অবরোধে চাল ফুরিয়ে আসছে
আমিনুল ইসলাম, দ্য রিপোর্ট : রাজধানীতে অবরোধের ধাক্কা লেগেছে চালের বাজারে। দ্রুত ফুরিয়ে আসছে চালের মজুদ। দেশব্যাপী বিরোধী দলের ডাকা টানা অবরোধের কারণে কোনো পণ্যবাহী পরিবহন ঢাকায় প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে দ্রুত ফুরিয়ে আসছে চালের মজুদ। এই সুযোগে চালের দাম বাড়ছে হু হু করে। অবরোধ আরও দীর্ঘ হলে ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে চালের সংকট তীব্র হবে বলে আশঙ্কা করছেন চাল ব্যবসায়ীরা।
চাল ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি কাউসার আলম খান এ প্রসঙ্গে বলেন, অবরোধের কারণে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো থেকে কোনো ট্রাক আসছে না। শুধুমাত্র মুন্সীগঞ্জ থেকে নৌপথে কিছু চাল ঢাকায় আসছে। তা দিয়ে কোনো রকমে সরবরাহ ঠিক রাখা হয়েছে। এছাড়া আমাদের কাছে যে মজুদ ছিল তাও অর্ধেকে নেমে এসেছে।
কাউসার আলমের কথার সত্যতা মেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সবচেয়ে বড় চাল ব্যবসায়ী রোকেয়া অটো রাইসমিলের মালিক সাইফুল ইসলামের কথায়। তিনি বলেন, হরতাল ও অবরোধে ঢাকায় চাল সরবরাহ করতে পারছি না।
তিনি আরো বলেন, শুধুমাত্র এই জেলা থেকে ঢাকার বাবুবাজার, কচুখেত, বাড্ডা, উত্তরা, টঙ্গী ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ ট্রাক চাল সরবরাহ করা হয়।
এছাড়া চালের সবচেয়ে বড় বাজার নওগাঁ থেকে প্রায় এক থেকে দেড়শ ট্রাক চাল এসব এলাকায় সরবরাহ করা হয়। কিন্তু হরতাল ও অবরোধের কারণে চাল সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে মিলমালিকেরা বড় লোকসানের মুখে আছেন। শুধু তাই নয়, ধান কেনার এই ভরা মৌসুমেও পরিবহনের অভাবে ধান কিনতে পারছেন না তারা। কয়েকদিন আগে অবরোধের সময় রাজশাহীতে ধানবোঝায় চারটি ট্রাক জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
জয়পুরহাটের বারী রাইস মিলস এ্যান্ড ফ্লাওয়ার মিলের মালিক ও নর্থবেঙ্গল চাল মিল মালিক সমিতির সভাপতি আমিরুল ইসলাম বারীও একই কথা জানান। তিনি বলেন, দেশের সিংহভাগ চাল সরবরাহ করা হয় নওগাঁ, কুষ্টিয়া, বগুড়া, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ ও শেরপুর থেকে। এসব এলাকায় বিরোধী দলের হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি কঠোরভাবে পালন হওয়ায় কোনো পণ্যবাহী ট্রাক চলতে পারছে না । এসব এলাকা থেকে সরবরাহ করা চাল মূলত ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, নোয়াখালী ও চাঁদপুরে নেওয়া হয়।
তিনি আরো জানান, বর্তমানে চালের হার্ভেস্ট টাইম হওয়ায় ওইসব এলাকায় স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত চালের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। রাজনৈতিক কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে আর ১০-১৫ দিন পরই চালের সরবরাহ সঙ্কট দেখা দেবে। তখন চালের মজুদ পরিস্থিতি খুব খারাপের দিকে যেতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানী ও এর আশেপাশের এলাকায় প্রতিদিন প্রায় দুই থেকে তিনশ চালের ট্রাক প্রবেশ করে। এই চালের সিংহভাগই আসে নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে। এছাড়া কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ ও শেরপুর জেলা থেকে চাল আসে ঢাকায়। গত এক-দেড় মাস ধরে দেশব্যাপী হরতাল ও অবরোধ চলায় এসব এলাকা থেকে চালবাহী ট্রাক ঢাকায় প্রবেশ করতে পারেনি। ফলে চালের মজুদের ওপর টান পড়েছে।
ঢাকার পাশের জেলা মুন্সীগঞ্জের কিছু চালকল থেকে নৌপথে ঢাকায় চালের যোগান দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এ অবস্থা বেশিদিন ধরে রাখা যাবে না। শুক্র ও শনিবার অবরোধমুক্ত থাকলেও কেউ উত্তর বঙ্গ থেকে দূরপাল্লার ট্রাক নিয়ে ঢাকায় আসতে চাচ্ছে না। অথচ উত্তরবঙ্গ থেকেই চালের প্রধান চালান ঢাকায় আসে। ফলে চালের সরবরাহ লাইনে প্রতিনিয়ত সঙ্কট বাড়ছে। সঙ্কট মোকাবেলায় উত্তরবঙ্গের সঙ্গে পরিবহন যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখার উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন চাল ব্যবসায়ীরা।
(দ্য রিপোর্ট/এআই/এইচএসএম/ডিসেম্বর ০৪, ২০১৩)