এরশাদের সিদ্ধান্তে হতবাক আ’লীগ নেতারা
আমানউল্লাহ আমান ও বাহরাম খান, দ্য রিপোর্ট : দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত বদলে হতবাক হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতা এখনো বিশ্বাস করেন, এরশাদ আবারো সিদ্ধান্ত বদলাবেন এবং নির্বাচনে অংশ নেবেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণার পর রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে মঙ্গলবার বিজয় দিবসের এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘উনি (এরশাদ) তো প্রতিদিন কত ক্রিয়াই করছেন। এটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। উনার এই ক্রিয়া (নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত) কতক্ষণ থাকে সেটাই দেখা দরকার। তারপর প্রতিক্রিয়া দেওয়া যাবে।’
সুরঞ্জিত বলেন, ‘তিনি (এরশাদ) হয়তো সাময়িকভাবে ক্ষুব্ধ হতে পারেন। পরে যখন তিনি স্বাভাবিক হবেন তখন এটা পুনর্বিবেচনা করবেন বলে আমার বিশ্বাস। তিনি (এরশাদ) স্বেচ্ছায় সর্বদলীয় সরকারে যোগদান করেছেন। আবার নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণাও দিয়েছিলেন। এখন তিনি নিজেই আবার বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি কি করবেন। শেষ পর্যন্ত এরশাদ কী করেন, তা দেখার বিষয়।
সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এরশাদ শেষ কথা বলে ফেলেছেন, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। এরশাদের মুখ থেকে শেষ কথা শোনা হয়ে গেছে, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত এমনটা মনে করার কারণ নেই। এটাই যে তার শেষ কথা, এটা কেন মনে করেন?’
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, নির্বাচন নিয়ে হঠাৎ করে এরশাদের এমন সিদ্ধান্তে দলটির নেতারা হতবাক হয়েছেন। যার কারণে মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, আসন ভাগাভাগি নিয়ে দফারফা না হওয়ায় এরশাদ সিদ্ধান্ত বদল করেন। এছাড়া মনোনয়ন দাখিলের সময়সীমা না পেছানো, মঞ্জু হত্যা মামলার কুলকিনারা না হওয়া ও শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে আসতে পারে এমন আশঙ্কায় এরশাদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘ঐটা কোন বিষয় নয়। সময় মতো সব কিছুই ঠিক হয়ে যাবে।’
জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে লোকজনের মধ্যে উদ্বেগ-আতঙ্ক বিরাজ করছে। এই অবস্থায় নির্বাচন হলেও ভোটকেন্দ্রে মানুষ যাবে না এমন আতঙ্ক কাজ করছে। এমন শঙ্কা থেকেও এরশাদ এই ঘোষণা দিতে পারেন। আবার সরকারকে বিকল্প পথ ভাবার সুযোগ দেওয়ার কৌশলও হতে পারে।’
এরশাদের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যম সারির নেতারা সামনের নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সম্পাদকমণ্ডলীর নেতারা বলছেন, এরশাদের সিদ্ধান্তে নির্বাচন অনুষ্ঠান অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ল।
সম্পাদকমণ্ডলীর আরেক নেতা বলেন, ‘সংবিধানের বাইরে কাজ করবে না আওয়ামী লীগ। সম্ভব না হলে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারই দেশ চালাবে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বিশ্বাস করেন এরশাদ নির্বাচনে অংশ নেবেন। তিনি বলেন, ‘১৯৯১ সালে জেলে থেকেও নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন এরশাদ। সামনের নির্বাচনেও তার দল অংশ নেবে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সাময়িক বেকায়দায় পড়লেও সংবিধানই সেই বেকায়দা থেকে উত্তরণের পথ বাতলে দেবে।’
(দ্য রিপোর্ট/এইউএ/বিকে/ডিসেম্বর ০৪, ২০১৩)