লোকসানের মুখে নৌযান কর্তৃপক্ষ
মাদারীপুর সংবাদদাতা : প্রথমে হরতাল, তারপর অবরোধ। ১৮ দলীয় জোটের ডাকা টানা সপ্তাহব্যাপী অবরোধে অচল হয়ে পড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগের অন্যতম নৌরুট কাওড়াকান্দি-মাওয়া। পরিবহন-নৌযানের হুইসেলের শব্দ আর মানুষের কোলাহলে দিনরাত মুখর থাকা এই নৌঘাটে এখন নেমে এসেছে যেন রাজ্যের নীরবতা। অবরোধের কারণে পুরোপুরি পাল্টে গেছে এই ঘাট এলাকার চিত্র। রাস্তায় যানবাহনের জটলা, ফেরিতে গাড়ির ওঠানামা, লঞ্চ-স্পিডবোটে মানুষের ভিড়- এসব চিত্র এখন আর নেই। অবরোধের কারণে পরিবহন চলাচল বন্ধ, সাধারণ মানুষের কোথাও যাত্রা করার কোনো প্রবণতাও নেই। ফলে কাওড়াকান্দি-মাওয়া নৌরুটে চলাচলকারী নৌযানগুলো এখন লোকসানের মুখোমুখি।
গাড়ি না থাকায় ফেরিগুলো থাকে ঘাটে নোঙর করা। যেখানে প্রতিদিন ১৭টি ফেরি যানবাহন পারাপার করার কাজে নিয়জিত থাকতো। তারপরও কমতো না ঘাটে পরিবহনের পরিমাণ। অবরোধের ফলে প্রতিদিনই লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। আয় না হলেও এসব নৌযানের কর্মচারীদের বেতন দিতে হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএর কাওড়াকান্দি ঘাট সূত্র জানায়, প্রতিদিন এই নৌরুট দিয়ে সহস্রাধিক ছোট-বড় পরিবহন পারাপার হতো। নিয়মিত চলতো ১৭টি ফেরি। অবরোধের প্রভাবে পারাপার প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধই বলা চলে। ফলে কোটি টাকার আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
এদিকে চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে লঞ্চ-স্পিডবোট মালিক-শ্রমিকরা। যাত্রী না থাকায় লঞ্চ নিয়মিত চলছে না। কিছু যাত্রী হলে তা নিয়ে লঞ্চ চললেও তাতে লোকসান হচ্ছে। কাওড়াকান্দি-মাওয়া নৌরুটে ৮৩টির মতো লঞ্চ চলাচল করে। এই অবরোধে তা প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ। এসব লঞ্চের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকা শ্রমিকদের উপার্জন এখন বন্ধ। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে তাদের দুর্ভোগে কাটাতে হচ্ছে।
লঞ্চ শ্রমিক লোকমান মিঞা বলেন, ‘অবরোধে যাত্রীরা ঢাকায় যাওয়া-আসা করে না। করলেও খুব কম। লঞ্চ লোকসানে আছে। আমাদের আয়-রোজগারও বন্ধ। খুব কষ্টে আছি ভাই।’
ঘাটের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকায় পাঁচ শতাধিক ভাসমান হকারের অবস্থাও করুণ। লঞ্চ-ফেরি এবং ঘাটে ঘুরে ঘুরে নানা ধরনের খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করে যাদের জীবিকা অর্জন, অবরোধের ফলে এখন বন্ধ রয়েছে সেই পথ। যাত্রী নেই, বিক্রিও নেই। অথচ প্রতিদিনই খাবার জোটাতে হয় পরিবার-পরিজনদের জন্য।
এ রকম বেশ কয়েকজন হকারের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, একমাত্র ঘাটের ওপর নির্ভর করে স্বল্প পুঁজি নিয়ে তারা ব্যবসা করছেন। মোটামুটিভাবে সংসারও চালাচ্ছেন। বিক্রি হলে তাদের সংসার চলে। আর বিক্রি না হলে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে।
সবমিলিয়ে টানা এই অবরোধের কারণে বিপাকে রয়েছে কাওড়াকান্দি-মাওয়া নৌরুটের নৌযান মালিক-শ্রমিক এবং ঘাটের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকা সাধারণ মানুষরা।
(দ্য রিপোর্ট, ইএইচ/এএস/ডিসেম্বর ০৫, ২০১৩)