দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : অবরোধ চলাকালে সারাদেশে সোমবার সন্ধ্যা থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ছয়জন। এছাড়া আহত হয়েছেন ৮২৩ জন। বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অবরোধের ওই সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ৩৯৪ জনের অধিক, গ্রেপ্তার হয়েছেন ৩৯৭ জনের অধিক। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা তিন হাজার। ভ্রাম্যমান আদালতে সাজা হয়েছে ছয়জনের।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপির মুখপাত্র সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অবৈধ সরকারের নিষ্ঠুর জুলুম-নির্যাতনের পরেও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের আহ্বানে চলমান শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচির চতুর্থ দিন স্বত:স্ফূর্ত ও সাফল্যজনকভাবে পালিত হয়েছে। এজন্য ১৮ দলীয় জোট নেতা খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে দেশবাসী এবং বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীকে আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাই।

তিনি বলেন, রাজপথের শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাদের শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করছি এবং গ্রেফতার হওয়া সকল নেতাকর্মীর নি:শর্ত মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে সালাহউদ্দিন আহমেদ সারাদেশে হত্যা, নিপীড়ন ও নির্যাতনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন।

চাঁদপুর জেলা : বিএনপি ও ১৮ দলের নেতৃত্বে চাঁদপুর সদর থেকে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি কালিবাড়িতে পৌঁছালে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ করলে ছাত্রদল নেতা রতন ও ছাত্রশিবির নেতা সিয়াম নিহত হয়। জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শরীফ মো. ইউনুস, যুগ্ম-সম্পাদক শফিক দেওয়ান, আবুল বাসার, মুমিন, ছাত্রনেতা সাদ্দাম, মাহফুজ, যুবদল নেতা কামরুল ইসলাম সোহেল, মুমিন হাওলাদার, সুমন, বাসার, শাহেদসহ ৪২ জন গুলিবিদ্ধ হয় এবং তিন শতাধিক আহত হয়।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা : সিতাকুণ্ড থানা মুরাদপুর ইউনিয়নে অবরোধ চলাকালে বিএনপি ও ১৮ দলের যৌথ উদ্যোগে একটি মিছিল বের হলে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা গুলিবর্ষণ করে। এতে সাবেক যুবদল নেতা ও বর্তমান স্বেচ্ছাসেবক দলের মুরাদপুর ইউনিয়নের সিনিয়র সহ-সভাপতি রাসেল গুলিতে নিহত হয়। আহত হয় শতাধিক।

সাতক্ষীরা জেলা : অবরোধের সমর্থনে ১৮ দলের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হলে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা গুলি চালায়। এতে ১৮ দলীয় জোট নেতা আজিজুল ইসলাম নিহত হয়। পুলিশ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা স্কুল থেকে আসা দশম শ্রেণীর ছাত্র হোসেন আলীকেও গুলি করে হত্যা করে। দুই শতাধিক আহত এবং ৭০ জন গুলিবিদ্ধ হয়।

খুলনা জেলা : অবরোধের সমর্থনে শান্তিপূর্ণভাবে বিএনপি ও ১৮ দলের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হলে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা পেছন থেকে গুলি করে। এতে বিএনপি নেতা ইয়াসিন নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয় বিএনপি নেতা কিবরিয়া, আমিনুলসহ প্রায় ৩০ জন। এছাড়া আহত হয় প্রায় ৭০ নেতাকর্মী। গত দুদিন আগে বিএনপি নেতা ইসলামকে পুলিশ গ্রেফতার করে। আজও তার পরিবার জানেন না বিএনপি নেতা ইসলাম কোথায় আছে।

মিছিল থেকে বিএনপি নেতা হাদিউজ্জামান হাদি, আসলাম, পারভেজ, স্বেচ্ছাসেবক দল রিপন, ছাত্রনেতা ইমরানসহ ১০ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। বিএনপি নেতা টিটুকে ভ্রাম্যমান আদালত এক মাসের কারাদণ্ড দেয়।

