দিরিপোর্ট২৪ প্রতিবেদক : চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমে আসবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বুধবার বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ডেভলাপমেন্ট আপডেট শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালে দেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৫.৭ শতাংশ। যা বর্তমানে রয়েছে ৬ শতাংশ। এর প্রধান কারণগুলো হচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিশীলতা, পোশাকশিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি ও বিনিয়োগে মন্দা।

সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কান্ট্রি ডিরেক্টর জোহানেস জাট বলেন, রাজনৈতিক সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের উপর নির্ভর করছে আর্থিকখাতের সংস্কার, বিনিয়োগ এবং প্রবৃদ্ধি উন্নয়নের বিয়য়টি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক আইএলও’র সঙ্গে পোশাকশিল্পের উন্নয়নে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে এবং ভবিষ্যতে ব্যাপকভাবে কাজ করার পরিকল্পনা ররেছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকে যে রিজার্ভ রয়েছে (১৭ বিলিয়ন ডলার) তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে সন্তোষজনক কিন্তু অতিরিক্ত নয়।

মূল্যস্ফীতি আন্তর্জাতিক কারণে নয় অভ্যন্তরীণ কারণে বাড়তে পারে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। এক্ষেত্রে বলা হযেছে, উৎপাদন এবং চাহিদা চেইন যদি ঠিক না থাকে তাহলে শহরে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে।

এতে বলা হয়, পোশাকশিল্পের উন্নয়নে সরকারের চলমান উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নে বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ সকল সংস্থার মধ্যে সমন্বয় থাকা দরকার । তা ছাড়া রাজনৈতিক কারণে পোশাকশিল্পের সাফল্য ধরে রাখা সম্ভব হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি জিএসপি সুবিধা স্থগিত বা বাতিল করে তাহলে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হবে বাংলাদেশের। এ ক্ষেত্রে বর্তমান রফতানি থেকে ৪.১ থেকে ৮.১ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে ৬ শতাংশ। যদিও ২০১১-১২ অর্থবছরে তা ছিল ৬.২ শতাংশ। আর ২০১১-১২ অর্থবছরে তা ছিল ৬.৭ শতাংশ। রাজনৈতিক অস্থিরতার পাশাপাশি বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস ও অবকাঠামো উন্নয়নের দুবর্লতায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ধীর গতি প্রতিফলিত হয়েছে। ফলে দেশের বেসরকারি বিনিয়োগ ২০১১-১২ অর্থবছরের চেয়ে ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১.২ শতাংশ কমেছে।

প্রতিবেদনে বলেছে, চাপের মুখে রয়েছে ব্যাংকি খাত। আর ঋণখেলাপির ঘটনা ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়াত্বের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে বলে মনে করে সংস্থাটি। আর তাই এ বিষয়ে দ্রুততার সঙ্গে গুরুত্ব আরোপের কথা জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এছাড়া গত অর্থবছর জুড়ে শেয়ারবাজারের অবস্থাকে ‘দুর্বল কার্যক্রম’ বলে উল্লেখ করা হয়।

ওই প্রতিবেদনে গত অর্থবছরের মূল্যস্ফীতি এবার অনেকটা কমে এলেও এর হার উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলেছে, গত অর্থবছরে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৮.৭ শতাংশ থেকে ৬.৮ শতাংশে নেমে আসে। মূলত উৎপাদন বৃদ্ধি, বড় আমদানিকারক দেশের চাহিদা হ্রাস ও বিভিন্ন দেশের খাদ্য মজুদ হ্রাস পাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমেছে। এদিকে চলতি অর্থবছরে আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৭.৪ শতাংশ। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ব্যাংকও তাদের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত রেখেছে।

প্রকাশিতব্য প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছে, সার্বিকভাবে দেশের আমদানি কমে আসা ও রফতানি বাড়ায় বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৭০০ কোটি ডলার। যা আগের অর্থবছরে ছিল ৯৩০ কোটি ডলার।

বিশ্বব্যাংক মনে করছে, গত অর্থবছরের রাজস্ব নীতি ছিল বাজেট অনুযায়ী সামঞ্জস্যপূর্ণ। অনুদান বাদে বাজেটে ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রা ছিল জিডিপির ৫ শতাংশ। তবে অর্থবছর শেষে তা হয় ৪.৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪.৬ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থার উন্নতি হওয়ায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বর্ধিত ঋণ সুবিধা সঠিক পথে রয়েছে। নতুন মূল্যসংযোজন কর আইন প্রায়োগিক অবস্থায় রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ইতোমধ্যে অনলাইনে আয়কর রেজিস্ট্রেশন ও ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা হয়েছে। এগুলো সার্বিক র্অথনীতিকে ইতিবাচক ধারায় পরিচালিত করবে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক।

(দিরিপোর্ট২৪/জেজে/আইজেকে/জেএম/অক্টোবর ২৩, ২০১৩)