অটো-ডেবিট প্রক্রিয়া চালু হলেই নতুন সময়সীমা
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ১৩টি ব্রোকারেজ হাউস বা ট্রেক অটো-ডেবিট প্রক্রিয়ার অওতায় না আসায় নতুন লেনদেন নিষ্পত্তির সময়সীমা (টি-২) চালু করতে পারছে না ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। ব্রোকারেজ হাউসগুলো এ প্রক্রিয়ার আওতাভুক্ত হলেই ডিএসই নতুন লেনদেন নিষ্পত্তির সময়সীমা চালু করবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
ডিএসইতে নতুন সময়সীমা চালুর ব্যাপারে বর্তমানে অটো-ডেবিট প্রক্রিয়ার প্রতিবন্ধকতা ছাড়াও প্রভাবশালী ও বড় ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের মতদ্বৈততা রয়েছে। ডিএসই কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা থাকলেও ব্রোকারদের আপত্তির কারণেই এতো দিনেও এ প্রক্রিয়া চালু হয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে ডিএসই সক্রিয় অবস্থানে রয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, ডিএসইর ১৩টি ট্রেক (ব্রোকার হাউস) অটো ডেবিট প্রক্রিয়ার আওতাভুক্ত ছিল না। যার কারণে এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ হয়েছে। সম্প্রতি এ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য ডিএসইকে নির্দেশ দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। পরবর্তীতে ডিএসইর গত পর্ষদ সভায় ওই ১৩টি ট্রেককে ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে অটো-ডেবিট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ট্রেক এ প্রক্রিয়ার আওতাভুক্ত হয়েছে। বাকিগুলো আগামী দুই-একদিনের মধ্যে অটো-ডেবিট প্রক্রিয়ার আওতায় চলে আসবে বলে মনে করছে ডিএসই।
প্রায় দুই বছর আগে শেয়ারের দর বৃদ্ধিতে কারসাজি রোধ, লেনদেনের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগকৃত অর্থ দ্রুত ফেরত আনয়নে সেটেলমেন্ট সাইকেল কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ১৮ অক্টোবর বিএসইসির ৪০৩তম নিয়মিত কমিশন সভায় সেটেলমেন্ট সাইকেল কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই মাসের ২০ অক্টোবর বিএসইসি উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে টি-২ পদ্ধতি দ্রুত চালু করার জন্য একটি চিঠি ইস্যু করে। পরবর্তীতে ওই বছরের ১ নভেম্বর ডিএসই শেয়ারের লেনদেন নিষ্পত্তির সময়সীমা পরিবর্তনের জন্য সেটেলমেন্ট রেগুলেশনে সংশোধন এনে বিএসইসিতে জমা দেয়। পরে বিএসইসি সার্বিক দিক বিবেচনা করে সংশোধিত রেগুলেশনটি অনুমোদন দেয়।
এর দুই বছর পর অর্থাৎ চলতি বছরের ৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) নতুন লেনদেন নিষ্পত্তির সময়সীমা চালু করলেও ডিএসই এখনও তা করতে পারেনি।
এ বিষয়ে ডিএসইর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্বপন কুমার বালা দ্য রিপোর্টকে বলেন,‘ব্রোকারেজ হাউসগুলোর অটো-ডেবিট প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই নতুন লেনদেন নিষ্পত্তির সময়সীমা (টি-২) চালু করা হবে। ১৩টি ট্রেক অটো-ডেবিট প্রক্রিয়ার আওতাভুক্ত ছিল না। যেসব ট্রেক অটো-ডেবিটের আওতায়ভুক্ত হয়নি তাদের আগামী ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা হলে ব্যাংকিং ট্রানজেকশন হবে ইলেক্ট্রনিক প্রক্রিয়ায়। ২০১৫ সাল থেকে এ প্রক্রিয়া চালু হবে। তাই প্রাথমিকভাবে এ প্রক্রিয়ার ফেইজিংয়ের কাজ চলছে। রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্টের আগের প্রক্রিয়া হলো বাংলাদেশ ইলেকট্রিক ফান্ড ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক (বিআইএফটিএন)। বিআইএফটিএন এর মাধ্যমে পুরো ব্যাংকিং সিষ্টেমকে একটি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে। আর ব্যাংক ক্লায়েন্টদের এ প্রক্রিয়ার আওতায় আনবে। ডিএসইও ব্যাংকের ক্লায়েন্ট, তাই তার সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউস বা ট্রেক এ প্রক্রিয়ার আওতায় আসবে। যাতে সরাসরি ক্লায়েন্টদের টাকা দেওয়া বা নেওয়া যায়।’
তবে এ ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেছেন ডিএসইর সাবেক সহ-সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী। তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট সেটেলমেন্ট প্রিরিয়ড টি-৩। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউএস এসইসির মতে টি-৩ বেস্ট। এতে আমার ব্যক্তিগত সম্মতি রয়েছে। আমাদের যে প্রেক্ষাপট তাতে যদি টি-২ করা হয় তাহলে আপাত দৃষ্টিতে যে কেউ ভাববে ভলিউম বেড়ে যাবে। কিন্তু টি-২ চালু করা হলে যে সমস্যা হবে তা হলো- যে কোনও ব্রোকারের কাছে ক্লায়েন্টের টাকা থাকতে হবে। অথবা ক্লায়েন্টকে অগ্রিম টাকা জমা দিয়ে শেয়ার কিনতে হবে। সব সময় ক্লায়েন্টের টাকা জমা রাখতে হবে। তাই আমি মনে করি টি-২ চালু করা হলে বর্তমান বাজারের প্রেক্ষাপটে লেনদেন আরও কমবে। আর মার্কেট স্লো-ডাউন হতে পারে।’
তবে এ বিষয়ে ডিএসইর নব নির্বাচিত সহ-সভাপতি মো. মিজানুর রহমান খান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘লেনদেন নিষ্পত্তির সময়সীমা পরিবর্তনের বিষয়ে কাজ করছে ডিএসই। নতুন কোনো পদ্ধতি চালু করার জন্য আলোচনা হবে, আবার আলোচনায় মতদ্বৈততা থাকতে পারে। এটা না হওয়ার কোনও সুযোগ নাই, কারণ এটা বিএসইসি থেকে পাস হয়ে গেছে। তবে বেশিরভাগ ব্রোকার এ পদ্ধতি চালু করার পক্ষে সম্মতি দিয়েছেন। আর আমি নিজেও এটা চালু করার পক্ষে সম্মতি জ্ঞাপন করেছি। আর সব ব্রোকারদের সম্মতি নিয়ে টি-২ চালু করবে ডিএসই।’
উল্লেখ্য, স্টক এক্সচেঞ্জ ট্রানজেকশনস রেগুলেশনস ১৯৯৮, এর বিধি ৮ সংশোধনের জন্য বিএসইসির কাছে লিখিতভাবে অনুমোদন চায় ডিএসই। এক্ষেত্রে ‘এ’ ‘বি’ ‘জি’ এবং ‘এন’ ক্যাটাগরির শেয়ারের লেনদেন নিষ্পত্তির সময় একদিন কমানোর প্রস্তাব করা হয়।
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/এস/এইচকে/ডিসেম্বর ০৭, ২০১৩)