মঙ্গলবার আসছে ভারতের ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ভারতের ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ মঙ্গলবার আসতে পারে। বিদ্যুৎ সঞ্চালনের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রীড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
এর আগে গত ৫ অক্টোবর ১৭০ থেকে ১৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমদানি শুরু হয়।
পিজিসিবি সূত্র জানায়, ভারত থেকে প্রাথমিক পর্বে আসা ২৫০ মেগাওয়াটের মধ্যে ১৭৫ থেকে ১৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ গত ২৫ নভেম্বর থেকে গত ৩০ নভেম্বর বন্ধ রাখা হয়। গত রবিবার থেকে আবার আমদানি শুরু হলে ১৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ থেকে ২৫০ মেগাওয়াট পর্যন্ত সঞ্চালন করা সম্ভব হয়। মঙ্গলবার থেকে চুক্তির পুরো ৫০০ মেগাওয়াটই আসবে বলে মনে করছেন পিজিসিবি সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ওপর কর শুল্ক প্রত্যাহার চায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। আমদানি করা বিদ্যুতের ওপর ২৯ ভাগ শুল্কারোপ করেছে বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রবিবার বিকেলে পিজিসিবির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী আলমগীর হোসেন দ্যা রিপোর্টকে বলেন, ‘আমাদের সব প্রস্তুতি শেষ। সবকিছু ঠিক থাকলে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে ফুললোডে সাবস্টেশন চালানো শুরু হতে পারে। সরকারি এবং বেসরকারি অংশ মিলিয়ে পুরো ৫০০ মেগাওয়াট সরবরাহ শুরু হবে।
পিডিবি এক চিঠিতে জানিয়েছে, লোকসান প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের পক্ষে শুল্ক দেওয়া সম্ভব নয়। শুল্ক মওকুফের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছে পিডিবি।
জানা যায়, ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ওপর রাজস্ব বোর্ড ২৯ শতাংশ বিভিন্ন ধরনের শুল্ক ও কর আরোপ করা হয়েছে। এরমধ্যে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ধরা হয়েছে ১৫ শতাংশ। আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ, অগ্রিম আয় কর ৫ শতাংশ ও অগ্রিম বাণিজ্য ভ্যাট ৪ শতাংশ। এর বাইরে সঞ্চালন ফি এর ওপর ১৫ শতাংশ এবং বিতরণ ফি এর ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে।
পিডিবি কর মওকুপের চিঠিতে বলেছে, পিডিবি একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান। বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয়ের তুলনায় অনেক কম দামে পিডিবি বিদ্যুৎ বিক্রি করে। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রিতে পিডিবি লোকসান করে।
অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত পিডিবির পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ ২২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আনতে রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক ও কর দিতে হলে লোকসানের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। এতে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি ছাড়া উপায় থাকবে না। যা গ্রাহকদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ জন্য কর মওকুফের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারতের এনটিপিসি দিবে। ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ব খাতের বিদ্যুৎ আমাদনির জন্য ২৫ বছরের ক্রয় চুক্তি হয়েছে। বাকি ২৫০ মেগাওয়াট ভারতের পাওয়ারপুল (বিদ্যুৎ বাজার) এর কাছ থেকে কিনতে হবে। দামের বিষয়টি ঠিক করবে ভারতের বিদ্যুতের মূল্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেন্ট্রাল ইলেকট্রিসিটি রেগুলেটরি কমিশন (সিইআরসি)। চুক্তি দরপ্রস্তাব অনুযায়ী বিদ্যুতের দাম পড়বে ৬ টাকা ৩৪ পয়সা। এর সঙ্গে ভারত এবং বাংলাদেশ অংশের হুইলিং চার্জ যুক্ত হবে।
চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ভারতের নয়া দিল্লিতে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানীর বিষয়ে ভারতের এনটিপিসি ও পিডিবি চুক্তি সই করে। বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য বাংলাদেশের কোম্পানি পাওয়ার গ্রীড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) লিমিটেডের সঙ্গে ভারতের পাওয়ার গ্রীড কোম্পানির মধ্যে চুক্তি সই হয়। এর আগে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ লক্ষ্যে ২০১০ সালে ভারতের বহরমপুর ও বাংলাদেশের ভেড়ামারায় সঞ্চালন লাইন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। ২০১২ সালের ডিসেম্বর নাগাদ এ বিদ্যুৎ আমদানি করার কথা ছিল।
(দ্য রিপোর্ট/ওএস/এমসি/এমডি/ডিসেম্বর ০১, ২০১৩)