আমানউল্লাহ আমান, দ্য রিপোর্ট : জাতীয় পার্টিকে (জাপা) প্রধান বিরোধী দল ধরে নিয়েই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করার ছক তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসেবে জাতীয় পার্টির অনেক দাবি পূরণ করা হচ্ছে। সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রিসভায় তুলনামুলক বেশি সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা ও সর্বশেষ জাপার প্রাধান্যের এলাকায় আওয়ামী লীগের অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রার্থী দেওয়াও একই কৌশলের অংশ। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশ না নিলে এ ছকেই এগুবে আওয়ামী লীগ।

জাপাও বিরোধী দল হিসেবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই আগামী নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে কমপক্ষে এক শত আসনে তাদের ছাড় পাওয়ার জন্যে ক্ষমতাসীনদের কাছে প্রস্তাব করেছে জাপা। খুলনা ছাড়া বাকি ৬টি বিভাগে এ ছাড় চায় জাপা। তবে ক্ষমতাসীন দল সর্বোচ্চ ৬০/৭০টি আসনে ছাড় দিতে রাজি হয়েছে। দুই দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের আলোচনায় সর্বশেষ জাতীয় পার্টিকে সম্মানজনক আসনে ছাড় দেওয়ারও নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, জাপাকে ৬০/৭০টি আসনে ছাড় দেওয়া হবে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। দেখা গেছে, চূড়ান্ত এ তালিকায় উত্তরবঙ্গের অনেক জায়গায় শক্তিশালী প্রার্থী দেওয়া হয়নি। এ অঞ্চলের অনেক আসনে নতুন মুখ দেওয়া হয়েছে। জাপাকে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থেকেই এ আসনগুলোতে শক্তিশালী প্রার্থী দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে দলটি। এতে করে জাপাও সন্তুষ্ট। এইসব আসনে জাপা শক্তিশালী প্রার্থী দেওয়া নিয়ে ভাবছে।

এদিকে জাপার একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বেতারে তাদের দলের নির্বাচনী কার্যক্রম প্রচারের অনুমতি ও সময় চেয়েছেন। প্রতিদিন ৪৫ মিনিট সময় চান তারা। সুত্র জানায়, এটি প্রধান বিরোধী দল হিসেবে নির্বাচন করার একটি ইঙ্গিত তাদের।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ এ প্রতিবেদককে বলেন, জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধী দল হিসেবে নির্বাচন করলে অবশ্যই একটি সমঝোতা হবে। তারা কোন আসনে নির্বাচন করবে, আমরা কোন আসনে নির্বাচন করব এ ধরনের একটি সমঝোতা হবে।

তিনি আরও বলেন, এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে বিএনপির উপর। তারা নির্বাচনে এলে এক রকম হিসেব না আসলে আরেক রকম। এ পর্যায়ে বিএনপি নির্বাচনে আসার সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে সরকারি দলের এ নেতা বলেন, আমরা আশাবাদী।

জানা গেছে, দুর্বল বিরোধী দল হিসেবে থাকতে চায় না জাতীয় পার্টি এ যুক্তিতে ১শ’ আসনে ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব করেছে জাপা। তাই কমপক্ষে ১শ’ আসনে ছাড় দেওয়া হলে বিরোধী দল হিসেবে শক্তিশালী অবস্থানে দাঁড়াতে পারবে জাপা। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

আওয়ামী লীগ নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতা জানান, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না এমনটা ধরে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ অবস্থায় জাপাকে ছাড় দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারি দলে। তাই জাপার সঙ্গে আপস-রফাই আওয়ামী লীগের কাছে অন্যতম উপায়। জাপার সঙ্গে দর কষাকষিতে গিয়ে অথবা তাদের হারিয়ে নির্বাচনের পথে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায় না শাসক দল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য এই প্রতিবেদককে বলেন, জাতীয় পার্টির নানা রকম চাওয়া-পাওয়ার প্রস্তাব আছে আমাদের কাছে। সেগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। ছাড় দেওয়ারও নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, নির্বাচনী নানা হিসেবে-নিকেষে জাতীয় পার্টিকে ধরে রাখতেই হবে আওয়ামী লীগকে।

জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদও সমঝোতার ইঙ্গিত দিয়েছেন। সরকারি দল ও জাপার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে দর কষাকষির ইঙ্গিত দিয়েছেন জাপার অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদও। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

(দ্য রিপোর্ট/এইউএ/আইজেকে/এইচএসএম/ডিসেম্বর ০২, ২০১৩)