রাজনৈতিক অস্থিরতায় ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত
নূরুজ্জামান তানিম, দ্য রিপোট : দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের বিন্যস্তকরণ (ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন) প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।আইনানুসারে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরের সনদ পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের নতুন পর্ষদের প্রথম বৈঠক করতে হবে।কিন্তু ধারাবাহিকভাবে হরতাল এবং অবরোধের মতো রাজনৈতিক কমসূচির কারণে ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের কার্যক্রম পরিকল্পনা অনুযায়ী না হওয়ায় বিপাকে পড়েছে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ।
গত ২৯ নভেম্বর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন পরবতী নতুন পরিচালনা পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক মনোনয়ন ও অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৫ কমিটি গঠন করে। অবরোধের কারণে এ কমিটিগুলোর কার্যক্রম স্থবির হয়ে রয়েছে। চলতি সপ্তাহে গঠিত কমিটির একটি করে সভা হওয়ার কথা থাকলেও প্রধান বিরোধী দলের ডাকা অবরোধের কারণে তা অনুষ্ঠিত হয়নি।
একইভাবে নতুন পরিচালনা পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক মনোনয়নের জন্য নমিনেশন রিমিউনারেশন অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স কমিটি গঠনের কথা থাকলেও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) তা করতে পারছে না। এছাড়া নির্বাচনের এক মাস আগে নির্বাচন কমিটি গঠন ও নীতিমালা তৈরীর কার্যক্রম থেমে আছে।
এ বিষয়ে ডিএসইর সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু দ্য রিপোটকে বলেন, ‘গত ২৯ নভেম্বর ডিএসইর পর্ষদ সভায় ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন সংক্রান্ত ৫টি কমিটি গঠন করা হয়। অবরোধের কারণে কমিটি কোনও কার্যক্রম বা সভা করতে পারেনি।চলতি সপ্তাহে গঠিত কমিটিগুলোর প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। নির্বাচনের আগে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিটি গঠন করতে হবে। পাশাপাশি এ সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরী করতে হবে। কবে নাগাদ এ সব কার্যক্রম সম্পন্ন হবে তা নিয়ে আমরা নিজেরাই আলোচনা করছি।’
দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় পুঁজিবাজারের কার্যক্রম কিভাবে এগিয়ে নেওয়া যায় তা নিয়ে জরুরি বৈঠক করা হবে বলে জানান ডিএসই সভাপতি।
এদিকে সিএসইর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সৈয়দ সাজিদ হোসেন দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘গত ৩০ নভেম্বর ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন কার্যক্রম নিয়ে আমাদের পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। অবরোধের কারণে তা আর সম্ভব হয়নি। অবরোধ কবে শেষ হবে তাও জানি না। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা পর্ষদ সভা করার সুযোগ পেলেই ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেব।’
উল্লেখ্য, ডিএসইর ২৯ নভেম্বরের পর্ষদ সভায় ৫ কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত কমিটিগুলো হলো- নমিনেশন রিমিউনারেশন অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স কমিটি, রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কমিটি, অডিট অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটি, আপিল কমিটি এবং কনফ্লিক্ট মিটিগেশন কমিটি।
এ পাঁচ কমিটির মধ্যে চার কমিটির সদস্য সংখ্যা পাঁচজন করে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক থাকবেন তিনজন, স্টেকহোল্ডারদের একজন ও একজন সিইও। সিইও সব কমিটির সদস্য হিসেবেই থাকবেন। আর রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কমিটিতে ডিএসইর তিনজনই স্বতন্ত্র পরিচালককে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।
নমিনেশন রিমিউনারেশন অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স কমিটিতে রয়েছেন- বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. রুহুল আমিন সরকার, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন, স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে থেকে রয়েল গ্রিন সিকিউরিটিজের স্বত্বাধিকারী আবদুল হক ও ডিএসইর সিইও স্বপন কুমার বালা। এ কমিটি ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন পরবর্তী নতুন পর্ষদ গঠনে ১৪ জন স্বতন্ত্র পরিচালক মনোনয়ন করবে। পরবর্তীতে তা বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) অনুমোদনের জন্য পঠানো হবে। এর মধ্যে থেকে বিএসইসি সাতজন স্বতন্ত্র পরিচালককে অনুমোদন দেবে। প্রয়োজনে ওই ১৪ জনের তালিকা বাদ দিয়ে পুনরায় স্বতন্ত্র পরিচালকের নামের তালিকা বিএসইসি তলব করতে পারে।
রেগুরেটরি অ্যাফেয়ার্স কমিটি ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন পরবর্তী স্টক এক্সচেঞ্জে নতুন চিফ রেগুরেটরি অফিসার (সিআরও) পদ সৃষ্টি করবে। এ কমিটির সদস্যরা হলেন- বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. রুহুল আমিন সরকার, অধ্যাপক হাশেম ও আইন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাসরিন বেগম।
এছাড়া অডিট অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটিতে স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে থেকে রয়েছেন মিনহাজ মান্নান ইমন, আপিল কমিটিতে রয়েছেন মো. হানিফ ভুঁইয়া এবং কনফ্লিক্ট মিটিগেশন কমিটিতে রয়েছেন আহমেদ রশিদ লালী।
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/এইচকে/ ডিসেম্বর ০৪, ২০১৩)