সাগর আনোয়ার, দ্য রিপোর্ট : আবারও ভাঙনের মুখে মহাজোটের শরীক রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। কেন্দ্রীয় কমিটি ও পলিটব্যুরো সদস্যদের মতপার্থক্য দূর না হলে যেকোনো সময় দলটির একাংশ পার্টি থেকে বেরিয়ে যাবে বলে ওয়ার্কার্স পার্টি সংশ্লিষ্ট সূত্র দ্য রিপোর্টকে নিশ্চিত করেছে।

তবে ওয়ার্কার্স পার্টিতে চলমান সমস্যা আমলযোগ্য নয় বলে দাবি করেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মল্লিক। তিনি বলেন, ‘পার্টিতে মতপার্থক্য থাকতেই পারে। এ মতপার্থক্য খুব একটা জোরালো নয়। আমরা বিতর্ককে স্বাগত জানাই। কিন্তু কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ কারও নেই। আমরা মনে করছি ক্রাইসিসটা খুব একটা আমলযোগ্য নয়।’

ওয়ার্কার্স পার্টি সূত্রে জানা গেছে, লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি না করে পার্টির অধিকাংশ সদস্য একদলীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিপক্ষে। সংসদ না ভেঙে নির্বাচন ও নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা নিয়েও ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতাদের আপত্তি রয়েছে।

ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা জানান, ২৫-২৬ অক্টোবর ঢাকার সংসদ ভবন এলাকায় ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা হলেও তার সুরাহা এখনও হয়নি। কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত সুরাহা না করে রাশেদ খান মেনন এককভাবে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ক্ষুব্ধ পার্টির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতা। তারা পার্টির কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকছেন। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করছেন।

ওয়ার্কার্স পার্টির ১৫ সদস্যের পলিটব্যুরোর তিন সদস্য দ্য রিপোর্টকে জানান, তারা যে চেতনা নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টি গঠন করেছিলেন। বর্তমানে পার্টি সেদিকে নেই। পার্টি বর্তমানে কেন্দ্রীয় কমিটির মতামতে পরিচালিত হচ্ছে না।

একজন পলিটব্যুরো সদস্য দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘পার্টির অধিকাংশ জেলা কমিটি, ৫১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতা ও পলিটব্যুরোর একাধিক সদস্য ওয়ার্কার্স পার্টির সরকারের দালালিকে পছন্দ করছেন না। তারা সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী রাজনীতি যেমন দেখতে চান না তেমনি জনমতের বাইরে গিয়ে কিছু করতে চান না।’

এ বিষয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য ইকবাল কবির জাহিদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করার সময় এখনো হয়নি। সময় হলে আমরাই আপনাদের জানাবো।’

প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালে ওয়ার্কার্স পার্টির ‘সুবিধাবাদী নীতি’র বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টি পুনর্গঠন করে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি নামে নতুন দল গঠন করেন আলী আব্বাস ও সাইফুল হক।

এ বিষয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি যে উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা গঠন করেছিলাম নেতাদের সুবিধাবাদী নীতির কারণে ২০০৪ সালে আমরা পার্টি পুনর্গঠন করি।

সর্বশেষ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন প্রশ্নে ২০০৯ সালে দল থেকে বেরিয়ে যান ওয়ার্কার্স পার্টির জ্যেষ্ঠ পলিটব্যুরো সদস্য হায়দার আকবর খান রনো, কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক এম.এ সাত্তার, আজিজুর রহমান, অধ্যক্ষ আফসার আলী, হাবিবুর রহমান (মৃত), আনোয়ার আলী সরকার, নিমাই মণ্ডল, অধ্যাপক জিতেন্দ্র নাথ বাড়–ই, শাহরিয়ার মোহাম্মদ ফিরোজ ও ইশা খান।

পরে অধ্যাপক এম এ সাত্তারসহ একাংশ বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ নামের নতুন পার্টি গঠন করেন। হায়দার আকবর খান রনো, শাহরিয়ার মোহাম্মদ ফিরোজ ও ইশা খান যোগ দেন সিপিবিতে।

(দ্য রিপোর্ট/এসএ/এইচএসএম/ডিসেম্বর ০৩, ২০১৩)