‘অবৈধ’ সরকারের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে বিএনপি
রাজু হামিদ, দ্য রিপোর্ট : বর্তমান সরকারকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিলেও সংসদ সদস্য পদ টিকিয়ে রেখেছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট। সংসদ সদস্য হিসেবে নিয়মিত বেতন-ভাতার পাশাপাশি শতভাগ সুযোগ-সুবিধাও ভোগ করছেন তারা।
বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য মোসাম্মৎ শাম্মী আক্তার দ্য রিপোর্টকে জানান, ১৯তম অধিবেশন চলাকালে তিনি সংসদ ভাতা তুলেছেন। তবে মাসিক বেতন সবশেষ কবে তুলেছেন তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি।
গত ২৪ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘২৭ অক্টোবর থেকে মহাজোট সরকার অবৈধ।’ সরকারকে ‘অবৈধ’ আখ্যায়িত করার পরও কেন বিএনপি পদত্যাগ করেনি এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন,‘সরকার এবং সংসদ এক কথা নয়; দু’টি আলাদা।
আমরা সরকারকে অবৈধ বলেছি, সংসদকে না। ওই সংসদ থেকে আমরা পদত্যাগও করিনি। সেক্ষেত্রে বেতন-ভাতা ভোগ করার অধিকার আমাদের রয়েছে। ’পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, প্রধান বিরোধী দল একদিকে মহাজোট সরকারকে ‘অবৈধ’ বলছে, অন্যদিকে এ সরকারের সব সুযোগ সুবিধাও ভোগ করছে। বিরোধী দলের সদস্যদের এমন দ্বিমুখী অবস্থানের সমালোচনা করেছেন ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যরা।
সরকারি দলের হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন বলেন, ‘এতে প্রমাণ হয়েছে বিএনপির সংসদ সদস্যদের নৈতিক-স্খলন ঘটেছে। অন্যথায় তাদের নেতা যা বলেছেন তারা তা বিশ্বাস করেন না। ‘সরকার অবৈধ’ এটা তিনি (খালেদা জিয়া) নিজেও বিশ্বাস করেন না।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের ওই বক্তব্য স্রেফ রাজনৈতিক ছিল বলে মনে করছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘তার ওই বক্তব্য সঠিক ছিল না।’
এদিকে ওই ঘোষণার পর থেকে আর সংসদ অধিবেশনে যোগ দেননি দলটির সংসদ সদস্যরা। সবশেষ তারা ২৩ অক্টোবর অধিবেশনে যোগ দেন। এরপর থেকেও সংসদ সদস্য ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন বেগম জিয়া এবং তার দলীয় এমপিরা।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, সংসদ সদস্যরা মাসিক সাড়ে ২৭ হাজার ৫শ’ টাকা বেতন। সংসদ সদস্যদের পারিতোষিক, নির্বাচনী এলাকার যাতায়াত ভাতা, ব্যয়নিয়ামক ভাতা, গাড়ি আমদানি সুবিধা, যানবাহন ভাতা, নির্বাচনী এলাকার অফিস খরচ ভাতা, ধোলাইসহ বিবিধ খরচ ভাতা, ভ্রমণের জন্য মাইলেস ভাতা, দৈনিক ও যাতায়াত ভাতা, ৭ দিনের অধিক বিরতিকালে ভ্রমণ ভাতা, দেশের অভ্যন্তরে ভ্রমণ ভাতা, বীমা সুবিধা, ঐচ্ছিক অনুদান, চিকিৎসা ভাতা এবং আবাসিক টেলিফোন ভাতা ভোগ করেন। আর বিরোধীদলীয় নেত্রী পূর্ণমন্ত্রীর সমমর্যাদায় ৫৩ হাজার ১শ’ টাকা বেতনের বাইরেও অতিরিক্ত নিরাপত্তারক্ষী, বাড়িতে অতিরিক্ত স্টাফ, সংসদ কার্যালয়ে অফিসসহ বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন।
গত ২০ নভেম্বর সংসদ বহাল রেখে ১৯তম অধিবেশন শেষ হয়েছে। এটিই বর্তমান সরকারের মেয়াদের শেষ অধিবেশন ছিল। তবে সংসদের মেয়াদ আগামী ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত বহাল থাকবে। এ সময় পর্যন্ত পুরো সুযোগ-সুবিধাই ভোগ করতে পারবেন সংসদ সদস্যরা।
তবে বর্তমান সংসদের শুরু থেকেই অধিবেশন বর্জন করে আসছেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। তারা গত পাঁচ বছরে অনুষ্ঠিত ৪১৮ কার্যদিবসের মধ্যে মাত্র ৭৬ দিন উপস্থিত ছিলেন। আর বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া উপস্থিত ছিলেন মাত্র ১০ কার্যদিবস। অধিবেশনে অনুপস্থিত থেকেই তারা নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলেছেন।
এছাড়া গত পৌনে ৫ বছরে ২৭১টি আইন পাস হলেও সেখানে তাদের অংশগ্রহণ ছিল সীমিত।
(দ্য রিপোর্ট/আরএইচ/এনডিএস/ডিসেম্বর ০২, ২০১৩)