বশ মানছেন না এরশাদ : ফের ভাঙছে জাপা
সাগর আনোয়ার, দ্য রিপোর্ট : কোনোভাবেই বশ মানানো যাচ্ছে না সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে। সরকারের পক্ষ থেকে ভয়ভীতি প্রদর্শন, দফায় দফায় প্রস্তাব পেশ, আগের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মঞ্জুর হত্যা মামলা থেকে অব্যাহতি, শতাধিক আসন ও নির্বাচনের জন্য যা খরচ সব দেওয়ার আশ্বাসের পরও নির্বাচনে রাজি হচ্ছেন না এরশাদ।
বারিধারার কার্যালয়ে থাকা জাতীয় পার্টির একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এরশাদের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া একজন প্রতিমন্ত্রীর কাছ থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জাপা সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, রবিবারের মধ্যে এরশাদ নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা না করলে আরেক দফা ভাঙনের মুখে পড়বে জাতীয় পার্টি। নির্বাচনকালীন সরকারে জাপার মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে দিয়ে আরেকটি জাতীয় পার্টি গঠন করে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন করানো হবে।
জানা গেছে, নতুন আরপিও অনুযায়ী পার্টির চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়া দলীয় প্রতীক নিয়ে কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। সেক্ষেত্রে সরকার জাপা (আনিস-বাবলু) কে লাঙ্গল প্রতীক দিয়েও নির্বাচন করাতে পারে।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এরশাদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সরকার তো অনেক কিছুই করছে। সব তো আর বলাও যায় না। তবে এরশাদ সাহেব হলেন ইমাম। আমরা ইমামের পেছনে আছি।’
তিনি বলেন, ‘কেউ যদি এই মহূর্তে এরশাদ সাহেবকে মাইনাস করে অন্যকিছু করার চেষ্টা করেন, সেটা কতটুকু ফলপ্রসূ হবে সেটাই দেখার বিষয়। তাদের সঙ্গে নেতাকর্মী তো দূরের কথা সমর্থকও যাবে না।’
জাপা সূত্রে জানা গেছে, ‘বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত রওশন এরশাদ মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগে আগ্রহী ছিলেন না। পরে এরশাদের শেষ অনুরোধ হিসেবে তিনি পদত্যাগে রাজি হন। এরপর জাপা মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার ও মুজিবুল হক চুন্নু রওশন এরশাদকে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান। রুহুল আমিন হাওলাদার এরশাদের অবস্থান প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন এবং নিজেদের পদত্যাগপত্র জমা নিতেও অনুরোধ জানান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির দেশে ফেরার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা এবং এরশাদের আগের প্রস্তাবগুলো বিবেচনার আশ্বাস দেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় রুহুল আমিন হাওলাদারকে এরশাদের সঙ্গে আলোচনা করার কথা বলেন। পরে এ তিনজনই বৃহস্পতিবার ২টা ৩৪ মিনিটে এরশাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন।
জাপা সূত্রে জানা গেছে, সমঝোতার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পরই প্রধানমন্ত্রী জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও নারীবিষয়ক উপদেষ্টা জিয়াউদ্দিন বাবলুর সঙ্গে বৈঠক করেন। তখনই এরশাদ নির্বাচনে না এলে বিকল্পপন্থা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী দুই নেতার সঙ্গে কথা বলেন।
জাপার একজন মন্ত্রীর দাবি, ‘ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর এরশাদের সঙ্গে দেখা করলেও এ দুই নেতা এখনও এরশাদের কাছে তাদের পদত্যাগপত্র জমা দেননি। বরং এ দুইজন নেতা গণমাধ্যমকে সমঝোতার চেষ্টা চলছে বলে তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছেন।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য শুক্রবার সকাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন বাবলুকে মেসেজ ও ফোন দেওয়া হলেও তিনি কথা বলেননি।
সরকার পার্টি ভাঙার চেষ্টা করছে দাবি করে বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কে এরশাদের উপদেষ্টা রিন্টু আনোয়ার দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সরকার তো নানা চেষ্টাই করছে। স্যারের একজন নিকটাত্মীয়কে দিয়েও সমঝোতার চেষ্টা করেছেন। তবে স্যার (এরশাদ) জীবনের শেষ সময়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবেন না।’
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রুহুল আমিন হাওলাদার দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘পার্টির চেয়ারম্যানের কাছে আমিসহ পাঁচজন পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। বাকি একজন মন্ত্রী ও একজন উপদেষ্টাও পদত্যাগের ইচ্ছা পোষণ করেছেন। এর বেশি কিছু বলা যাবে না।’
এদিকে শুক্রবার সকালে গণমাধ্যমকে এরশাদ জানান, ‘আমি আমার সিদ্বান্তে অনড় আছি। সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোন সুযোগ নেই। ’
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে এরশাদের ব্যক্তিগত সহকারী মেজর (অব.) খালেদ এরশাদের বরাত দিয়ে বলেছিলেন,‘ পার্টির সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ যদি পদত্যাগ না করে তাহলে তাকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হবে।’
প্রসঙ্গত ৩ ডিসেম্বর হঠাৎ করেই বনানীর কার্যালয় থেকে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেন এরশাদ। এরপর প্রায় ২৭ ঘন্টা ‘নিখোঁজ’ থাকার পর মন্ত্রিসভা থেকে জাপার মন্ত্রীদের পদত্যাগ ও সারাদেশের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন।
(দ্য রিপোর্ট/সাআ/এস/এইচএসএম/ডিসেম্বর ০৬, ২০১৩)