দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা সর্বশেষ ৬ দিনের অবরোধে ৩০ জন নিহত হয়েছেন। গত শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নাশকতা ও সহিংসতায় মারা যান এরা।

অবরোধ চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে রেলপথ ও সড়কপথে নানা নাশকতা এবং রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে রেলপথে নাশকতা ছিল নজিরবিহীন। দেশের বিভিন্ন স্থানে রেললাইন ও ট্রেনের বগিতে অগ্নি সংযোগের একের পর এক ঘটনা ঘটেছে। ফিসপ্লেট খুলে ফেলার কারণে চলন্ত ট্রেন লাইনচ্যূত হওয়ায় হতাহতের ঘটনা বেড়ে যায়। এর মধ্যে গাইগান্ধায় রেলে নাশকতায় প্রাণ হারান ৫ জন সাধারণ মানুষ।

সড়কপথে গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগ, ককটেল ও পেট্রল বোমার বিস্ফোরণের ফলে বেড়ে যায় অগ্নিদগ্ধ মানুষের সংখ্যা। এসব নাশকতায় বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। আহত হন অসংখ্য মানুষ।

এছাড়া অবরোধকারী ও অবরোধবিরোধী সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংঘর্ষ ও চোরাগুপ্তা হামলার ঘটনায় বেশ কয়েকজন প্রাণ হারান। অবরোধে হামলা হয়েছে সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের গাড়িতেও। আটক হয়েছেন আরটিভির ২ সাংবাদিক। এছাড়া নাশকতার চেষ্টার অভিযোগে ও মামলায় বিভিন্ন স্থান থেকে আটক হয়েছেন বহু নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ।

নির্বাচনের তফসিল বাতিলের দাবিতে ১৮ দলীয় জোট দ্বিতীয় দফা এ রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধের ডাক দেয়। ৩০ নভেম্বর শনিবার প্রথম দিনে সহিংসতায় প্রাণ হারান চারজন। এর মধ্যে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে ছাত্রশিবিরের এক কর্মী এবং পাবনার ঈশ্বরদীতে যুবদলের এক কর্মী নিহত হন। এ ছাড়া রাজধানীর মালিবাগে ও চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় নিহত হন দুজন পথচারী।

রোববার দ্বিতীয় দিনে সহিংসতায় কেউ নিহত না হলেও প্রথম দিনে সহিংসতায় নিহত চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া শনিবার বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার দুই স্থানে গাড়ি চাপায় দুজন মারা যান।

অবরোধ কর্মসূচির তৃতীয় দিনে নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও চট্টগ্রামে তিনজন প্রাণ হারান। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে কানসাট আন্দোলনের নেতা আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম রাব্বানীর বাড়িতে হামলা চালানো হয়। তারা রাব্বানীর বড় ভাই ফিটু মিয়ার বাড়িতেও আগুন লাগিয়ে দেয়।

বিএনপির নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদারের মুক্তির দাবিতে নাটোরে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলাকালে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে সুজন নামের এক যুবক মারা যান। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় পিকেটারদের ইটের আঘাতে মো. ইসমাইল নামের এক সিএনজি অটোরিকশ চালক নিহত হন।

৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার অবরোধে সহিংসতা ছিলো সবচেয়ে বেশি। এদিন আরো নয়জন নিহত হন। সাতক্ষীরায় তিনজন, চট্টগ্রামে দুজন, চাঁদপুরে দুজন ও নোয়াখালীতে একজন প্রাণ হারিয়েছেন। আর সোমবার রাতে সীতাকুন্ডে নিহত হন একজন। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন পাঁচজন।

গত বুধবার অবরোধের মধ্যে আরো দশ জন নিহত হন। এর মধ্যে গাইবান্ধায় রেলে নাশকতায় পাঁচজন প্রাণ হারিয়েছেন। এ ছাড়া সাতক্ষীরা, কিশোরগঞ্জ ও ফেনীতে তিনজন মারা যান। ঢাকায় বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন একজন এই দিন প্রাণ হারান। ঢাকার নবাবগঞ্জে অবরোধের সময় পুলিশের ধাওয়া খেয়ে অসুস্থ হয়ে যুবদলের এক নেতা মারা যান। ফেনীতে জেলা যুবদলের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে যুবদলের নেতা হারুনুর রশিদ মারা যান।

কিশোরগঞ্জের চৌদ্দশত বাজারে অবরোধকারীদের ধাওয়ার মুখে নিয়ন্ত্রণ হারানো একটি পিকআপ ভ্যানের যাত্রী উজ্জ্বল সরকার নিহত হন। সাতক্ষীরায় অবরোধ চলাকালে আলাউদ্দিন খোকন নামের এক মুক্তিযোদ্ধাকে কুপিয়ে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের মিছিল থেকে ভাঙচুরের চেষ্টা করা হলে পুলিশ ধাওয়া দিলে জাহাঙ্গীর আলম নামে যুবদলের এক নেতা হৃদরাগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ঢাকায় শাহবাগে গত ২৭ নভেম্বর বাসে পেট্রল বোমা হামলায় দগ্ধ ঢাকা কলেজের ছাত্র ওহিদুর রহমান ওরফে বাবু মারা যান গত বুধবার।

বৃহস্পতিবার অবরোধের শেষ দিনে সকালে রাজধানীর সায়দাবাদের জনপথ মোড়ে ইসরাত পরিবহনের একটি বাসে দুর্বৃত্তদের দেওয়া পেট্রোল বোমার আগুনে দগ্ধ হন বাসের চালকের সহকারী হাসান। হাসান বাসে ঘুমিয়ে ছিলো। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে মারা যায় সে।

গত শনিবার ডাকা অবরোধ মঙ্গলবার সকাল ছয়টায় শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরে এ কর্মসূচি আরো ৫৯ ঘণ্টা বাড়িয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত করা হয়। শুক্রবারের একদিনের বিরতির পর আবারো আগামী শনিবার সকাল ছয়টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ছয়টা পর্যন্ত সারা দেশে অবরোধের ডাক দিয়েছে ১৮ দলীয় জোট।

(দ্য রিপোর্ট/আরএমএম/এমডি/ডিসেম্বর ০৬, ২০১৩)