কুমিল্লা উত্তর : দাউদকান্দি গড়িপুর ইউনিয়নে অবরোধের সমর্থনে মিছিল করার সময় পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা যৌথভাবে বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিলে গুলিবর্ষণ করে। ৩ নং ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর গুলিতে নিহত হয়। গুলিতে প্রায় ১৪০ জনের মতো আহত হয়।নোয়াখালী জেলা : নোয়াখালী মাইজদি দপ্তরহাটে অবরোধের সমর্থনে শান্তিপূর্ণ মিছিলে সর্বস্তরের জনগণ অংশগ্রহণ করে। এতে পুলিশি হামলায় এক বৃদ্ধা পুলিশের ভয়ে দৌঁড়ে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হয়নি। এ ঘটনায় ৩০ জন আহত হয়।

ফেনী জেলা : অবরোধের সমর্থনে একটি মিছিল বের হলে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা হাসান মাহফুজ সবুজসহ ১০ জনের অধিক নেতাকর্মী আহত হয়। ফেনী ৩ আসনের এমপি প্রার্থী সন্ত্রাসী আবুল বাশারের নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী দাগনভূঞা উপজেলার সিলোনিয়া বাজারে আক্রমণ করে বৃষ্টির মতো গুলি ছোঁড়ে। এতে শতাধিক সাধারণ জনগণ গুলিবিদ্ধ হয় এবং বহু দোকানপাটে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে গ্রামবাসীর প্রতিরোধের মুখে বাশারসহ সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।

বাগেরহাট : অবরোধের সমর্থনে মিছিল করার সময় পুলিশ বিএনপির নেতা ডা. আনোয়ার, মোজাফফর হোসেন, ছাত্রদল নেতা রফিকুল ইসলাম, শামীম শেখ, রাজু বিশ্বাস, শ্রমিক নেতা নজরুল ইসলামসহ ২০ জনকে গ্রেফতার করে।

মাগুরা জেলা : শান্তিপূর্ণ মিছিল করার সময় জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহম্মেদ, যুবদল নেতা সাবু, এনাম, ছাত্রদল নেতা তন্ময়সহ ১০ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

নড়াইল জেলা : অবরোধের সমর্থনে মিছিল করার সময় আবুল হাসানসহ সাতজনকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

ঝিনাইদাহ : অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের করলে মিছিল থেকে বিএনপি নেতা হাসান চৌধুরী, মতিয়ার মঞ্জু, আব্দুল লতিফ, ছাত্রদল নেতা এরশাদসহ ১০ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

মুন্সিগঞ্জ জেলা : লৌহজং থানায় অবরোধের সমর্থনে যুবদলের একটি মিছিল বের হলে পুলিশ মিছিল থেকে সুমন শেখসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করে।

ঢাকা জেলা : ধামরাই উপজেলা শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের বাধার মুখে যুবদলের সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান আমিনকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

কেরানীগঞ্জ থানা বিএনপি নেতা শাহআলমকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

নারায়নগঞ্জ জেলা : অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের হলে তারাবো পৌরসভা যুবদল নেতা মোয়াজ্জেমসহ সাতজনকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

আড়াইহাজার থানার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবুসহ চারজনকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

ফরিদপুর জেলা : অবরোধের সমর্থনে শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের হামলায় যুবদল নেতা পাখি, নজরুল, মুমিনসহ পুলিশ ছয়জনকে গ্রেফতার করে।

টাঙ্গাইল জেলা : অবরোধের সমর্থনে একটি মিছিল বের হলে পুলিশের হামলায় ছাত্রদল নেতা বিপ্লব, কৃষকদল নেতা শরাফতসহ সাতজন গুরুতর আহত হয়। শরাফতের বাড়িতেও পুলিশ হামলা চালায়।

মেহেরপুর জেলা : ১৮ দলের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ যুবদল নেতা হিরু, জামাত নেতা শরীফসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করে।

পাবনা জেলা : অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের করলে যুবদল নেতা আরিফ, সাফিনসহ পাঁচজনকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

