ভিডিও বার্তার ব্যাখ্যা দিলেন সালাহউদ্দিন
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : সরকার দেশে আফগানিস্তানের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মুখপাত্র সালাহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেছেন, ‘সরকার সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিংয়ের অধিকার হরণ, বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে সব সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার নিয়ন্ত্রণ করছে। সংবাদ সম্মেলন বা উন্মুক্ত পরিবেশে দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা করার মতো কোনো নিরাপদ জায়গা অবশিষ্ট রাখেনি এ ফ্যাসিস্ট সরকার। তাই আমরা বাধ্য হয়ে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের অবস্থান ও কর্মসূচি ঘোষণা করছি।’
নির্দলীয় সরকারের দাবিতে চলমান অবরোধ কর্মসূচির শেষ দিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। বিবৃতিতে সালাহউদ্দিন আহমেদ অজ্ঞাত স্থান থেকে বার্তা পাঠানোর সপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শুক্রবার বাদ জুমা সারাদেশের থানা, উপজেলা সদরে এবং মহানগরীর থানায় থানায় আন্দোলনে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় গায়েবানা জানাজা কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি।
এছাড়া শনিবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত টানা ৭২ ঘণ্টা দেশব্যাপী রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথে শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচিরও ঘোষণা দেন দলের এ যুগ্ম মহাসচিব।
ভিডিও বার্তার মাধ্যমে কর্মসূচি ঘোষণাকে তাচ্ছিল্য করে বুধবার বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে বিএনপির মুখপাত্র বলেন, ‘দেশের সব সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং বিধিবিধান বিলুপ্তপ্রায়। তাই আমরা বাধ্য হয়ে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে কর্মসূচি ঘোষণা করছি।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সরকারি পেটোয়া বাহিনী বৃষ্টির মতো গুলি করে রাজপথে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সাথীদের নির্বিচারে হত্যা করছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা ডজন ডজন মিথ্যা মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে নিরন্তর ঘরছাড়া।’
তিনি অভিযোগ করেন, বিরোধী দলের প্রধান কার্যালয় অবরুদ্ধ রেখে মধ্যযুগীয় কায়দায় দরজা ভেঙে চুরমার করে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। ইতোপূর্বেও একই কায়দায় দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ একশ চুয়ান্ন নেতাকর্মীকে দলের প্রধান কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করা হয়।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘সাম্প্রতিককালে দলের সিনিয়র নেতা যথাক্রমে জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এমপি, এম কে আনোয়ার এমপি, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুল আউয়াল মিন্টু, মীর মোহাম্মাদ নাসিরউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকার এবং চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসকে বিনা কারণে সাজানো মামলায় গ্রেফতার করা হয়।’
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘বুধবার রাতে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকাকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়। এ সব সিনিয়র নেতাসহ সারাদেশে ইতোপূর্বে আন্দোলন করতে গিয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় গ্রেফতার ও অসংখ্য নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারপূর্বক নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী একদলীয় বাকশাল থেকে আওয়ামী লীগ করার অপূর্ব সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস-তিনি পুনরায় পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় বাকশাল পদ্ধতির সরকার প্রতিষ্ঠার দুঃস্বপ্ন দেখছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘শহীদের রক্তে রঞ্জিত রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করেই এদেশের গণতন্ত্রপ্রেমী জনগণ স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নসাধ চুরমার করে দেবে। আমরা ইতোপূর্বে অনেকবার বলেছি সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ভাষা রুদ্ধ হয়ে গেলে অনিয়মতান্ত্রিক উগ্রপন্থা উৎসাহিত হয়। এর ফলে গণতন্ত্র ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং এ দেশে সেই রকম উদ্ভুত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তার দায় দায়িত্ব এ ফ্যাসিস্ট সরকারকেই নিতে হবে।’
খালেদা জিয়ার আহ্বানের কথা উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা অতীতমুখী রাজনীতি করতে চাই না। জাতি শান্তি চায়। নিরাপত্তা ও অগ্রগতি চায়। আসুন আমরা সামনের দিকে অগ্রসর হই। নতুনভাবে শুরু করি। আমরা এখনো আশা করি, সরকার শান্তির পথে এগুবে। নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নেবে। নির্বাচনী তফসিল বাতিলের ব্যবস্থা নেবে।’
(দ্য রিপোর্ট/টিএস/এনডিএস/ডিসেম্বর ০৫,২০১৩)