রাজু আহমেদ, বালি (ইন্দোনেশিয়া) থেকে : জিএসপি সুবিধা বহাল রাখতে প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণে বাংলাদেশের পাশে থাকবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীকে দেওয়া এক চিঠিতে এ কথা জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাণিজ্য কমিশনার কারেল দ্য গুট। ডব্লিউটিও'র মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন উপলক্ষে গুট ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে অবস্থান করছেন।

উল্লেখ্য, বুধবার ইন্দোনেশিয়ার বালিতে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশকে জিএসপি ইস্যুতে সতর্ক করে দিয়েছিলেন।

ভবন ও অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নে আগামী দিনেও প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে ইউরোপের ২৮টি দেশের এ ফোরাম। তবে এ বিষয়ে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা দেখতে চায় তারা। কর্মপরিবেশ উন্নয়নে করা চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের নেওয়া বিভিন্ন ব্যবস্থার প্রশংসাও করেছেন গুট।

বাংলাদেশের সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ইইউতে অগ্রাধিকারমূলক বা শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা ধরে রাখতে হলে বাংলাদেশকে অবশ্যই শ্রম অধিকার ও কারখানা নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দৃশ্যমান উন্নতি ঘটাতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যর্থ হলে শুল্কমুক্ত সুবিধা বা জিএসপি বাতিলের মত কঠোর ব্যবস্থা নিতে হতে পারে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে ইইউ গত জুলাইয়ে জেনেভায় বাংলাদেশ, ইইউ ও আইএলও'র মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির বাস্তবায়ন অগ্রগতির জন্য সরকারের প্রশংসা করা হয়েছে। বিশেষ করে শ্রম আইন সংশোধন, কারখানা পরিদর্শনের জন্য নতুন পরিদর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুসহ কিছু ব্যবস্থাকে ইতিবাচক হিসেবে অভিহিত করেছে সংস্থাটি।

তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কারখানার পরিবেশ উন্নয়ন ও নিরাপত্তা বাড়ানোর ইস্যুতে তারা অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে বাংলাদেশের পাশেই থাকবেন।

উল্লেখ, তাজরীন ফ্যাশনের অগ্নিকাণ্ড ও রানা প্লাজা ধসে অসংখ্য শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের নিরাপত্তা ইস্যুটি আলোচনায় উঠে আসে। এ বিষয়টিকে অজুহাত বানিয়ে গত জুন মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা বা জিএসপি বাতিল করেছে।

এর পরপরই আশংকা দেখা দেয়, ইউরোপিয় ইউনিয়নও জিএসপি বাতিল করতে পারে। এমন অবস্থায় জুলাইয়ে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ইইউ ও আইএলওর সঙ্গে কারখানার পরিবেশ ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার উন্নয়নে বাংলাদেশের চুক্তি হয়।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশি পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার। বর্তমানে ইইউর বাজারে বাংলাদেশ বছরে প্রায় দেড় হাজার কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করে। বাংলাদেশের রফতানি আয়ের প্রায় ৬০ ভাগ আসে এ অঞ্চল থেকে। দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্য ইবিএ (অস্ত্র ব্যাতিত সব কিছু) সুবিধার আওতায় শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পায়। এ সুবিধা না পেলে অন্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশি পণ্যকেও সাড়ে ১২ শতাংশ হারে শুল্ক দিতে হতো। এটি আমাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতাকে ব্যাহত করতো।

(দ্য রিপোর্ট/আরএ/এইচএসএম/ডিসেম্বর ০৫, ২০১৩)