জামালপুর জেলা : অবরোধের সমর্থনে শান্তিপূর্ণ মিছিল বের হলে মিছিল থেকে বিএনপি নেতা আব্দুর রাজ্জাক, মুসলিম উদ্দিন, রিপন, আরিফ ও বাবুলকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পরে ভ্রাম্যমান আদালত তাদের এক মাস করে কারাদণ্ড দেয়। জেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক লিয়াকত আলী, জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, শহর বিএনপি কমিশনার কাজল, শ্রমিকদল নেতা সুমন, শাহীন, মান্নান ছাত্র নেতা মোফাজ্জল, স্বেচ্ছাসেবক আবু হোসেনসহ ৩০ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

শেরপুর জেলা : অবরোধের সমর্থনে একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল বের হলে ছাত্রনেতা শফিকুল, স্বপন, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সুজা, যুবদল নেতা দিনু, শ্রমিকদদল নেতা মোশারফ, ইমন, ছাত্রদলের তৌফিকসহ পুলিশ ২০ জনকে গ্রেফতার করে।

নেত্রকোণা জেলা : শান্তিপূর্ণ মিছিল করার সময় পুলিশ মিছিল থেকে বিএনপি নেতা সুলতান, সিডান, রুক্কু মিয়া, ফারুক, আরেফ, সাইফুল, আবুল বাসার, জানুসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করে।

কিশোরগঞ্জ জেলা : উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শামীমসহ আটজনকে পুলিশ গ্রেফতার করে এবং শতাধিক আসামি করে দুটি মামলা হয়।

মাদারীপুর জেলা : অবরোধের সমর্থনে কালকিনি উপজেলা শান্তিপূর্ণ মিছিল করার সময় যুবদল নেতা মামুন, বিএনপি পৌর ওয়ার্ড সভাপতি হাবিবুর রহমান, শ্রমিকদল নেতা মজিবুর রহমান, ছাত্রদল নেতা ফিরোজ, স্বজলসহ ১০ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

ঝালকাঠি জেলা : অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের করার সময় বিএনপি নেতা সেলিম, যুবদল নেতা আহসানসহ ১০ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

রাজশাহী জেলা : কাঠাকালি থানার যুবদল নেতা মানিক, সিরাজুল, হিমাদ্রি, সিরাজসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা হয়।

চারখাট থানার যুবদল সভাপতি বিপ্লব, পৌর সভাপতি জহুরুল, সাধারণ সম্পাদক হাফিজুল, রাজিব, মাহবুব, জীবন, পারভেজসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা হয়।

নীলফামারী : অবরোধের সমর্থনে একটি মিছিল বের করার সময় যুবদলের পৌর ৯ নং ওয়ার্ড সভাপতি বাবু, রাশেদ, সুমনসহ পুলিশ ৫ জনকে গ্রেফতার করে।

ঢাকা মহানগর :

রামপুরা থানা : শান্তিপূর্ণ মিছিল থেকে পুলিশ যুবদল নেতা তন্ময়সহ দুজনকে গ্রেফতার করে এবং পাঁচজন আহত হয়।

খিলগাঁও থানা : শান্তিপূর্ণ মিছিল বের হলে পুলিশের গুলিতে পলাশ আহত হয়।

ওয়ারী থানা : অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের হলে মানিকসহ তিনজনকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

সূত্রাপুর থানা : অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের হলে পিন্টুসহ পাঁচজনকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

বংশাল থানা : অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের হলে সাজুসহ ৫ জনকে পুলিশ গুলি করে।

বিবৃতিতে আরো উল্লেখ করা হয়, অবরোধের চতুর্থ দিনে ১৮ দলীয় জোটের সমর্থক সাতক্ষীরার হোসাইন আলী, আজিজুল ইসলাম এবং চাঁদপুরে সিয়াম নামে তিনজনকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে। এছাড়া, জোটের ৬৪ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার, ১২৭ জনকে আহত এবং ২৬ জনকে গুলি করা হয়। ফরিদপুরে জোটের নেতা দেলোয়ার হোসেন এবং ঢাকার হাজারীবাগে একজন মহিলা নেত্রীকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

(দ্য রিপোর্ট/টিএস-এমএইচ/এমএআর/ডিসেম্বর ০৩, ২০১৩)