দেশের ঘটমান রাজনৈতিক সংকট ফয়সালায় জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত ঢাকায় আসছেন আগামী ৬ ডিসেম্বর। দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো ক’দিন আগেও এসেছিলেন মহাসচিবের বার্তা নিয়ে। তার সে সফর কাজে আসেনি। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন যথারীতি তফসিল ঘোষণা করেছে। তফসিল মোতাবেক সরকার পক্ষ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। বিরোধী পক্ষ বর্জনের পাশাপাশি দেশে আন্দোলন, অবরোধ জারি রেখেছে।

সরকার প্রশাসন দিয়ে আন্দোলন মোকাবিলা করছে। প্রতিদিনই ঘটছে উল্লেখযোগ্য প্রাণ ও সম্পদহানির ঘটনা। সম্পদ ও প্রাণহানির জন্য যথারীতি পরস্পরকে দায়ী করার প্রতিযোগিতা চলছে। দু’পক্ষ আলাপ-আলোচনা, সংলাপের কথা বলছেন কিন্তু সমঝোতার কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেশবাসী দেখতে পারছে না।

এ বিষয়ে পক্ষীয় বুদ্ধিজীবীরা নিজ নিজ রাজনৈতিক অবস্থান থেকে লাগাতার কথা বলে চলেছেন। বিবেকের জায়গা থেকে কেউ যে কথা বলছেন না তা নয়। তবে অনেক বুদ্ধিজীবীই দেশের রাজনৈতিক সংকট ফয়সলায় বিদেশি তৎপরতাকে কঠোর সমলোচনার দৃষ্টিতে দেখছেন। তারা এমনকি জাতিসংঘ দূতের এজেন্ডাকেও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখাতে চাইছেন।

এই ধরনের আত্মসম্মান বোধসম্পন্ন বুদ্ধিজীবীরা অনেকের বাহবা পেতে পারেন, আবার আশাও করেন। এক্ষেত্রে আমাদের প্রশ্ন স্বাধীনতা অর্জন থেকে আমাদের কোনো অর্জনে বিদেশি হস্তক্ষেপ থাকেনি বা লাগেনি? আমাদের আরও প্রশ্ন, আজকের বিশ্ব বাস্তবতায় দেশের অভ্যন্তরে গুরুত্বপূর্ণ সংঘাতময় রাজনৈতিক সংকট থাকলে বিদেশি হস্তক্ষেপ থেকে দূরে থাকা সম্ভব কিনা? সম্ভবত, সম্ভব নয় বলেই ইউরোপের দেশগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন গঠন করতে বাধ্য হয়েছে। ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোকে গঠন করতে হয়েছে জোট। কিছুটা হলেও বাংলাদেশ হয়তো পারত। যদি কিনা সার্ক মাজা সোজা করে দাঁড়াতে পারত। যে যে কারণে সার্ক কার্যত ব্যর্থ হয়েছে সেই কারণেই বাংলাদেশও তার নিজস্ব সমস্যার সমাধান করতে পারছে না। সে কারণেই বিদেশিদের মাতুব্বরী বা মধ্যস্ততা এখানে বার বার অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠছে। এটাকে অস্বীকার করে বাহবা মিলবে, সমাধান মিলবে না। তা ছাড়া জাতিসংঘ তো আমাদেরও।