুই যুগপূর্তি হয়ে গেছে। অথচ এখনো ২৪ বছর আগের সেই ঘটনায় কোডেসাল অনুতপ্ত নন।
আর্জেন্টাইনদের ফুটবলারদের বিশেষত্ব সব সময় ফুটবলের পক্ষে খেলে যাওয়া। তাদের প্রথম কথা, দলের স্বার্থে নিজেকে উজাড় করে খেলা। দ্বিতীয় কথা, যা ইচ্ছা তাই ফুটবল মাঠে নিংড়ে দেওয়া। ১৯৯০ বিশ্বকাপে রেফারি ম্যারাডোনার বিপক্ষে গায়ের জোরে ইচ্ছামতো বাঁশি বাজিয়েছেন। ওই আসরে রেফারিদের পক্ষপাতিত্ব আচরণ সারাবিশ্বের মানুষ সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছে। অনেক ক্ষুব্ধ আর্জেন্টাইন ফুটবল অনুরাগী সেদিন অভিযোগ করেছিল- কোডেসাল শ্বশুরবাড়ি থেকে লাল পানি খেয়ে রাস্তায় নেমে যা-তা ব্যাপার কাণ্ড ঘটাল, তা কি ফিফা প্রেসিডেন্ট জোয়াও হ্যাভেলাঞ্জ বাহিনীদের সঙ্গে যোগসাজশে করা? হতে পারে। আবার নাও হতে পারে। সেই কোডেসাল গংরা আগের মতো সরাসরি খোলা ময়দানে বের হন না। ঘৃণিত ও অভিশপ্ত ব্যক্তিকে এখনও ফুটবল অনুরাগীরা ঘৃণা করে।
ম্যারাডোনার কারণেই ফুটবল বিশ্ব আজ দুই ভাগে বিভক্ত। কে সেরা- পেলে না ম্যারাডোনা? কালোমানিক পেলে তার নিজস্ব স্টাইলে খেলেছেন, নাটকীয় ভঙ্গিমায় বিশুদ্ধভাবে গোল করেছেন, সেই ঘরানার বিপরীত ম্যারাডোনা যুগে ফুটবল ধাঁচের খেলার মান ছিল বিস্ময়কর রকমের আধুনিকতায় ভরা। তার কালে কী সাংঘাতিক ঘটনার মধ্য দিয়ে ‘হ্যান্ড অব গড’ (২৫ জুন, ১৯৮৬) অপবাদ মাথায় নিয়ে এক যুবরাজকে খেলতে হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দুইজনকে দুইভাবে দলীয় খেলার চরিত্রে এক কাতারে নামানোর চেষ্টায় লিপ্ত ছিল। যে বিতর্কের সূত্রপাত এখানেই। কে কোন কালের শ্রেষ্ঠ ফুটবলার?
‘হ্যান্ড অব গডের’ যতটা আলোচনায়; তার চেয়ে বেশি আলোচনায় আসা উচিত ছিল জুলেরিমে ট্রফি জেতার ঘটনা। ইউরোপিয়ান রেফারিরা নিজেদের মান রক্ষা করতেই ইংল্যান্ডকে জিতিয়েছে। ম্যারাডোনার হাতময় গোলটিকে সিনেমার স্টাইলকেও হার মানিয়েছে। আর্জেন্টাইনরা দাবি করে- ১৯৯৪ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার তুখোড় খেলা দেখে ফিফা প্রেসিডেন্টের মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় হয়েছিল। ব্রাজিলকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দেখতে চাই, ম্যারাডোনাকে হটাও ..! এই ষড়যন্ত্রের ফল; ১৯৯৪ বিশ্বকাপ। ‘ডি’ গ্রুপ। দুর্দান্ত খেলছে ১৯৯০ আসরের রানার্সআপ আর্জেন্টিনা। দলনায়ক ম্যারাডোনা দুর্দান্ত খেলছেন। দলকে জিতিয়েছেন। প্রথম ম্যাচে গ্রিসকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দেয় ‘লা আলবিসেলেস্তে’রা। ম্যারাডোনা চোখ ধাঁধানো একটি গোল করেন। দ্বিতীয় ম্যাচে নাইজেরিয়াকে হারিয়েছে ২-১ গোলে। নিজে গোল না করালেও সতীর্থ ক্যানিজিয়াকে দিয়ে করিয়েছেন জোড়া গোল। ম্যাচটি শেষ হওয়ার পরেই এলো সেই চরম দুঃসংবাদ। নিষিদ্ধ ওষুধ ‘এফিড্রিন’ সেবনের অস্তিত্ব মিলেছে ১৯৮৬ বিশ্বকাপের মহানায়ক ম্যারাডোনার ডোপ টেস্টে। ফলে ফিফার রায়ে ওই বিশ্বকাপে সাসপেন্ড হন ম্যারাডোনা। ঘটনায় বড় রকমের ধাক্কা খায় গোটা আর্জেন্টিনা দল। হয়ে যায় ছন্নছাড়া। গ্যালারিতে বসে অশ্রুসজল চোখে ম্যারাডোনা দেখেছেন নিজ দলের হার। কোনোমতে দ্বিতীয় রাউন্ডে গেলেও রোমানিয়ার কাছে ৩-২ গোলে হেরে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই বিদায় নিয়েছে। অথচ বেশ কয়েক বছর পর প্রকাশিত হয়, যে যন্ত্রটি দিয়ে ম্যারাডোনার ডোপ টেস্ট করা হয়, সেটি নাকি ত্রুটিপূর্ণ ছিল!
কোডেসালকে ততদিন ভুলতে পারবেন না আর্জেন্টাইনরা; যতদিন আবারো বিশ্বকাপ শিরোপা জিতবে তারা। এবার লিওনেল মেসিরা কি পারবে সেই ২৪ বছরের অপ্রাপ্তি কালিমা ঘোচাতে?
(দ্য রিপোর্ট/আরকে/ওআইসি/সিজি/এজেড/এএস/জুলাই ০৭, ২০১৪)
rumelboss@gmail.com