আল হেলাল শুভ, দ্য রিপোর্ট : ১৮ দলীয় জোটের টানা অবেরোধ কর্মসূচিতে স্থবির হয়ে পড়েছে রাজধানীর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার। অবরোধের কারণে বাজারগুলোতে ক্রেতাদের উপস্থিতি কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে বিক্রেতারা।

অন্যদিকে অবরোধে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। কারওয়ান বাজারের কয়েকজন পাইকারী পেঁয়াজ ব্যবসায়ীর সঙ্গে বুধবার কথা বলে জানা গেছে, পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। ঈদের আগে পেঁয়াজের দাম যেমন ছিল এখনও দাম প্রায় একই। অবরোধের আগে শুক্রবারও দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। কিন্তু বুধবার রাজধানীর বাজারগুলোতে সেই একই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০০ টাকা। ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কমে হয়েছিল ৬০ টাকা কিন্তু বুধবার সেই পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৯৫ থেকে ৯৬ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রাশেদ বলেন, “স্বাভাবিক সময়ে প্রতি ট্রাক পেঁয়াজ ঢাকায় আনতে খরচ হয় ১৫ হাজার টাকার মতো। কিন্তু বর্তমানে সেই একই ট্রাক আনতে খরচ হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। একারণে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।”

বুধবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অবরোধের কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়লেও রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে সবজির চাহিদাও কমেছে। তবে মাছ-মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অবরোধে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন রাজধানীর সবজি ব্যবসায়ীরা।

কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, অবরোধের কারণে ক্রেতার সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এ কারণে সবজির চাহিদা কম থাকায় দামও অনেক কমেছে। আবার বিক্রি করতে না পারায় অন্তত দুই-তিন ট্রাক সবজি নষ্ট হতে বসেছে।

অবরোধে পণ্য বিক্রেতাদের দুর্ভোগ ও আর্থিক ক্ষতি প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষসংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি হেলাল উদ্দিন দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর বিবাদে আমরা ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এ কথা আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি। মূলত চার শ্রেণীর মানুষ দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা হলেন- রবিশস্য উৎপাদনকারী কৃষক, পরিবহন মালিক-শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ভোক্তা।’

কারওয়ান বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জাকারিয়া জানান, অবরোধের আগে কাঁচা মরিচ প্রতি কেজির দাম ছিল ১০০ টাকা। কিন্তু এখন ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

টমেটোর দাম বর্তমানে প্রতি কেজি ১০০ টাকা। কিন্তু গত শুক্রবারও একই টমেটোর দাম প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৬০ টাকা ছিল। গত শুক্রবারও ফুলকপি প্রতিটি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বুধবার একই ফুলকপি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়। শিম প্রতি কেজি ৩০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। কিন্তু শুক্রবার যার দাম ছিল প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকা।

রাজধানীর হাতিরপুল বাজারের সবজি ব্যবসায়ী খোরশেদ ও কাঁঠাল বাগান বাজারের মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, ‘দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মানুষ আতঙ্কে ঘর থেকে বের হচ্ছে না। এ কারণে বেচা-বিক্রি অনেক কমে গেছে। ইতোমধ্যে বাজারের অনেক ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ করে চলে গেছেন।’

হাতিরপুলের মাছের বাজার ছিল প্রায় ক্রেতাশূন্য। সেখানকার মাছ ব্যবসায়ী তারা মিয়া বলেন, ‘শীতের কারণে এমনিতেই মাছের আমদানি কম। তার উপর অবরোধের কারণে ক্রেতা না থাকায় অনেক বিক্রেতাই দোকান খুলেননি। বেচা-বিক্রি নেই বললেই চলে।’

ক্রেতা কম থাকায় বিপাকে পড়েছেন মাংস ব্যবসায়ীরাও। হাতিরপুল বাজারের এক মাংস ব্যবসায়ী জানান, অবরোধে ঢাকায় গরু আমদানি কমেছে।

রাজধানীর বাজারগুলোতে দেখা গেছে, প্রতি কেজি গরুর মাংস ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা ও খাসির মাংস প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারভেদে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১১০ থেকে ১৩০ টাকা দরেও দেশি মুরগী ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

(দ্যরিপোর্ট/এএইচএস/ডিসেম্বর ০৪, ২০১৩)