বাংলাদেশে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান এইচআরডব্লিউ’র
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : আগামী ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দল ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
নিউইয়র্কভিত্তিক এ সংস্থাটির এশিয়া বিভাগের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বুধবার এক বিবৃতিতে এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের ভবিষ্যতে আরো মৃত্যু ও হানাহানি রোধে জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
বিবৃতিতে অ্যাডামস জানান, বিএনপি নেতৃতাধীন বিরোধী দল দেশব্যাপী ব্যাপক সহিংস বিক্ষোভ করছে। অন্যদিকে নিরাপত্তা বাহিনী তাদের দমনে শক্তি প্রয়োগ করছে।
ওই বিবৃতি বলা হয়েছে, ‘৪ ডিসেম্বর যুবদলের এক নেতা নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন। একই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ৫০ জন। কয়েকদিন ধরে চলা এসব সহিংসতায় সাধারণ মানুষসহ অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন বলে বিশস্ত সূত্রে জানা গেছে। বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের হিসাব অনুযায়ী শুধু নভেম্বর মাসেই এসব সহিংসতায় অন্তত চার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।’
এছাড়া, ২৮ নভেম্বর শাহবাগে চলন্ত বাসে পেট্রোল বোমা হামলায় তিন জনের মৃত্যু ও ১৫ জন অগ্নিদগ্ধ, বুধবার গাইবান্ধায় রেললাইনে নাশকতায় ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে চার জনের মৃত্যু বিষয়টিও ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এসব সহিংসতায় হতাহতের ঘটনায় আন্দোলনকারীরাই দায়ী। আন্দোলনকারীদের ছোড়া বোমায় অন্তত চার শিশু আহত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্যও এসব সহিংসতায় আহত হয়েছে। পুলিশ ও বিজিবি সদস্যও নিহত হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদনগুলোতে জানা গেছে।’
ওই বিবৃতিতে ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘নির্বাচনের এই সহিংস সময়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরোধীদলের ওপর আইন বর্হিভুত শক্তি প্রয়োগের দীর্ঘ ইতিহাস ত্যাগ করা উচিত। একইসঙ্গে পেশাগত ও নিরপেক্ষ আচরণ করা উচিত।’
তিনি আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগের স্মরণ করা উচিত, যখন বিরোধী দলে ছিল তখন কী ধরনের নিপীড়নের মুখোমুখি হয়েছে তাদের নেতাকর্মীরা। এজন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো যেন আইন অনুযায়ী কাজ করে তা আওয়ামী লীগেরই নিশ্চিত করা উচিত।’
ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘বিরোধীদলের নেতাদের কোনোভাবেই সহিংসতাকে উস্কে দেওয়া উচিত নয়। বরং শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের বিষয়টি নিশ্চিত করার দায়িত্ব তাদেরই।’
তিনি বলেন, ‘যখন দলীয় কোনো কর্মী অপরাধ করে, তখন রাজনৈতিক নেতাদের উচিত তাদের বিচারের সম্মুখীন করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে সাহায্য করা।’
একইসঙ্গে ওই বিবৃতিতে বিক্ষোভকারীদের সহিংসতা ও নিরাপত্তা বাহিনীর আইনবহির্ভূত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে।
নিরাপত্তা বাহিনীর আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের মূল নীতিমালা অনুসরণের লক্ষ্যে সরকারের প্রকাশ্যে আইন জারি করা উচিত বলে এইচআরডব্লিউ ওই বিবৃতিতে জানিয়েছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান নাভি পিল্লাই ১ ডিসেম্বর এসব রাজনৈতিক সহিংসতার পেছনে সব রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি উল্লেখ করে এসবের রাজনৈতিক পরিণতির বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
এছাড়া বিভিন্ন দেশের সরকার বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতার সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে বলে ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘নির্বাচনপূর্ব সহিংসতায় এরই মধ্যে বাংলাদেশে অনেকে নিহত হয়েছেন। একমাত্র দায়িত্বপূর্ণ নেতৃত্বই পারে এ ধরনের মৃত্যু বন্ধ করতে।’
(দ্য রিপোর্ট/কেএন/এস/জেএম/ডিসেম্বর ০৫, ২০১৩)