ভারতীয় শিল্পীদের ভাবনায় বাংলাদেশের উচ্চাঙ্গসংগীত
মুহম্মদ আকবর, দ্য রিপোর্ট : বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ও কলকাতার আইটিসিএসআর-এর আয়োজনে শেষ হলো বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব ২০১৩। দ্বিতীয়বারের মতো রাজধানী ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে ২৮ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর উচ্চাঙ্গ সংগীতের এই উৎসবে প্রায় ৯৩ হাজার দর্শকের সামনে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিশ্ববরেণ্য শিল্পীরা সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানের ফাঁকে বাংলাদেশের উচ্চাঙ্গসংগীত প্রসঙ্গে ভারতীয় শিল্পীদের সঙ্গে কথা হয়। সেসব কথার চৌম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল :
খেয়াল, ঠুমরি, দাদরা, টপ্পা, কাজরি হোরি, চৈতী, ভজনে অসাধারণ দক্ষতার জন্য খ্যাত উপমহাদেশের কিংবদন্তী শিল্পী বিদূষী গিরিজা দেবী মনে করেন, ‘এখানে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে আমার জানা নেই। গুরুমূখী এই বিদ্যাকে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার প্রয়োজন। সেই সঙ্গে প্রয়োজন সংগীতের প্রতি আগ্রহ, দরদ ও চর্চা। সর্বোপরি সংগীতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে- তবেই উচ্চাঙ্গ সংগীতকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।’
বিশ্বখ্যাত সেতার শিল্পী ওস্তাদ রইস খান বলেন, ‘৪০-৫০ বছর আগে থেকেই বাংলাদেশে আসতে চেয়েছি। এতোদিনে আমার আশা পূর্ণ হয়েছে। এখানে এসে দেখলাম, এদেশের শ্রোতাদের উচ্চাঙ্গ সংগীতের প্রতি উৎসাহ অনেক বেশি। তারা অনুপ্রেরণা দিতে জানে। তাই এখানে সংগীত পরিবেশন করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। আর বাঙালিদের আমি অনেক ভালবাসি।’
শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রখ্যাত শিল্পী ও শিক্ষাগুরু পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী কথা প্রসঙ্গে বলেন, ‘বাংলাদেশে এখনও যাত্রা, নাটক ও গান চলমান। এদেশের প্রতিটি ঘরেই সংগীতের অধিষ্ঠান আছে। এই বাংলার মাটি বহু গানের জন্ম দিয়েছে। বাংলার লোকসংগীত থেকেই রাগসংগীতের সৃষ্টি। এ জন্য বাংলার মানুষ অহংকার করতে পারে। নিজের সংস্কৃতিকে পেছন ফিরে দেখার জন্য বাঙালিদের তৃষ্ণা অনেক। আমি মনে করি রাগ বিলাবল হলো বাংলার কীর্তন। কখনও এর সঙ্গে তীব্র মাধ্যম হিসেবে যুক্ত হয়ে রাগ কল্যাণ, আবার কখনও কোমল নিখাঁদ যুক্ত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে রাগ খাম্বাজ, মূলে কিন্তু বিলাবল আছেই। যেমন লালন সাঁইয়ের গানগুলোও বিলাবলে পড়বে। গীতগোবিন্দ রচয়িতা জয়দেব বা শ্রী চৈতন্যর গানেও বিলাবল আছে। আসলে আমাদের রাগ সংগীত এসেছে মাটি থেকে। ’
পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর সুযোগ্য কন্যা কৌশিকী চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে এ উপমহাদেশের সংগীতের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে ভারতের রাগ সংগীত এবং বাংলাদেশের লোকসংগীত। বহুরাগের মৌলিক রূপ নেওয়া হয়েছে এদেশের ফোক থেকে। বাংলাদেশে এতো বড় উচ্চাঙ্গ সংগীতের আসর দেখে আমি রীতিমত বিস্মিত। যদি এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকে তবে বাংলাদেশে এ শিল্পের ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জল।’
ভরতনাট্যমের প্রখ্যাত শিল্পী আলারমেল ভাল্লি বাংলাদেশের উচ্চাঙ্গ সংগীতের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে বলেন, ‘এদেশের মাটি, আকাশ ও বাতাসে শেকড় সন্ধানী সংস্কৃতির গন্ধ অনুভব করি। এমন একটি দেশে অতিথি হিসেবে আগমনটাও কম গৌরবের নয়। বেঙ্গল ও আইটিসির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ ধরনের আসর অব্যাহত চালিয়ে যাওয়া উচিত।’
সরোদ বাদক রাজরূপা চৌধুরী বলেন, ‘আমি বিবাহসূত্রে এদেশের পুত্রবধূ; বলা যায় এখন আমি বাংলাদেশেরই মানুষ। এখানে আগমনের পর থেকেই এখানকার মানুষ সম্পর্কে ক্রমাগতই ধারণা পাল্টাচ্ছে। যেমন বাংলাদেশের মানুষ তেমনই তাদের সংগীত পিপাসা। মননশীল যেকোনো শিল্পের সম্ভাবনা এদেশে প্রখর।’
(দ্য রিপোর্ট/এমএ/আইএফ/এপি/ডিসেম্বর ০২, ২০১৩)