শেরপুর মুক্ত দিবস ৭ ডিসেম্বর
শেরপুর সংবাদদাতা : ৭ ডিসেম্বর শেরপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে শেরপুর শত্রুমুক্ত হয়।
এদিন মিত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জগজিৎ সিং অরোরা শেরপুর শহীদ দারোগ আলী পৌরপার্ক মাঠে এক সংবর্ধনা সভায় শেরপুরকে মুক্ত বলে ঘোষণা করেন। এ সভা থেকে মুক্ত শেরপুরে বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলন করা হয়।
১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল পাক হানাদারবাহিনী শেরপুর শহরে প্রবেশ করে ঘাঁটি গড়ে তোলে। এসব ঘাঁটিতে রাজাকার, আলবদর আর দালালদের যোগসাজশে হানাদাররা চালাতে থাকে নরহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের নৃশংস ঘটনা।
এদিকে স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষণ নিয়ে বাঙালীর শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা আঘাত হানতে থাকে শত্রু শিবিরে। শেরপুর মুক্ত হওয়ার আগে পাক হানাদারদের সঙ্গে কয়েকটি যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল।
এর ফলে নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই এ জেলায় শত্রু সেনাদের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যেতে থাকে। ১১নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারাই ঢাকায় প্রথম প্রবেশ করে। ১১নং সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহের বেশ কয়েকবার কামালপুর দুর্গে আক্রমণ চালান। কিন্তু শক্ত ঘাঁটি হওয়ায় পাকসেনাদের টলাতে পারেননি। অবশেষে চূড়ান্ত যুদ্ধের পরিকল্পনা নেওয়া হয় ১৮ নভেম্বর। পরিকল্পনা অনুসারে ২ নভেম্বর রাতে অবরোধের মাধ্যমে চূড়ান্ত আঘাত হানা হয় কামালপুর ঘাঁটিতে। ১১ দিন অবরোধ থাকার পর ৪ ডিসেম্বর এ ঘাঁটির পতন হয়। ২২০ জন পাকসেনা, বিপুলসংখ্যক রেঞ্জার, মিলিশিয়া ও রাজাকার সদস্য অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করেন। কামালপুর মুক্ত হওয়ার পর হানাদার বাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে পড়ে।
অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধারা মিত্রবাহিনীর সহায়তায় শেরপুরে হানাদার বাহিনীর বিভিন্ন ক্যাম্পে আক্রমণ চালায়। কামালপুর দুর্গ দখল হওয়ার প্রায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পাকবাহিনীর সকল ক্যাম্প ধ্বংস হয়ে যায়। ৪ ডিসেম্বর কামালপুরের ১১নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের মুহুর্মুহু আক্রমণ ও গুলিবর্ষণের মুখে স্থানীয় পাকসেনারা পিছু হটে।
৩ ডিসেম্বর শ্রীবরদী, নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী সীমান্ত ঘাঁটিতে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণে হানাদাররা দিশেহারা হয়ে পড়ে। তারা তাদের ঘাঁটিগুলোতে রাজাকার আলবদরদের রেখে দ্রুত পশ্চাৎপসরণ করে জামালপুরের দিকে। ফলে ঝিনাইগাতী উপজেলা ৪ ডিসেম্বর এবং শ্রীবরদী উপজেলা ৬ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয়। নালিতাবাড়ীতে টানা দুইদিন যুদ্ধের পর বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ীর বেশে নালিতাবাড়ী ও শেরপুরে প্রবেশ করে। আরও একদিন পর ৮ ডিসেম্বর প্রবেশ করে নকলায়।
৫ ডিসেম্বর থেকে পাকসেনারা তল্পিতল্পা বেঁধে কামালপুর-বক্সিগঞ্জ থেকে শেরপুরের শ্রীবর্দী উপজেলা হয়ে শেরপুর শহর দিয়ে জামালপুর অভিমুখে রওনা হয়। অবশেষে পাকসেনারা ৬ ডিসেম্বর রাতের আধারে ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ি দিয়ে জামালপুর পিটিআই ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। এরপর ৭ ডিসেম্বর মুক্ত হয় শেরপুর।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অনন্য অবদানের জন্য এ জেলায় একজন বীরবিক্রম ও দুইজন বীরপ্রতীক খেতাব পেয়েছেন। এরা হলেন- শহীদ মু’তাসিম বিল্লাহ খুররম (বীরবিক্রম), কমান্ডার জহুরুল হক মুন্সী (বীরপ্রতীক) ও ডা: মাহমুদুর রহমান (বীরপ্রতীক)।
(দ্য রিপোর্ট/এসএম/এস/এসবি/ডিসেম্বর ০৭, ২০১৩)