এরশাদের নির্বাচন বর্জন : ১৮ দলের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : নির্বাচন থেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরে দাঁড়ানোর ঘোষণায় ১৮ দলীয় জোটের নেতারা সতর্ক বক্তব্য দিয়েছেন।
কেউ কেউ তার এ ঘোষণায় আস্থা রাখছেন না। আবার কেউ কেউ তার এ সিদ্ধান্ত ১৮ দলীয় জোটের নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনের নৈতিক বিজয় হিসেবে দেখছেন। তবে সবাই বলছেন, এরশাদের নির্বাচন বর্জনের এ ঘোষণা সরকারের একতরফা নির্বাচনের চেষ্টা আবারও প্রমাণ করলো।
বিএনপি চেয়ারপাসনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী দ্য রিপোর্টকে বলেন, এরশাদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন, তা এখনও আমি বিশ্বাস করি না। করতে পারি না। কারণ মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন আসতে এখনও কয়েকদিন বাকি আছে। ওই দিনের আগেতো তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহারও করতে পারছেন না। তাই উনি কি করেন, দেখতেও জানতে আমাদের সেদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
এরশাদের এ বক্তব্যের বিষয়ে কিছু বলা যেত, যদি তিনি তার লোকদের এ সরকারের মন্ত্রী পরিষদ থেকে পদত্যাগ করাতেন। তাহলে মানুষ কিছুটা হলেও বিশ্বাস করতে পারতো। তবে, তার সিদ্ধান্ত যদি সত্যি হয়, তাহলে ‘দিস ইজ মোস্ট ওয়েলকাম।’
এরশাদের এ ঘোষণায় সরাসরি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান। তিনি দি রিপোর্টকে এ ব্যাপারে বলেন, দেশে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে যে সরকার বিরোধী আন্দোলন চলছে, তা বিএনপির একার কোনো আন্দোলন নয়। এটা দেশবাসীর আন্দোলন। গণআন্দোলন। দেরিতে হলেও এরশাদের বোধোদয় আমাদের আন্দোলনকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নেবে বলে আমি মনে করি।
আজম বলেন, তবে এরশাদের এ ঘোষণা পরিপূর্ণতা পাবে বর্তমান মেয়াদ উত্তীর্ণ অবৈধ সরকারের মন্ত্রী পরিষদ থেকে তার লোকজন পদত্যাগ করলে।
১৮ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) চেয়ারম্যান শফিউল আলম প্রধান দি রিপোর্টকে বলেন, নিঃসন্দেহ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এই ঘোষণা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে যে আন্দোলন তার নৈতিক বিজয়। এরশাদের এ ঘোষণায় নিঃসন্দেহে আমাদের আন্দোলনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা শামছুজ্জামান দুদু দ্য রিপোর্টকে বলেন, এরশাদ যদি নির্দলীয় সরকার এবং জনগণের সাথে থাকেন, তাহলে তার নির্বাচন বর্জনকে স্বাগত জানাই। কিন্তু এরশাদের অতীতের কর্মকাণ্ডের কারণে তার কথার ওপর আমাদের কোনো আস্থা নেই। তাই ভবিষৎই বলে দেবে তিনি কোন দিকে যাচ্ছেন।
লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান দ্য রিপোর্টকে বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। দেরিতে হলেও স্বৈরাচার এরশাদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাড়িয়েছেন। নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোর তার এ ঘোষণা ১৮ দলীয় জোট বিজয় হিসেবে দেখছে।
ইরান বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। তাদের অধীনে দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভবও নয়। ১৮ দল এ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে না। বরং তা প্রতিহত করবে।
প্রসঙ্গত, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাজধানীর বনানীতে তার নিজ কার্যালয়ে মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টি আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম সব দল অংশগ্রহণ করলে আমি নির্বাচনে যাবো। যেহেতু সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি তাই জাতীয় পার্টিও এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। আমি আমার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছি।’
(দ্য রিপোর্ট/ টিএস-এমএইচ/এমডি/ ডিসেম্বর ০৩, ২০১৩)