দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রকাশ করা হয়েছে।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর সংক্ষিপ্ত রায়ে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।

সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ওই রায় দেন।

এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়ে রায় ঘোষণা করে।

ট্রাইব্যুনালের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ। উভয়পক্ষের আবেদনের শুনানি শেষে আপিল বিভাগ রায় ঘোষণা করেন।

প্রধান বিচারপতি ছাড়াও আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের অপর বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।

সংক্ষিপ্তভাবে দেওয়া এ রায়ে ৫ জনের মধ্যে চারজন কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিষয়ে একমত হলেও অপরজন দ্বিমত পোষন করেন।

ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে কাদের মোল্লার আপিল খারিজ করে এবং সরকারের আপিল মঞ্জুর করে এ রায় দেওয়া হয়।

আপিল বিভাগে কাদের মোল্লার মামলা নিষ্পত্তির মধ্য দিয়ে এই প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলায় আপিল বিভাগে রায় হলো।

আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য আবেদন করবেন আসামিপক্ষ।

তবে আপিল বিভাগের এ রায়ের পর আসামিপক্ষ রিভিউ আবেদন করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সরকারপক্ষ ও আসামিপক্ষ পরস্পর বিরোধী মত প্রকাশ করেছেন। সরকারপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনে আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করার সুযোগ নেই। তিনি বলেছেন, এ রায়ে আমাদের দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তবে তার সঙ্গে দ্বিমত ব্যক্ত করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, বার কাউন্সিল ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন এবং অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ ও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। তারা বলেছেন, আপিল বিভাগের রায়ের পর রিভিউ করা যাবে। কারণ রিভিউ করা একটি সাংবিধানিক অধিকার।

রায়ে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে উত্থাপিত ছয়টি অভিযোগের সব ক’টিতেই সাজা দিয়েছেন আপিল বিভাগ। যদিও ট্রাইব্যুনাল তার রায়ে একটি অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছিলেন। আপিল বিভাগের রায়ে মিরপুর বাংলা কলেজের ছাত্র পল্লব হত্যা, কবি মেহেরুন্নেসা ও তার মা-ভাইকে হত্যা এবং সাংবাদিক আবু তালেব হত্যার (অভিযোগ নম্বর ১, ২ ও ৩) দায়ে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ১৫ বছরের কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে।

কেরানীগঞ্জের ভাওয়াল খানবাড়ি ও ঘাটারচরে গণহত্যার (অভিযোগ নম্বর ৪-শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যা) অভিযোগ থেকে ট্রাইব্যুনাল কাদের মোল্লাকে খালাস দিলেও আপিল বিভাগ এ অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।

এছাড়া মিরপুরের আলুবদী গ্রামে গণহত্যার (অভিযোগ নম্বর-৫, তিনশ ৪৪ ব্যক্তিকে হত্যা) দায়ে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।

তবে মিরপুরে হযরত আলী, তার স্ত্রী ও সন্তানসহ ৫জনকে হত্যা ও মেয়েকে ধর্ষণ করার (অভিযোগ নম্বর-৬) দায়ে ট্রাইব্যুনাল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেও আপিল বিভাগ রায়ে এ সাজা বাতিল করে দিয়েছেন। আপিল বিভাগ এ অভিযোগে কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।

ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার ও কাদের মোল্লা পৃথক আপিল আবেদন করে। এ আপিলের উপর গত ২৩ জুলাই উভয়পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন।

এ আপিলের উপর ১ এপ্রিল থেকে শুনানি শুরু হয়ে মোট ৩৯ কার্যদিবস শুনানি হয়।

মুক্তিযুদ্ধকালে মোস্তফা নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে ২০০৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর কাদের মোল্লাসহ কয়েকজন জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়। এছাড়া ২০০৮ সালে পল্লবী থানায় আরো একটি মামলা হয় । এ মামলাতেই ২০১০ সালের ১৩ জুলাই তাকে গ্রেফতার করা হয়।

২০১১ সালের ১ নভেম্বর কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে হত্যা, খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি ঘটনায় অভিযোগ আনে রাষ্ট্রপক্ষ।

এরপর ২৮ ডিসেম্বর অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। গতবছর ২৮ মে ট্রাইব্যুনাল-২ অভিযোগ গঠন করে। এরপর সাক্ষ্যগ্রহন ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে চলতি বছর ১৭ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে। এরপর ৫ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণা করে।

(দ্য রিপোর্ট/জেকে/এইচএসএম/ডিসেম্বর ০৫, ২০১৩)