কাছের মানুষদের চোখে ম্যান্ডেলা
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : স্বাধীনতাকামী যোদ্ধা, বন্দি, দিক নির্দেশক ও দক্ষিণ আফ্রিকায় জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতীক তিনি। সাধারণভাবে জীবন শুরু হয়েছিল তার। সাধারণ মানুষের জন্যই আজীবন লড়াই করেছেন তিনি। গণমানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে জীবনের সুদীর্ঘ ২৭ বছর কাটিয়েছেন কারাগারে। কয়েদি থেকে হয়েছেন দেশের প্রেসিডেন্ট। উদারতা, সাহস ও নৈতিকতার জন্য ঠাঁই করে নিয়েছেন মানুষের মনে। তিনি ছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা।
তবে গণমানুষের এই মহান নেতাও ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন কারো স্বামী, বাবা, ভাই ও বন্ধু। কাছের মানুষদের কাছে কেমন ছিলেন তিনি? ম্যান্ডেলার বন্ধু ও স্বজনরা জানাচ্ছেন সে গল্প।
ম্যান্ডেলার সৎ ভাই সিতশেকেতশে অ্যারন মুউরাইস ম্যান্ডেলা বলেন, ‘বাবার মৃত্যুর পর নেলসন পড়াশোনার জন্য বাড়ির বাইরে চলে যান। ছুটির দিনগুলোতে নেলসন বাড়িতে আসতেন। আমরা ছোটরা ভীষণ অসল ছিলাম। ভেড়া ও পশুগুলো চরাতে যেতে আলস্য লাগতো আমাদের। এজন্য ম্যান্ডেলা আমাদের তিরষ্কার করতেন।
তিনি বলেন, ‘ম্যান্ডেলা লাঠি খেলা পছন্দ করতেন। আসলে তিনিই আমাদের শিখিয়েছিলেন লাঠি খেলায় কীভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হয়।’
ম্যান্ডেলার বন্ধু মাক্সওয়েল বামবাটা তাদের বেড়ে ওঠার কথা স্মরণ করে বলেন, ‘আমার আর রোলিহ্লাহ্লার (ম্যান্ডেলা) একই বছর জন্ম। আমরা একসঙ্গে কত যে খেলেছি, তার ইয়াত্তা নেই। ফল খোঁজার জন্য আমরা পুরো এলাকা চষে বেড়িয়েছি।’
ম্যান্ডেলার লাঠি খেলার প্রতি ভালোবাসার কথাও জানান ম্যাক্সওয়েল।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে খেলা শেষ করে ও স্কুলের বাচ্চাদের সঙ্গেও খেলতে যেত।’
ম্যান্ডেলা বেশ পরিশ্রমীও ছিলেন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, খেলা শেষে ম্যান্ডেলা তার বাবার পশুগুলোকে বাড়ি নিয়ে যেতেন।
ম্যান্ডেলা মেয়েদের সঙ্গে খেলতেও পছন্দ করতেন বলে জানান তিনি।
ম্যান্ডেলার সঙ্গে কারাবন্দি ছিলেন আহমেদ কাথরাদা। তিনি রোবেন দ্বীপে তাদের কারারুদ্ধ দিনগুলোর কথা স্মরণ করে বলেন, ম্যান্ডেলা কারাগারে অসাধারণ শৃঙ্খলার সঙ্গে দিন কাটিয়েছেন।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ক্রিস্টমাসের সময় আমাদের প্রচুর পরিমাণে মিষ্টি, বিস্কুট ও শুকনো ফল কেনার অনুমতি দেওয়া হতো। ম্যান্ডেলা মিষ্টির মতো পচনশীল খাবার ছাড়া অন্য খাবারগুলো ডিসেম্বর থেকে জুলাইয়ের ১৮ তারিখ পর্যন্ত রাখতেন। ১৮ জুলাই ছিল ম্যান্ডেলার জন্মদিন। ওই দিন আরেক রাজনৈতিক বন্দি ফিকিলে বামেরও জন্মদিন ছিল। তাকে দেওয়ার জন্য ম্যান্ডেলা ওই খাবারগুলো রেখে দিতেন। আমরা কেউেই এতোদিন পর্যন্ত খাবার রাখতে পারতাম না। কিন্তু ম্যান্ডেলা ঠিকই রাখতেন।’
তিনি জানান, ম্যান্ডেলা খুবই পড়ুয়া ছিলেন। তিনি যাই করতেন, পুরোপুরিই করতেন।
৫ ডিসেম্বর জীবনাবসান হয় পরিবারের কাছে দুরন্ত, বন্ধুদের কাছে দুষ্টু ও সতীর্থদের কাছে কঠোর উদ্যোমী এ অবিসংবাদীত নেতার। তবে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তার মতো মহান নেতার অধ্যায় শেষ হতে পারে না। তিনি অমর হয়ে থাকেবেন বিশ্বের সব শান্তিকামী মানুষের মনে। সূত্র: বিবিসি
(দ্য রিপোর্ট/কেএন/ডিসেম্বর ০৬, ২০১৩)