নেতাকর্মীদের নির্ভরতার প্রতীক রিজভী
তারেক সালমান ও মাহমুদুল হাসান, দ্য রিপোর্ট : বিএনপির দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ চলমান আন্দোলনে নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছিলেন।
শুক্রবার গভীর রাতে রিজভী আটক হওয়ার পর দলের পক্ষে প্রকাশ্যে কথা বলার মতো কেউ নেই। তিনি দলের দাফতরিক দায়িত্বপালনসহ মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরেই। তার গ্রেফতারে নাজুক অবস্থায় পড়েছে বিএনপি। বিরোধী দলের আন্দোলন প্রতিহত করতে সরকারের কঠোর অবস্থানে দীর্ঘদিন ধরেই নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি কার্যত থাকছে অবরুদ্ধ। কোনো নেতাকর্মী স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারছেন না। এই প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে রিজভী আহমেদ প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে একটানা সেখানে অবস্থান করে চালিয়ে যাচ্ছিলেন দলের নানাবিধ দাফতরিক ও সাংগঠনিক কাজ। সঙ্গে প্রতিদিন এক বা একাধিকবার সংবাদ মাধ্যমের উপস্থিতিতে ঘোষণা করছিলেন সরকার বিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচিও।
পুলিশি গ্রেফতার আতঙ্কে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্য সিনিয়র নেতারা যখন রয়েছেন আত্মগোপনে, তখন রিজভী হয়ে উঠেছিলেন দলের সাধারণ নেতাকর্মীদের কাছে নির্ভরতার প্রতীক। সেই রিজভীই আবার গ্রেফতার হওয়ায় নেতাকর্মীরা হতাশ হয়েছেন। তার গ্রেফতারের পর শনিবার সারাদিন দলীয় কার্যালয়ে কয়েকজন অফিস স্টাফ ছাড়া আর কোনো নেতাকর্মীই প্রবেশ করতে পারেনি।
এব্যাপারে যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গিয়াস উদ্দিন মামুন দ্য রিপোর্টকে জানান, তিনি (রিজভী) দলের কাণ্ডারি হিসেবে কাজ করছেন। এই মুহূর্তে উনার মত নেতা দলের জন্য খুব দরকার। নিজে অনেক কষ্ট করে দিনের পর দিন দলের দায়িত্ব পালন করছেন। কর্মীদের যেভাবে চাঙ্গা রাখেন সেটা সারাজীবনের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, রিজভী আহমদকে গ্রেফতার করার জন্য বর্তমান সরকারকে একদিন জবাব দিতে হবে। তাকে গ্রেফতার করায় যুবদলের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মামুন অবিলম্বে রিজভীসহ সকল নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানান।
ছাত্রদলের দফতর সম্পাদক নাজমুল হাসান দ্য রিপোর্টকে বলেন, বর্তমান সরকারের দমন পীড়নের মধ্যে তিনি (রিজভী) সব সময় নেতাকর্মীদের উৎসাহ যুগিয়ে যাচ্ছেন। উনার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার সুযোগ পাচ্ছি। তিনি আমাদের নির্ভরতার প্রতীক।
নাজমুল জানান, তিনি গ্রেফতার হওয়ায় এই মুহূর্তে দলের জন্য খুব খারাপ পরিস্থিতি হয়েছে। তারপরও আন্দোলন চাঙ্গা রাখতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
৭২ ঘণ্টার অবরোধের শুরুতেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা, সারাদেশের চিত্র তুলে ধরার জন্য দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও প্রথমদিন তিনি দলীয় কার্যালয়ে আসেননি বা আসতে পারেননি। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি সালাহউদ্দিন আহমেদকে। শনিবার আড়ালে থেকেই তিনি কয়েকবার ১৮ দলের ডাকা অবরোধের চিত্র তুলে ধরেছেন গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতির মাধ্যমে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ১৮ দলীয় জোটের আন্দোলন কর্মসূচিতে হরতাল, অবরোধে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের শীর্ষ নেতারা রাজপথ কিংবা আড়ালে থেকে খুব একটা ভূমিকা পালন করেননি। যে কারণে তৃণমূল নেতাকর্মীরা অনেকটাই ক্ষুব্ধ। দলের সঙ্কট মুহূর্তে রিজভী যখন একা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ২৪ ঘণ্টা অবস্থান করে দাফতরিক কাজকর্মসহ একটার পর একটা কর্মসূচি ঘোষণা করে যাচ্ছিলেন, তখন দলের সিনিয়র নেতারা অনেকটাই ‘আত্মগোপনে’ ছিলেন। এমনকি দলের মুখপাত্র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবও প্রকাশ্যে আসেননি।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শুক্রবার গায়েবানা জানাজা শেষে তড়িঘড়ি করে মাথায় হেলমেট পরে মোটরসাইকেলে চড়ে ওই এলাকা ত্যাগ করেন ফখরুল। ওই রাতে রিজভী ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এছাড়া রাজপথে আন্দোলন চাঙ্গা রাখতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গেও তিনি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতেন।
রিজভী আহমেদ গত ৮ নভেম্বর রাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। এরপর থেকেই তিনি কার্যালয়ে স্বেচ্ছায় অবরুদ্ধ ছিলেন। তিনিই সব কর্মসূচি ঘোষণা করতেন এবং সাংবাদিকদের কাছে দলের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া জানাতেন।
বিএনপি কার্যালয়ে শনিবার রাত পর্যন্ত দলের কোনো সিনিয়ির নেতাদের আসতে দেখা যায়নি। সেখানে অবস্থান করছেন অফিস সহকারী, পিয়নসহ ৯ জন। এরা হলেন- অফিস সুপারিনটেন্ডেন্ট জলিল উদ্দিন, অফিস কেয়ারটেকার মো. রুস্তম আলী, অফিস স্টাফ মো. রফিকুল ইসলাম, মো. শামীম হোসেন, মো. আব্দুল গাফফার, মো. আজাদ, মো. নূর আলম লিটন, মো. ফারুক, মো. মঞ্জু।
(দ্য রিপোর্ট /টিএস-এমএইচ/এইচএসএম/ডিসেম্বর ০১, ২০১৩)