বাহরাম খান, দ্য রিপোর্ট : দেশে এসেই মালয়েশিয়া ফেরত প্রবাসী মো. জাহাঙ্গীর তার সর্বস্ব হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন ছুরিকাঘাতে। সঙ্গে থাকা ডলার, টাকা, স্বর্ণসহ প্রায় সাত লাখ টাকা মূল্যের জিনিসপত্র ছিনতাই হয়েছে বলে দ্য রিপোর্টকে জানান জাহাঙ্গীর।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বুধবার রাতে গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ যাওয়ার পথে কুমিল্লার লাকসামে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন তিনি।

ছিনতাইকারীদের আঘাতে জাহাঙ্গীরের মাথা, ঘাড়, বাম বাহু, বাম পায়ের উরু জখম হয়েছে। রক্তক্ষরণে ভিজেছে জামা-প্যান্ট। আন্ডার ওয়ারের ভেতরে থাকা ডলার ও স্বর্ণ নিতে সামান্য সময় না দিয়ে প্যান্ট কেটেই সেগুলো নিয়ে গেছে। কাটা প্যান্টটি এ প্রতিবেদককে দেখিয়ে বলছিলেন জাহাঙ্গীর।

ঘটনার পর জখম গুরুতর হওয়ায় জাহাঙ্গীরকে দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন প্রাইভেটকারের চালক। হাসপাতালে বৃহস্পতিবার সকালে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে কথা হয়।

তিনি জানান, বুধবার রাত পৌনে নয়টায় শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে পা রাখেন। অবরোধের কারণে বাড়ি থেকে ভাড়া করে রাখা গাড়ি পাঠাতে পারেনি তার পরিবার। তাই বিমানবন্দর থেকে একটি গাড়িতে অপরিচিত আরেকজনের সঙ্গে যৌথভাড়ায় বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

জাহাঙ্গীর জানান, তার অপরিচিত সহযাত্রী কুমিল্লার চান্দিনায় নেমে যান। লাকসাম এলাকায় যেতেই রাস্তায় গাছ ফেলে অবরোধ তৈরি করে গাড়ি থামিয়ে ছিনতাই শুরু করে দুর্বৃত্তরা। এসময় তার সঙ্গে থাকা ডলার, টাকা, স্বর্ণসহ পাসপোর্ট এবং ফিরতি টিকেটও নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।

জাহাঙ্গীর দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সাড়ে সাত বছর আগে বিদেশ (মালয়েশিয়া) গেছি । এতদিনের সব রোজগার শেষ হয়ে গেল। ছিনতাইকারীদের বলেছি সব নিয়ে যা, তবুও আমাকে আঘাত করিস না। তারা শোনে নাই।’

অপরিচিত গাড়ি এবং সহযাত্রীর সঙ্গে কেন চড়লেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সারারাত কোথায় থাকব। সঙ্গে থাকা ডলার, সোনা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। গাড়িওয়ালা বলছিল কোনো সমস্যা হলে দেখবেন।’

গাড়ির ড্রাইভার নূরে আলমের কাছে এ ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘রাস্তার মাঝে গাছ দেখে দ্রুত গাড়ি ঘোরাতে চাই। এসময় পাঁচ-ছয়জনের একদল মানুষ গাড়ি ঘিরে ধরে।’

ছিনতাইয়ের শিকার জাহাঙ্গীর বলেন, ড্রাইভারকে ছিনতাইকারীরা কোনো আঘাত করেনি। শুধু আমাকে আঘাত করেছে। ড্রাইভারের সঙ্গে ছিনতাইকারীদের যোগসাজশ বিষয়ে সন্দেহ পোষন করেন তিনি। এই বিষয়ে লাকসাম থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে বলে জানান জাহাঙ্গীরের সঙ্গে থাকা মো. ইয়াসিন।

উল্লেখ্য, প্রবাসী আয় বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক আয়ের খাত। বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্বের ১৫৭ দেশে বাংলাদেশের ৮৫ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেব অনুযায়ী গত বছর প্রবাসীরা ১৪.২ বিলিয়ন ডলার (৪২০ কোটি টাকা) বাংলাদেশে পাঠিয়েছেন। প্রতি বছর এর পরিমাণ বাড়ছে। চলতি বছরের নভেম্বর মাস শেষে আয়ের পরিমাণ ১১.৫৬ বিলিয়ন ডলার। ডিসেম্বর মাস শেষে গতবারের তুলনায় এবার প্রবাসী আয় কম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রায় প্রতি বছর প্রবাসী আয় বেড়ে আসছিল। এবার এমন হওয়ার কারণ কি? এ প্রশ্নের উত্তরে রামরুর সিনিয়র গবেষক পারভেজ সিদ্দিকী দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে অনেক প্রবাসী বিনিয়োগ কমে গেছে। একারণেই এবার রেমিট্যান্স প্রবাহ কম। সেইসঙ্গে আমাদের শ্রমবাজারগুলোর প্রত্যাশিত সাড়া পাওয়া যায়নি।’

বিশেষজ্ঞদের অভিমত, ঠিকমতো দেখভাল করতে পারলে বাংলাদেশের প্রবাসী আয় ২০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব। এর জন্য দরকার নতুন নতুন বাজার খোঁজ করা এবং প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানে আন্তরিক উদ্যোগ নেওয়া।

প্রবাসীদের আসা-যাওয়াসহ সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা শোনা যায়। অনেক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় বিভিন্ন পক্ষ থেকে। প্রকৃত অর্থে তেমন কোনো ব্যবস্থাপনা দেখা যায় না।

জানতে চাইলে রিফিউজি এ- মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্স ইউনিট-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. তাসনিম সিদ্দিকী দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘বিভিন্ন সময় সরকারের পক্ষ থেকে অনেক ধরনের প্রতিশ্রুতির কথা বলা হয়েছে। সেগুলো বাস্তবায়ন তো দূরের কথা সেসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের চিন্তাও সরকার করেনি। এটা খুবই দুঃখজনক।’

কি ধরনের প্রতিশ্রুতি ছিল? উত্তরে ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, ‘প্রবাসীদের যাওয়া আসার ক্ষেত্রে সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সরকারের। যেমন যাওয়ার আগে তারা কোথায় থাকবেন। একজন প্রবাসী এসে কোথায় থাকার সুবিধা পাবেন। নিরাপদে কীভাবে তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছাতে পারেন, এসব বিষয়ে সহযোগিতার বিষয় আছে।’

এই ক্ষেত্রে কী করা উচিত? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রেডিও, টেলিভিশনসহ সব ধরনের প্রচার মাধ্যমে প্রচারণার কাজ করতে হবে। যে ব্যক্তি তার সর্বস্ব হারালো তিনি যদি তার টাকাগুলো ব্যাংকের মাধ্যমে আনতেন তাহলে হয়তো এত ক্ষতির স্বীকার হতেন না। সবাইকেই সজাগ হতে হবে।’

(দ্য রিপোর্ট/বিকে/এইচএসএম/ডিসেম্বর ০৫, ২০১৩)