কবি জীবনানন্দ দাশ
জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন সত্যানন্দ দাশগুপ্ত ও কবি কুসুমকুমারী দাশের প্রথম সন্তান। তার পূর্বপুরুষেরা ছিলেন ঢাকা জেলার বিক্রমপুর পরগণা নিবাসী। আজীবন আর্থিক অনটনের মাঝে সংগ্রাম করেছেন এই কবি।
জীবনানন্দের ডাকনাম ছিলো মিলু। ১৯০৮ সালে জানুয়ারিতে তাকে ব্রজমোহন স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি করানো হয়। এসময়েই তার বাংলা ও ইংরেজিতে রচনার সূচনা হয়, এছাড়াও ছবি আঁকার দিকেও তার ঝোঁক ছিল। ১৯১৫ সালে তিনি ব্রজমোহন বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগসহ ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯১৭ সালে ব্রজমোহন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ লাভ করেন। এরপর তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। ১৯১৯ সালে ইংরেজিতে অনার্সসহ বিএ পাশ করেন। ১৯২১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে দ্বিতীয় বিভাগসহ মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
ব্রহ্মবাদী পত্রিকার ১৩২৬ সনের (১৯১৯ সাল) বৈশাখ সংখ্যায় প্রথমবারের মতো তার লেখা একটি কবিতা প্রকাশিত হয়। কবিতাটির নাম ‘বর্ষা আবাহন’। ১৬ জুন ১৯২৫ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের মৃত্যুতে তিনি ‘দেশবন্ধুর প্রয়াণে’ শিরোনামে একটি কবিতা লিখেছিলেন যা বঙ্গবাণী পত্রিকার ১৩৩২ সনের শ্রাবণ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। মূলতঃ দীনেশরঞ্জন দাসের কল্লোল পত্রিকায় ১৩৩২ (১৯২৬) ফাল্গুন সংখ্যায় প্রকাশিত নীলিমা কবিতাটি দিয়ে আধুনিক বাংলা কবিতার ভূবনে তার আগমন।
জীবদ্দশায় তার ৭টি কবিতার সংকলন প্রকাশিত হয়। প্রথম প্রকাশিত বই ঝরাপালক (১৯২৭)। দ্বিতীয় সংকলন ধূসর পাণ্ডুলিপিতে (১৯৩৬) তাঁর কাব্য স্বকীয়তা ফুটে ওঠে। জীবদ্দশায় তার প্রকাশিত অন্যান্য সংকলন হলো বনলতা সেন (১৯৪২, কবিতাভবন সংস্করণ), মহাপৃথিবী (১৯৪৪), সাতটি তারার তিমির (১৯৪৮), বনলতা সেন (১৯৫২, সিগনেট প্রেস সংস্করণ) ও জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৫৪)।
সাড়ে আটশ’র বেশি কবিতা লিখলেও জীবদ্দশায় মাত্র ২৬২টি কবিতা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ও বইয়ে প্রকাশ করতে দিয়েছিলেন। এমনকি বিখ্যাত রূপসী বাংলা’র পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত থাকলেও প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। মৃত্যুর পর প্রকাশিত কবিতা সংকলনের মধ্যে রয়েছে রূপসী বাংলা (১৯৫৭), বেলা অবেলা কালবেলা (১৯৬১), সুদর্শনা (১৯৭৪), আলো পৃথিবী (১৯৮১), মনোবিহঙ্গম ও অপ্রকাশিত একান্ন (১৯৯৯)। ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা তার কবিতা ও রচনাসমগ্র প্রকাশ করেছে।
এছাড়া গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, লিটরেরি নোটস লিখেছিলেন প্রচুর- যার একটিও প্রকাশের ব্যবস্থা নেননি। সেগুলোর বড় অংশ তার মৃত্যু পরবর্তীকালে বই আকারে প্রকাশিত হয়।
ট্রাম দূর্ঘটনায় আহত হয়ে পরবর্তীতে মৃত্যু দূর্ঘটনা না আত্মহত্যা এই নিয়ে বির্তক আছে। বলা হয়ে থাকে একশ বছরে ট্রাম দুর্ঘটনায় কলকাতায় মৃত্যুর সংখ্যা মাত্র এই একটি।
(দিরিপোর্ট২৪/ওএস/ডব্লিউএস/জেএম/অক্টোবর ২২, ২০১৩)