সোনালী ব্যাংকের ২৪৪০ কোটি টাকার দুর্নীতির নথি তলব
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংকের ৫টি শাখা থেকে হাতিয়ে নেওয়া প্রায় দুই হাজার ৪৪০ কোটি টাকা জালিয়াতির নথিপত্র তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার দুদকের সিনিয়র উপ-পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীর স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও-র কাছে পাঠানো হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, সোনালী ব্যাংকের ৫টি শাখায় মোট প্রায় দুই হাজার ৪৪০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে নথিগুলো তলব করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকের লোকাল অফিসে প্রায় ১৬০০ কোটি টাকা, বৈদেশিক বাণিজ্য করপোরেট শাখায় প্রায় ১০০ কোটি টাকা, চট্টগ্রামের লালদিঘি করপোরেট শাখায় প্রায় ৯০ কোটি টাকা, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ করপোরেট শাখায় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা এবং নারায়ণগঞ্জ করপোরেট শাখায় প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার জালিয়াতি নথিপত্র রয়েছে।
যেসব প্রতিষ্ঠানের নথিপত্র তলব করা হয়েছে -
লোকাল অফিস : ১৬০০ কোটি টাকা জালিয়াতি
আলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ, কেএনএস ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ, ক্যাংসান ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ, থারমেক্স টেক্সটাইল, ইকো কটন মিলস, রহিমা ফুড করপোরেশন, এপেক্স উইভিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলস লিঃ এবং পদ্মা পলিকটন নীট ফেব্রিক্স লিঃ এর ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর তারিখ ভিত্তিক ক্যাশ এলসি ও ডেফার্ড এলসির বিপরীতে সৃষ্ট পিএডি সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র।
২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সময়ে আলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ, এপেক্স উইভিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলস লিঃ, পদ্মা পলিকটন নীট ফেব্রিক্স লিঃ, কেএনএস ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ এবং পিপুসীড টেক্সটাইল লিঃ এর নামে ফোর্সড লোন সংক্রান্ত তথ্য ও রেকর্ডপত্র।
ওই সময়ে আলটেক্স ফেব্রিক্স ও অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ এর বৈদেশিক বাণিজ্য লেনদেনের মাধ্যমে সৃষ্ট আইবিপি সংক্রান্ত তথ্য ও রেকর্ডপত্র। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল সময়ে নগদ সহায়তা পরিশোধ সংক্রান্ত তথ্য, রপ্তানি বিল বা ডিএ রপ্তানি বিল ক্রয় সংক্রান্ত তথ্য।
বৈদেশিক বাণিজ্যক রপোরেট শাখা : প্রায় ১০০ কোটি টাকা জালিয়াতি
মেসার্স বেরিল এ্যাপারেলস লিঃ এর রপ্তানি বিল, বিএল, কমার্শিয়াল ইনভয়েস, প্যাকিং লিস্ট, ইএক্সপি, ভাউচার, ফরোয়াডিং লেটার, রপ্তানি বিল সংশ্লিষ্ট বিটিবিএল নম্বর, এলসি মূল্য, বর্তমান অবস্থাসহ সকল তথ্য।
ওই শাখার গ্রাহক মেসার্স ইউসুফ অ্যান্ড কোং এর বিপরীতে স্থাপিত স্থানীয় ডেফার্ড ক্যাশ এলসিসমূহ সংক্রান্ত দফতর প্রতিবেদন, একসেপ টেন্স, পরিদর্শন প্রতিবেদন, প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদনসহ অন্যান্য সকল নথি।
চট্টগ্রামের লালদিঘি করপোরেট শাখা : প্রায় ৯০ কোটি টাকা জালিয়াতি
এভারেস্ট প্রাইভেট লিঃ, ইউরো এ্যাপারেলস লিঃ, এ্যাপারেল ফেয়ার লিঃ, মুক্তা এ্যাপারেলস লিঃ, লিবরা ফ্যাশন ওয়্যার লিঃ, বিউমন্ড গার্মেন্টস লিঃ, হোসেন এ্যাপারেলস লিঃ, মেসার্স একমি টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস লিঃ, ইমন এ্যাপারেলস লিঃ, মডেল এ্যাপারেলস লিঃ, ইউনাইটেড ফ্যাশন লিঃ, ডিউড্রপস এ্যাপারেলস লিঃ, রোজেন্ট গার্মেন্টস লিঃ, কোব এসোসিয়েটস লিঃ, এমাইকো ফেব্রিক্স লিঃ, তন্নী নীট ওয়্যার লিঃ, মোসুমী টাওয়েলস লিঃ এর জমি বন্ধকী, ঋণ বিতরণসহ সকল রেকর্ডপত্র।
চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ করপোরেট শাখা : প্রায় ৩০০ কোটি টাকা জালিয়াতি
ইমাম ট্রেডার্স, জাসমির ভেজিটেলব অয়েল লিঃ, একে এন্টারপ্রাইজ, মহিউদ্দিন করপোরেশন, কামাল এন্টারপ্রাইজ এর ২০১০ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সময়ে এলটিআর সংক্রান্ত তথ্য এবং অর্কিড ফ্যাশন এর বিপরীতে ফোর্সড লোন সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র।
নারায়ণগঞ্জ করপোরেট শাখা : প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা জালিয়াতি
মেসার্স রূপসী গ্রুপের (রূপসী নীট ওয়্যার, রূপসী ফেব্রিক্স লিঃ, রূপসী এমব্রয়ডারী, রূপসী ডিজাইন অ্যান্ড প্রিন্টিংস ও মেসার্স সালমান নীট কম্পোজিট লিঃ) ২০১০ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সকল বিটিবি/ক্যাশ এলসি সংক্রান্ত প্রতিবেদন, দফতর প্রতিবেদন, রপ্তানী বিল সংক্রান্ত কমার্শিয়াল ইনভয়েস, ইএক্সপি, বিএল, ফোর্সড লোন ও নগদ সহায়তাসহ সকল নথিপত্র। এছাড়া ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সময়ে উপ-পরিচালক মাহমুদুল হকের তত্ত্ববধানে পরিচালিত নিরীক্ষা প্রতিবেদন।
এছাড়া ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকের ওই পাঁচটি শাখার ওপর পরিচালিত বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের পরিদর্শন রিপোর্টও চাওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সোনালী ব্যাংকের বঙ্গবন্ধু এভিনিউ করপোরেট শাখা, হোটেল শেরাটন করপোরেট শাখা (হলমার্ক কেলেঙ্কারি), আগারগাঁও করপোরেট শাখা এবং গুলশান শাখায় শত শত কোটি টাকা দুর্নীতি দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট২৪/এইচবিএস/এমডি/ডিসেম্বর ০৩, ২০১৩)