দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : বোহেমিয়ান-অস্ট্রিয়ান কবি ও ঔপন্যাসিক রাইনার মারিয়া রিলকে ১৮৭৫ সালের ৪ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। জার্মান ভাষায় রচিত তার কবিতা গীতল ভঙ্গির জন্য বিখ্যাত। অনেকে তার কাজকে মিস্ট্রিক্যাল বলে বর্ণনা করেন। প্রথম দিকের লেখায় অবিশ্বাস, নিঃসঙ্গতা ও উবিগ্নতার দেখে মেলে। তবে শেষ দিকের লেখায় আধ্যাত্মিকতা ও মানবিকতার স্ফুরণ ঘটে। তিনি সনাতন ও আধুনিকতার ক্রান্তিকালকে লেখায় ধারণ করেছেন।

রাইনার মারিয়া রিলকের পুরো নাম রেনে কার্ল উইলহেম জোহান জোসেফ মারিয়া রিলকে। তৎকালীন আস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের আওতাধীন প্রাগ শহরে তার জন্ম। জোসেফ রিলকে ও সোফি ইনজ দম্পতির একমাত্র সন্তান রিলকের শৈশব ও যৌবন কাটে প্রাগ শহরে। কিন্তু তিনি খুব একটা সুখে ছিলেন না। তার মা মৃত মেয়ের শোক সামলাতে তাকে মেয়েদের পোশাক পরিয়ে রাখতেন।

মা-বাবার চাপে তিনি ১৮৮৬ থেকে ৯১ সাল পর্যন্ত মিলিটারি একাডেমিতে পড়াশোনা করেন। এরপর অসুস্থতার কারণে সেখান থেকে চলে আসেন। ১৮৯৬ সাল পর্যন্ত প্রাগ ও মিউনিখে সাহিত্য, শিল্প, ইতিহাস ও দর্শন নিয়ে পড়েন।

১৮৯৭ সালের পর থেকে তিনি উত্তর আফ্রিকা, রাশিয়া, স্পেন, জার্মানি ও ইটালিতে ভ্রমণ করেন। শেষদিকে তিনি স্থিতু হন তার কাব্য অনুপ্রেরণার অন্যতম দেশ সুইজারল্যান্ডে।

১৯০০ সালে মস্কোতে লিও টলস্তয়ের সাথে দেখা করেছিলেন। সে সময় বিখ্যাত কবি বরিস পস্তারনাকের পরিবার ও কবি স্পিরিডন দ্রোজনিনের সাথে দেখা করেন। সেখানকার শিল্পী ক্লীরা ভেস্টহোককে ১৯০০ সালে তিনি বিয়ে করেন। ১৯০১ সালে তাদের একমাত্র মেয়ে রুথ জন্মগ্রহণ করেন।

জার্মান সাহিত্যে তার অবদান বেশি শোনা গেলেও তিনি ফরাসি ভাষায় ৪০০ এর বেশি কবিতা লিখেছেন। প্যারিসে থাকাকালে ১৯১০ সালে তার আধা-আত্মজৈবনিক ধাঁচের উপন্যাস দি নোটবুকস অব মালটে লুরিডস ব্রিগে প্রকাশিত হয়। ১৯১২ সালে তিনি বিখ্যাত দুনো ইলিজির কবিতাগুলো লেখা শুরু করেন। কিন্তু শেষ করতে এক দশক সময় লাগে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন সময় থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত তিনি ইউরোপের বেশ ক’টি শহরে ভ্রমণ করেন। প্যারিসে তার সম্পত্তি বাজয়াপ্ত ও নিলামে উঠায় তিনি আর সেখানে ফিরেননি।

যুদ্ধোত্তর নৈরাজ্য থেকে মুক্তি পেতে ১৯১৯ সালের জুন মাসে তিনি সুইজারল্যান্ডে চলে আসেন। সেখানে দুনো এলিজির কাজ আবার শুরু করেন। ১৯২২ সালে তিনি এটি শেষ করেন। একই সময়ে খুব দ্রুতই তিনি সনেটস টু অরপিউসের সনেটগুলো শেষ করেন। কবি ফ্রাঞ্চ জাবার কাপুসকে তিনি অনেকগুলো চিঠি লিখেছিলেন। এগুলো পরবর্তীতে লেটার্স টু আ ইয়ং পয়েট নামে ১৯২৯ সালে প্রকাশিত হলে বেশ সাড়া জাগায়।

১৯২৩ সাল থেকে তিনি শারীরিক সমস্যায় ভুগতে থাকেন। এর জের ধরে তার শেষ জীবনের বড় অংশ কাটে বিভিন্ন স্যানাটোরিয়ামে। এইসময় তিনি ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগে ভুগতে থাকেন। ১৯২৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর তিনি সুইজারল্যান্ডের একটি স্যানোটোরিয়ামে তিনি মারা যান।

বিশ শতকের শেষ দিকে তার কবিতা নতুন করে সমাদর লাভ করে। বিভিন্ন টেলিভিশন অনুষ্ঠান, বই ও চলচ্চিত্রের তাকে নানাভাবে উদ্ধৃত করা হয়। এই সময়ে তার বই জালালুদ্দীন রুমি ও খলিল জিবরানের সাথে সর্বাধিক বিক্রির তালিকায় স্থান পায়।

রিলকের দুনো এলিজির অনুবাদ করেছেন বিখ্যাত কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়। লেটার্স টু ইয়ং পয়েট বাংলাদেশে অনুদিত হয়েছে। জাহানারা পারভীন লিখেছেন রিলকে : নৈঃশব্দ্যে ও নিঃসঙ্গতায়। এছাড়া আরো কিছু কবিতার বইয়ের অনুবাদ পাওয়া যায়।

(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/ডিসেম্বর ০৪, ২০১৩)