দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : আমেরিকান ভাষাবিদ, যুক্তিবিদ ও দার্শনিক নোয়াম চমস্কি ১৯২৮ সালের ৭ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ায় এক ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। রাজনৈতিক বক্তা ও একিভিস্ট পরিচয়ে তিনি সাধারণ মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি পরিচিত। তাকে আধুনিক ভাষাতত্ত্বের জনক বলা হয়। তিনি বর্তমান বিশ্লেষণী ধারার দর্শনের অন্যতম পুরোধা। ২০০৫ সালে এক জরিপে তিনি ওয়ার্ল্ডস টপ পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল নির্বাচিত হন। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি সারা বিশ্বে বুদ্ধিজীবীদের অনুপ্রেরণা। তার কাজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, গণিত, সংগীত ও কম্পিউটার বিজ্ঞানসহ বিচিত্র বিষয়কে প্রভাবিত করছে প্রতিনিয়ত।

উইলিয়াম চমস্কি এবং এলসি চমস্কি দম্পতির সন্তান নোয়াম চমস্কির পুরো নাম আভ্রাম নোয়াম চমস্কি। তরুণ বয়সে তিনি নিউ ইয়র্কের এনার্কিস্টদের দ্বারা প্রভাবিত হন। ১৯৪৫ সালে দর্শন ও ভাষাতত্ত্বের ওপর পড়াশোনা শুরু করেন পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে।১৯৪৯ সালে দর্শন ও ভাষাতত্ত্বে বিএ ডিগ্রি নেয়ার পর ১৯৫১ সালে হিব্রু ভাষার ওপর অনার্সসহ মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। এরপর ১৯৫৫ সালে ভাষাতত্ত্বের ওপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। চমস্কি ১৯৫৫ সালে ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজিতে গবেষক হিসেবে যোগ দেন। এ প্রতিষ্ঠানেই এখনো শিক্ষক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন ভাষার ওপর। বর্তমানে তিনি প্রফেসর ইমিরেটাস পদে আছেন।

তিনি ভাষাবিজ্ঞানে তার উল্লেখযোগ্য কাজ হলো সর্বজনীন ব্যাকরণ। এই মতে, মস্তিষ্কে ভাষা ক্ষমতা অর্জনের প্রোগ্রাম সেট করা থাকে। এটি চিত্রের মাধ্যমে শিশুর মাঝে জেগে ওঠে। মানুষের মস্তিষ্কে যেমন ঘুমের ব্যবস্থা, হাঁটার ব্যবস্থা জেগে ওঠে ঠিক তেমনি ভাষা চর্চার ব্যবস্থা জেগে ওঠে। পরিবেশ ও অভিজ্ঞতা এ জেগে ওঠা ব্যবস্থাকে বিশেষায়িত করে মাত্র। এভাবে চমস্কির কাজের মাধ্যমে সর্বজনীন ব্যাকরণ শব্দটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। চমস্কি পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের ভাষা নিয়ে গবেষণা করে দেখিয়েছেন, ভাষাগুলোর ব্যাকরণের মধ্যে অনেক সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম মিল রয়েছে। পৃথিবীর সব ভাষার মধ্যে সর্বজনীন ব্যাকরণ রয়েছে, যেটি মস্তিষ্কের গঠনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

আদর্শিকভাবে এনার্কো-সিন্ডিক্যালিজম ও লিবারেটিয়ান সোশ্যালিজমের সমর্থক চমস্কি দুনিয়াব্যাপী চলা সাম্রাজ্যবাদী নিপীড়নের বিরুদ্ধে তরুণ বয়স থেকে সোচ্চার। ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার বিরুদ্ধে জনমত গঠনে তিনি ভূমিকা রাখেন। তিনি এডওয়ার্ড এইচ হ্যারমানের সঙ্গে মিলে মিডিয়ার সমালোচনায় প্রপাগান্ডা মডেল দাঁড় করান এবং অকুপাই ওয়াল স্ট্রিটের ব্যাপক প্রশংসা করেন। শুধু তাই নয়, তিনি সবসময় যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশনীতি, রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ এবং মূলধারার সংবাদমাধ্যমের কড়া সমালোচক। এর জন্য নানা সময়ে তিনি হুমকি পেয়ে এসেছেন। মধ্যপ্রাচ্যনীতির সমালোচনাকালে তিনি প্রায়শ পুলিশী নিরাপত্তায় বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতেন।

১০০টির বেশি বই লিখেছেন চমস্কি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘দি সাউন্ড প্যাটান অব ইংলিশ’ (১৯৬৮), ‘লেকচার্স অন গভনমেন্ট অ্যান্ড বাইন্ডিং : দি পিসা লেকচার্স’ (১৯৮৭), ‘কাউন্টার রেভ্যুলুশনারি ভায়োলেন্স- ব্লাডবাথস ইন ফ্যাক্টস অ্যান্ড প্রপাগান্ডা’ (১৯৭৩), ‘ম্যানুফেকচারিং কনসেন্ট : দি পলিটিক্যাল ইকনমি অব মাস মিডিয়া’ (১৯৮৮), ‘নেসেচারি ইলুশানস’ (১৯৮৯), ‘গাজা ইন ক্রাইসিস : রিফ্লেকশানস অব ইসরায়েলস ওয়ার এগনেস্ট প্যালেস্টাইনস’(২০১০) ও ‘অকুপাই’ (২০১২) প্রভৃতি। তার পনেরটিরও বেশি কাজ নিয়ে চলচ্চিত্র হয়েছে। চমস্কির লেখা বেশ কিছু বই বাংলায় অনুদিত হয়েছে।

তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৩৮টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সন্মানজনক ডিগ্রি লাভ করেছেন। এছাড়া সন্মানজনক বক্তৃতা ও ফেলোশিপ রয়েছে অনেক। এছাড়া অনেক পদকে ভূষিত হয়েছেন।

নোয়াম চমস্কির সঙ্গে ক্যারোল চমস্কির বিয়ে হয় ১৯৪৯ সালে। ২০০৮ সালে ক্যারেল মারা যান। ভাষার ওপর তারা অনেক কাজ করেছেন।

(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/এমসি/ডিসেম্বর ০৭, ২০১৩)