দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ডেসটিনির বিরুদ্ধে দায়ের করা দুটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আগামী সপ্তাহে কমিশনে দাখিল করবে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত দল।

এ প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ডেসটিনির তদন্ত প্রতিবেদন তৈরির কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। যেকোন সময় তদন্তকারী কর্মকর্তারা কমিশনে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ডেসটিনি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রায় প্রস্তুত। এখন শুধু তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে এ প্রতিবেদন পেশ করা হবে। প্রতিবেদনে মোট আসামির সংখ্যা ২২ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৩০ জনের অধিক হবে। মামলাগুলোর তদন্তকালে আত্মসাৎ করা আরও অর্থের খোঁজ পাওয়া গেছে। এতে আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ আরও প্রায় ৭০০ কোটি টাকা বৃদ্ধি পাবে।

দুদক সূত্র জানায়, ডেসটিনি গ্রুপের ৩৫টি কোম্পানি ও আসামিদের ব্যক্তিগত মোট ৭২২টি অ্যাকাউন্ট (হিসাব) জব্দ করা হয়েছে। এখানে ডেসটিনি ট্রি প্ল্যানটেশন, ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড এবং ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের প্রায় ৫০টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এসব কোম্পানি থেকে প্রায় ৩৫টি কোম্পানির অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে। যা পরবর্তীতে আসামিদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়েছে। ডেসটিনির দুই মামলয় এ পর্যন্ত ৬৩১ কোটি ৯০ লাখ টাকার সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া জব্দের তালিকায় ১১৬টি গাড়িও রয়েছে।

গত বছরের ৩১ জুলাই দুদকের উপ-পরিচালক মো. মোজাহার আলী সরদার ও সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে রাজধানীর কলাবাগান থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে। ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি. ও ডেসটিনি ট্রি-প্লানন্টেশন প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে থেকে মোট তিন হাজার ২৮৫ কোটি ২৫ লাখ ৮৮ হাজার ৫২৪ টাকা আত্মসাতের দায়ে মামলাগুলো দায়ের করা হয়।

ডেসটিনি ট্রি-প্ল্যানটেশন প্রতারণার অভিযোগে ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা (মামলা নং-৩২) এবং ডেসটিনি মাল্টিপারপাস লিমিটেডের প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা (মামলা নং-৩৩) করে দুদক। এদের মধ্যে ১২ জন উভয় মামলায় আসামি হিসেবে রয়েছেন।

মামলার আসামিরা হলেন- ডেসটিনির ব্যাবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমিন, লে. জেনারেল (অব.) এম. হারুন-উর-রশিদ বিপি, মোহাম্মদ হোসেন, গোফরানুল হক, সাইদ-উর-রহমান, মেজবাউদ্দিন স্বপন, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, ইরফান আহমেদ সানী, ফারহা হোসেন দিবা, জামসেদ আরা চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার শেখ তৈয়বুর রহমান, সেলিনা রহমান, নেপাল চন্দ্র বিশ্বাস, মিতু রানী বিশ্বাস, জাকির হোসেন, আজাদ রহমান, আকবর হোসেন সুমন, শিরীন আক্তার, রফিকুল ইসলাম সরকার, মজিবুর রহমান, সুমন আলী খান, সাইদুল ইসলাম খান রুবেল, আবুল কালাম আজাদ ও লে. কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম।

ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীন, চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইন ও পরিচালক লে. কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম বর্তমানে দুদকের মামলায় কারাগারে রয়েছেন। অর্থ পাচারের সহায়তাকারী ইসলামী ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো. শফিউল ইসলামও কারাগারে রয়েছেন। এ ছাড়া ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট লে. জেনারেল (অব.) এম. হারুন-অর-রশিদ আদালতের শর্ত সাপেক্ষে জামিনে আছেন।

প্রসঙ্গত, ডেসটিনির শীর্ষ তিন কর্মকর্তা রফিকুল আমিন, মোহাম্মদ হোসেইন এবং দিদারুল আলম ইতোমধ্যেই ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

ডেসটিনির বিরুদ্ধে মামলা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি টিম গঠন করে কমিশন। এ টিমের সদস্যরা হলেন- উপ-পরিচালক বেনজীর আহম্মদ, মাহমুদ হাসান, এসএমএম আখতার হামিদ ভূঞা, মো. মোজাহার আলী সরদার ও সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম।

(দ্য রিপোর্ট/এইচবিএস/এস/এসবি/ডিসেম্বর ০৫, ২০১৩)